• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫

বাকৃবির উদ্ভাবন: সামুদ্রিক শৈবাল থেকে উচ্চমূল্যের পণ্য উৎপাদন 

হাবিবুর রনি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ২১:১৯, ২০ নভেম্বর ২০২৫

ফন্ট সাইজ
বাকৃবির উদ্ভাবন: সামুদ্রিক শৈবাল থেকে উচ্চমূল্যের পণ্য উৎপাদন 

সামুদ্রিক শৈবালভিত্তিক বায়োরিফাইনারি প্রযুক্তি ব্যবহার করে সামুদ্রিক আগাছা (সী উইড) থেকে উচ্চমূল্যের পণ্য উৎপাদনে নতুন সম্ভাবনা উন্মোচন করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। এ গবেষণায় সহযোগিতা করেছে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি)। গবেষকদের মতে, এই উদ্ভাবন বাংলাদেশের নীল অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী ও টেকসই করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। 

‘সামুদ্রিক শৈবালভিত্তিক বায়োরিফাইনারি প্রযুক্তির মাধ্যমে উচ্চমূল্যের পণ্য উন্নয়ন’ শীর্ষক এই সাব-প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের (এসসিএমএফপি)’ অর্থায়নে। সম্পদের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়াই গবেষণার মূল লক্ষ্য।

গবেষণায় ব্যবহৃত হয়েছে গ্র্যাসিলারিয়া টেনুইস্টিপিটাটা (Gracilaria tenuistipitata) নামের সামুদ্রিক শৈবাল (সী উইড)। এই শৈবাল থেকে পর্যায়ক্রমে তিনটি মূল্যবান উপাদান রঞ্জক পদার্থ, অ্যাগার (জেল-উৎপাদক উপাদান) ও সেলুলোজ—সফলভাবে নিষ্কাশন করা হয়েছে। বায়োরিফাইনারি প্রযুক্তির বিশেষত্ব হলো, শৈবালের প্রতিটি অংশই ব্যবহৃত হয়; ফলে বর্জ্য তৈরি হয় খুব কম।

বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় কৃষি অনুষদের সম্মেলন কক্ষে ওই গবেষণা প্রকল্পের সমাপনী কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রধান গবেষক ও বাকৃবির প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল হান্নান।

তিনি জানান, প্রথম ধাপে জলীয় পদ্ধতিতে শৈবাল থেকে ফাইকোবিলিপ্রোটিন রঞ্জক সংগ্রহ করা হয়। এতে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহরোধী গুণ রয়েছে। এই প্রাকৃতিক রঞ্জক দইসহ বিভিন্ন খাদ্যে ব্যবহার করা যায় এবং স্বাদ, গন্ধ, রং ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়ায়। এরপর বাকি থাকা অংশ থেকে অ্যাগার উৎপাদিত হয়েছে। এর উৎপাদন মাত্রা পাওয়া গেছে প্রায় ১৫ শতাংশ। শেষে যে অংশটি অবশিষ্ট থাকে, তা থেকে সেলুলোজ সংগ্রহ করে অ্যাগার ও জিলেটিনের সঙ্গে মিশিয়ে একটি শক্তিশালী, অতিবেগুনি রশ্মি প্রতিরোধী ও জৈব-বিয়োজ্য বায়োফিল্ম তৈরি করা হয়েছে। এই বায়োফিল্ম প্যাকেজিং ও বায়োমেটেরিয়াল শিল্পে ব্যবহারের উপযোগী।

গবেষক ড. হান্নান আরও জানান, গবেষণার কার্যক্রম শুরু হয় ২০২৪ সালের শুরুর দিকে। সহযোগী গবেষক হিসেবে পবিপ্রবির ফিশারিজ বায়োলজি ও জেনেটিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল হক।

সমাপনী কর্মশালায় প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. শায়লা শারমিনের সভাপতিত্বে ও লেকচারার খাদিজা খাতুনের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এসসিএমএফপি প্রকল্পের উপ-পরিচালক মো. মেজানুর রহমান, কৃষি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জি. এম. মুজিবুর রহমান এবং বাকৃবি রিসার্চ সিস্টেমের (বাউরেস) পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হাম্মাদুর রহমান।

উপাচার্য তাঁর বক্তব্যে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে টেকসই উন্নয়নের জন্য নীল অর্থনীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাকৃবির এই গবেষণা সামুদ্রিক সম্পদের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক অবদান রাখবে।

বিভি/এসজি

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2