• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

নানা সংকটেও অপ্রচলিত বাজারে বাড়ছে পোশাক রপ্তানি

প্রকাশিত: ১৪:৩৫, ১৩ মে ২০২৩

আপডেট: ১৫:৫১, ১৩ মে ২০২৩

ফন্ট সাইজ
নানা সংকটেও অপ্রচলিত বাজারে বাড়ছে পোশাক রপ্তানি

ছবি: সংগৃহীত

রিজার্ভে ডলার সংকট ও এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (ইডিএফ) তহবিল থেকে ব্যবসায়ীদের ঋণ কমার পরও বাংলাদেশ থেকে অপ্রচলিত বাজারে পোশাক রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে ৩০.৮০ শতাংশ। 

শনিবার (১৩ মে) রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) থেকে দেশ ভিত্তিক হাল নাগাদ প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে এই তথ্য জানা গেছে। 

জানা গেছে, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিলের মোট পোশাক রপ্তানি পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯.০৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধিসহ ৩৮.৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। এর মধ্যে ১৯.২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পোশাক (মোট রপ্তানির ৪৯.৭৮ শতাংশ)  ইইউ বাজারে গেছে; ৬.৯ বিলিয়ন ডলারের পোশাক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি করা হয়েছে, যা মোট রপ্তানির ১৮.০১ শতাংশ ছিল; কানাডার শেয়ার ছিল ৩.১৯ শতাংশ এবং মোট ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পোশাক কানাডায় রপ্তানি করা হয়েছে এবং ৭.০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি হয়েছে  অপ্রচলিত বাজারে, যার ১৮.১৬ শতাংশ শেয়ার ছিল।

উল্লিখিত সময়ের মধ্যে ইইউ’তে রপ্তানি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৮.৫৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ইইউ অঞ্চলের প্রধান বাজারগুলোর মধ্যে, জার্মানিতে আমাদের রপ্তানি পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭.৩৩ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৫.৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। 

বিজিএমইএ পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ফ্রান্স এবং স্পেনে আমাদের পোশাক রপ্তানি ছিল যথাক্রমে ২.৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ও ২.৯৫ বিলিযন মার্কিন ডলার এবং প্রবৃদ্ধি ছিলো যথাক্রমে ২২.২১ শতাংশ এবং ১৬.৬৯ শতাংশ।  ইতালিও ৪২.৪০ শতাংশ ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির প্রবণতা দেখিয়েছে এবং ১.৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। অন্যদিকে, বুলগেরিয়া এবং পোল্যান্ডে আমাদের রপ্তানি বছরওয়ারিভাবে যথাক্রমে ৪৬.৪৩ শতাংশ এবং ১৭.৫৯ শতাংশ ঋনাত্মক প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে।

হতাশাব্যাঞ্জক প্রবণতা অনুসরণ করে, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের রপ্তানিতে ৭.১৩ শতাংশ ঋনাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে এবং ৬.৯৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। অধিকন্তু, যুক্তরাজ্য এবং কানাডায, উভয় বাজারে রপ্তানিতে যথাক্রমে ১০.৮৮ শতাংশ এবং ১৬.০৯ শতাংশ ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। 

তবে আশার কথা হলো, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল মাসে, অপ্রচলিত বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৩০.৮০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ৭.০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ভারত এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো প্রধান বাজারগুলোতে আমাদের রপ্তানি ছিলো যথাক্রমে ১.৩২ বিলিয়ন,  ৯৬১.৩০ মিলিয়ন, ৮৮৯.০৬ মিলিয়ন এবং ৪৭৭.৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

গত ১০ এপ্রিল এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (ইডিএফ) তহবিল থেকে ২ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভে যোগ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন ইডিএফ তহবিলের পরিমাণ ৫০০ কোটি ডলার। এছাড়া, তহবিল থেকে ঋণ নিতে ব্যবসায়ীদের নিরুৎসাহিত করতে কয়েক দফায় ইডিএফ ঋণের সুদহার বাড়ানোর পাশাপাশি ঋণের পরিমাণও কমানো হয়েছে। ইডিএফের আকার এতদিন ছিল ৭০০ কোটি ডলার। কিন্তু আইএমএফ'র শর্ত অনুযায়ী নিট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আগামী জুনের মধ্যে ২৪.৪৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে এ তহবিল থেকে ২ বিলিয়ন ডলার নিয়ে রিজার্ভে যোগ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে ইডিএফ তহবিলের পরিমাণ ৫ বিলিয়ন ডলার।

কয়েক দফায় ইডিএফ ঋণের সুদহার বাড়ানোর পাশাপাশি ঋণের পরিমাণও কমানো প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন এর এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম বলেন, রপ্তানিকারকরা দীর্ঘদিন ধরে কাস্টমস সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন, যার সমাধান চেয়েছেন তারা।

তিনি বলেন, ‘বস্ত্রখাতে নগদ সহায়তা দেওয়ার পদ্ধতি বেশ জটিল। ফলে অনেকে দুর্নীতির সুযোগ পাচ্ছে। অন্য খাতগুলোতে রপ্তানি আয় প্রত্যাবাসনের ভিত্তিতে নগদ সহায়তার অর্থ দেওয়া হয়, কিন্তু বস্ত্রখাতের নগদ সহায়তা দিতে অডিটসহ নানা জটিল প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়।’

হাতেম বলেন, ‘এই সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর কর্মকর্তাদের নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি হয়েছিল। ওই কমিটি প্রত্যাবাসিত রপ্তানি আয়ের বিপরীতে নগদ সহায়তা দেওয়ার সুপারিশসহ প্রতিবেদন অর্থমন্ত্রণালয়ে জমা দিলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না।’

বিজিএমএ নেতা  মো. মহিউদ্দিন রুবেল আরও বলেন, যখন বায়ারকে আপনি লংটার্ম ডিসকাউন্ট দিবেন, তখন আপনি তার কাছ থেকে বেশি পরিমাণ অর্ডার নিতে পারবেন। ইডিএফ থেকে ঋণ না পাওয়ায় মধ্যম সারির কোনো গার্মেন্টস মালিক লংটার্ম কোনো ইনভেস্টম্যান্টে যেতে পারছে না। এটা বড় ব্যবসায়ীরা করতে পারলে ছোট ব্যবসায়ীরা ক্ষেত্রে বাধার মুখে পড়েছে। অনেকেই এ সমস্যার মুখে পড়ছেন। দেশের স্বার্থে ইডিএফ ফান্ড থেকে ব্যবসায়ীদের ঋণ দেওয়া বাড়ানো ‍প্রয়োজন বলেও মনে করেন তরুণ এই ব্যবসায়ী নেতা।

দেশের বাণিজ্য ঘাটতির চিত্র প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি (২০২২-২০২৩) অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) দেশের বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৬১ কোটি ডলার। দেশীয় মুদ্রার (১ ডলার সমান ১০৬ টাকা ধরে) এর পরিমাণ ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। 

চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) দেশে ৫ হাজার ৩৯৩ কোটি ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করা হয়েছে। গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরের একই সময়ে ৬ হাজার ১৫২ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল। সে হিসাবে গত বছরের একই সময়ের (প্রথম ৯ মাস) চেয়ে ১২ দশমিক ৩৩ শতাংশ কম আমদানি হয়েছে।

অর্থবছরের একই সময়ে দেশ থেকে রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ৯৩২ কোটি ডলারের পণ্য। যা এর আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি। ২০২১-২০২২ অর্থবছরের (জুলাই-মার্চ) একই সময়ে ৩ হাজার ৬৪৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।

গত সোমবার (৮ মে) এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মার্চ-এপ্রিল মাসের আমদানি বিল বাবদ ১১৮ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এতে সাত বছরের মধ্যে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সর্বনিম্ন ২ হাজার ৯৭৭ কোটি ডলারে (২৯ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন) নেমে এসেছিলো। তার একদিন পরেই মঙ্গলবার (৯ মে) তা বেড়ে ৩ হাজার ৩৬ কোটি ডলারে কোটি (৩০ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন) দাঁড়িয়েছে।  

বিশ্বব্যাংক বাজেট সহায়তা হিসেবে বাংলাদেশকে ঋণ কিস্তির ৫০৭ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে। যা মঙ্গলবার (৯ মে) সরাসরি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে যোগ হয়েছে। এতে গত ১০ মে বুধবার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার।

বিভি/এইচএস

মন্তব্য করুন: