চিকিৎসা ছুটি নিয়ে দলীয় কার্যক্রমে সক্রিয়, বেতন-ভাতাও নিচ্ছেন সহকারী রেজিস্ট্রার

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার ও এনসিপি নেতা আজাদ খান ভাসানী চিকিৎসাজনিত কারণে অর্জিত ছুটিতে থেকেও মাঠপর্যায়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন এমন অভিযোগ উঠেছে।
২০২৫ সালের ৩ আগস্ট চিকিৎসকের পরামর্শে “লোয়ার লিম্ব ব্যাক পেইন” সমস্যার জন্য তিনি মেডিকেল ছুটি নেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের ডাক্তার আহাম্মদ হোসেন সিদ্দিকীর সুপারিশকৃত মেডিকেল রিপোর্ট অনুযায়ী তাকে ১২ সপ্তাহের জন্য বেড রেস্টে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর ভিত্তিতে ৩ আগস্ট থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৫৭ দিনের ছুটি মঞ্জুর হয়।
কিন্তু সরেজমিনে দেখা গেছে, ছুটি শুরুর মাত্র চারদিন পর অর্থাৎ ৭ আগস্ট থেকেই আজাদ খান ভাসানী বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন। জনসংযোগ, নৃত্যানুষ্ঠান, আলোচনা সভাসহ একাধিক কর্মসূচিতে তাকে দেখা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০১-এর ৪৭ নম্বর ধারা এবং ২০২৪ সালের ১২ আগস্ট পাস হওয়া রিজেন্ট বোর্ড ও একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ। একই সঙ্গে সরকারি কর্মচারী আচরণবিধির একাধিক ধারা ভঙ্গ করে চলতি বছরের মে মাস থেকে তিনি প্রকাশ্যে রাজনৈতিক পরিচয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। বিপুল পুলিশি প্রটেকশনে দলের নেতাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের দরবার হলে আনা, বিভিন্ন অঞ্চলে সভা-সমাবেশে যোগ দেওয়া এবং এনসিপির কৃষক উইং গোছানোর গুরু দায়িত্ব নেওয়াসহ নানা কর্মকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে। চিকিৎসা ছুটি চলাকালীন সশরীরে উপস্থিত থেকে ১১ সেপ্টেম্বর কৃষক উইং এর প্রথম কার্যসভা সম্পন্ন করেন।
এছাড়া, রাজনৈতিক কর্মসূচির পাশাপাশি তার অফিস উপস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তিনি বিজ্ঞান অনুষদের ডিনের তত্ত্বাবধানে থাকলেও অফিশিয়াল প্রক্রিয়া মেনে তথ্য অধিকার আইনে তার উপস্থিতির রেকর্ড চাওয়া হলে ডিন ড. মো. ইদ্রিস আলী কোনো তথ্য দেননি, যা স্বচ্ছতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি করেছে।
মাঠ পর্যায়ে নিয়মিত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানো সত্ত্বেও কেন আজাদের মেডিকেল ছুটি ফরওয়ার্ড করা হয়েছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে ডিন ড. মো. ইদ্রিস আলী বলেন, "আগে আমাকে এপ্লিকেশন দিয়েছে নাকি মেডিকেল অফিসারকে দিয়েছে সেটার কাগজ দেখতে হবে। সম্ভবত বিশ্ববিদ্যালয়ের যে প্রক্রিয়া, সে প্রক্রিয়াতেই ফরওয়ার্ড করেছি। কেউ বাইরে কি করলো না করলো এটা আমার দেখার বিষয় না, পরবর্তীতে যদি কোনো রিপোর্ট আসে সে ছুটি নিয়ে বেড রেস্টে না যেয়ে অন্য কিছু করছে তখন দেখা যাবে। সে আমাকে বলেছে সে রেস্ট নিতেছে। রাজনীতির বিষয়টা এখনও আমাদের কনসার্নে আসেনি। যদি আমাদের কনসার্নে আসে তখন প্রশাসনিক বডিকে রিপোর্ট করতে পারি বিষয়টা। আমি তো একা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবো না।"
আজাদ খান ভাসানীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "কোথাও গেলে কোমরের বেল্ট ব্যবহার করেই যাই। বিএনপির অনেক কর্মকর্তাও অফিস করছে না। আমি সুনামের সাথে অফিস করেছি যার ফলে আমার অর্জিত ছুটি আছে। অর্জিত ছুটিগুলো মেডিকেল কারণ ছাড়া কাটানো যায় না। সহকর্মীদেরও বলেছি, যত দ্রুত সম্ভব চাকরি ছেড়ে দেবো। লোন থাকায় এখনো চাকরি ছাড়তে পারছি না, তবে সুযোগ পেলে ছেড়ে দেবো। এখন যেহেতু অফিসিয়ালি ছুটিতে আছি, তাই বেতন-ভাতা নিচ্ছি। যেহেতু আমার অর্জিত ছুটির সুযোগ আছে ২৮ তারিখ ছুটি শেষ হলে আবারও অর্জিত ছুটি নেওয়ার চেষ্টা করবো।"
উল্লেখ্য, আজাদ খান ভাসানী মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নাতি। তবে তার এ দ্বিমুখী আচরণ নিয়ে পরিবারের ভেতরেও প্রশ্ন উঠেছে।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: