• NEWS PORTAL

  • মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫

সেকশন-২-এর কারণে বিদেশে উচ্চশিক্ষায় ভোগান্তিতে কুবি শিক্ষার্থীরা

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়  

প্রকাশিত: ১১:৫২, ২৮ অক্টোবর ২০২৫

ফন্ট সাইজ
সেকশন-২-এর কারণে বিদেশে উচ্চশিক্ষায় ভোগান্তিতে কুবি শিক্ষার্থীরা

প্রতিষ্ঠার ১৯ বছর পার হলেও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) এখনও ‘সেকশন-২’ থেকে ‘সেকশন-১’ এ উত্তীর্ণ হতে পারেনি। এর ফলে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, অস্টিয়াসহ বিভিন্ন উন্নত দেশে সরাসরি মাস্টার্স প্রোগ্রামে আবেদন করতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যোগ্যতা মূল্যায়ন নীতিমালায় কুবিকে ‘সেকশন–২’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে দেশীয় স্বীকৃত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়েও আন্তর্জাতিক উচ্চশিক্ষায় তারা বঞ্চনার মুখে পড়ছেন। 

সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নতুন যোগ্যতা মূল্যায়ন নীতিমালা (Qualification Assessment Guidelines 2016) প্রকাশিত হওয়ার পর এই তথ্য সামনে এসেছে। জানা যায়, দেশীয় ১২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই সরাসরি মাস্টার্স প্রোগ্রামে আবেদন করতে পারছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ‘সেকশন–১’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। বাকি সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর ব্যাচেলর ডিগ্রিকে সরাসরি মাস্টার্সে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না। এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘সেকশন–২’ ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অস্ট্রেলিয়ার এই মূল্যায়নে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে সর্বমোট ১০৬টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে ১২টি রয়েছে ‘সেকশন-১’-এ। বাকি ১৯৪টি ‘সেকশন-২’-এ রয়েছে। কুবি ৩৫ নম্বরে অবস্থান করছে। সমসাময়িক প্রতিষ্ঠিত হলেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিদেশে মাস্টার্সে আবেদন করতে গিয়ে কুবি প্রায় সব জায়গায় ‘সেকশন–২’ হিসেবে দেখানো হচ্ছে। এতে ব্যাচেলর ডিগ্রিকে পূর্ণাঙ্গ চার বছরের সমমান না দিয়ে প্রি-মাস্টার্স (pre-master) কোর্সে পাঠানো হচ্ছে, যা সময় ও খরচ উভয়ই বাড়াচ্ছে।

নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. আরিয়ান বলেন, বিদেশে মাস্টার্সে আবেদন করতে গিয়ে দেখি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে অনেক জায়গায় Section-2 হিসেবে দেখানো হয়। ফলে সরাসরি মাস্টার্সে না নিয়ে প্রি-মাস্টার্সে যেতে হচ্ছে, যা সময় ও খরচ উভয়ই বাড়াচ্ছে। কানাডার এক বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের ডিগ্রিটা WES evaluation-এ পুরোপুরি স্বীকৃতি পায়নি। অথচ আমরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এটা সত্যিই হতাশার।

আইসিটি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আরমানুল হক জানান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এখনও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারেনি। বিদেশে আবেদন করতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়টি সেকশন-ওয়ান লিস্টে না থাকায় শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ফি দিতে হয়। সেকশন-১-এ থাকলে খরচ অনেক কম হত। ওয়েবসাইট, গবেষণা প্রকাশনা ও শিক্ষক প্রোফাইলের পুরনো অবস্থাই মূল সমস্যা।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শবনম মনির প্রিমা বলেন, একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়ার পরও অস্ট্রিয়ার মতো বাজেট ফ্রেন্ডলি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে না পারাটা চরম ব্যথার। বাজেট, টিউশন ফি ও পড়াশোনার জন্য এটা একটা চমৎকার সুযোগ আমাদের মতো শিক্ষার্থীদের জন্য। যেই সুযোগটা আমরা হারাচ্ছি শুধু সেকশন ক্যাটাগরির কারণে। এটা খুবই হতাশাজনক।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হায়দার আলী বলেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ২ গ্রেড পাওয়া দুঃখজনক। আন্তর্জাতিক র‍্যাংক নির্ধারণে একাডেমিক পরিবেশ, গবেষণা, প্রকাশনা, লাইব্রেরি ও প্রযুক্তিগত সুবিধা সব বিবেচনা করা হয়। আমি যোগদানের পর থেকেই এই সব ক্ষেত্রে উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছি। আগে মাত্র ১০-১৫ শিক্ষকের প্রোফাইল ছিল। এখন প্রায় ২০০-এর বেশি। শিক্ষকেরা গবেষণা ও প্রকাশনা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় প্রোফাইলে দেখাবেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে দৃশ্যমান থাকবে। এতে আন্তর্জাতিক র‍্যাংকিংয়ে সুবিধা হবে।

তিনি আরও বলেন, পূর্বে শিক্ষার্থীদের কাজের কোন ডকুমেন্টেশন ছিল না। নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর কয়েক লক্ষ টাকা ব্যয় করে একটি সফটওয়্যার ক্রয় করেছি। এখন থেকে শিক্ষার্থীদের প্রতিটি কাজ সেখানে আপলোড হবে। শিক্ষার্থীরা লাইব্রেরিতে গিয়ে সহজে পিডিএফ ফাইল জমা দিতে পারবেন। সব তথ্য দৃশ্যমান থাকলে র‍্যাংকিং বা গ্রেডের উন্নতি হবে। আশা করি শীঘ্রই আমরা সেকশন-১ এ উন্নীত হতে পারবো।

বিভি/এসজি

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2