• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

সাংবাদিক আটকের ঘটনায় জাবি শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ

রুবেল হোসাইন, জাবি

প্রকাশিত: ২০:২১, ২৯ মার্চ ২০২৩

ফন্ট সাইজ
সাংবাদিক আটকের ঘটনায় জাবি শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ

‍পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির পরিচয়ে দৈনিক প্রথম আলোর সাভার প্রতিনিধি শামসুজ্জামান শামসকে বাসা থেকে তুলে নেওয়ার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শিক্ষার্থীরা। এসময়, সাংবাদিক শামসুজ্জামানের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান তারা।

বুধবার (২৯ মার্চ) বিকেল সাড়ে তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আয়োজিত এ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। 

মানববন্ধনে জাবি ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জিসান মাহমুদের সঞ্চালনায় চারুকলা বিভাগের ৪৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী খালিদ মাহমুদ তন্ময় বলেন, ‘আজকে দেশে কথা বলার অধিকার নাই। আমাদের খাদ্যের অধিকার নাই। আমরা কোন পরিস্থিতিতে এসে দাঁড়িয়েছি? আমরা দেখি যে, দেশের দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে মানুষ যখন খাইতে পায়না তখন সেই সংবাদ প্রকাশের ফলে সাংবাদিককে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। স্বাধীনতা দিবসে আমাদের সাংবাদিকদের কথা বলার স্বাধীনতা নাই। আমরা আমাদের বাক-স্বাধীনতা চাই।’

এসময়, বাংলা বিভাগের ৪৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি জহির ফয়সাল বলেন, ‘আপনারা জানেন সামসুজ্জামান আমার বাংলা বিভাগের সাবেক বড় ভাই। তার বড় ভাই হলি আর্টিজেন ঘটনায় নিহত হন। এতে প্রমাণিত হয় শামসুজ্জামানের পরিবার স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি। স্বাধীনতার এই ৫২ বছরে দেশে কেনো গণমাধ্যমের স্বাধীনতা থাকবে না? রাষ্ট্রের একজন নাগরিকের  কথা বলার অধিকার রয়েছে। কিন্তু শামসুজ্জামানকে রাতের আঁধারে তুলে নেওয়া হয়েছে। তাহলে আমরা বুঝতে পারি দেশে বাক স্বাধীনতা নাই। অতি স্বত্বর ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল করতে হবে। অবিলম্বে শামসুজ্জামান শামসকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।'

এছাড়া এদিন বিকেল চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও চলচ্চিত্র আন্দোলনের সংগঠক সুদীপ্ত দে বলেন, ‘শামস ভাই, আমাদের ক্যাম্পাসের বড় ভাই। অন্যায় অনৈতিক ভাবে তাকে বাসা থেকে তুলে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাকে অনতিবিলম্বে মুক্তি দেয়া হোক। একজন সংবাদ কর্মীকে স্বাধীনতা সংবাদ করার দেওয়া হোক। হাত পা বেধে সাংবাদিকতা চলে না। সংবাদ ভুল হলে তার জন্য প্রেস কাউন্সিল আছে তাদের কাছে না গিয়ে মামলা কেনো করা হলো? তাছাড়া ওই সংবাদের জন্য গণমাধ্যমটি সংশোধনী দিয়েছে। সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করে বাক-স্বাধীনতার কুঠারাঘাত করেছে।'

ছাত্র ইউনিয়ন জাবি শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলী বলেন, 'একটি নিকৃষ্ট উপায়ে, সাদা পোশাকধারীরা একজন সংবাদকর্মীকে নিয়ে যায়। সবচেয়ে ভাবনার জায়গা হচ্ছে এখানে আমাদের প্রশাসনের ও সহযোগিতা ছিলো। ক্যাম্পাস আর নিরাপদ নয়। ক্যাম্পাস প্রশাসন সাহায্য করে রাষ্ট্রীয় বাহিনির কাছে তুলে দিলেন। খেটে-খাওয়া মানুষ যখন বলে তার ভাত মাছের স্বাধীনতা চায় আর তা যখন একজন সংবাদ কর্মী তুলে ধরেন তখনই তাকে ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্টের মাধ্যমে তুলে নেওয়া হয়। আইয়ুব সরকার টিকে নাই, এরশাদ টিকে নাই, মানুষের যে জনরোষ এই সরকারের গদি এখন টলমলে, আর বেশিদিন টিকতে পারবে না।' 

এসময়, জাবি সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সাধারণ সম্পাদক তাপসী দে প্রাপ্তি বলেন, 'সাদা পোশাকে তুলে নেওয়ার যে কালচার রাষ্ট্র তৈরি করছে এতে বুঝায় যায় রাষ্ট্র মৃত্যুর দিকে আগাচ্ছে। সাংবাদিকদের টুঁটি চেপে ধরা হচ্ছে। আমরা সকলেই ভয়ের মধ্যে অনিরাপদ জীবন যাপন করছি। কখন কে কাকে রাতে তুলে নেওয়া হয় এই ভয়। আমরা সাংবাদিক শামসুজ্জামানের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।'

এর আগে, ‍বুধবার (২৯ মার্চ) পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির পরিচয়ে দৈনিক প্রথম আলোর সাভার প্রতিনিধি শামসুজ্জামান শামসকে বাসা থেকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠে। তবে স্থানীয় পুলিশ ও সিআইডির ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানালেও মামলা করার পরই সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেন, স্বাধীনতা দিবসে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করার জন্য যে কেউ ক্ষুব্ধ হতে পারেন। তাদেরই একজন মামলা করেছেন সাভারে। তবে কে এই মামলা করেছেন, সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি।

শামসুজ্জামান গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় নিহত পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল করিমের ছোটভাই। তার বাড়ি মানিকগঞ্জ, পড়াশোনা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেই সূত্রে তিনি ক্যাম্পাস এলাকা সংলগ্ন আমবাগানে একটি ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে থাকতেন।

ঘটনার সময় শামসুজ্জামানের সঙ্গে ছিলেন সঙ্গে ছিলেন ঢাকা ট্রিবিউনের স্থানীয় সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম।

ওই সাংবাদিক ও প্রত্যক্ষদর্শী আরেকজন জানান, সিআইডির পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিরা সাধারণ পোশাকে ছিলেন। তারা ভোর চারটার দিকে তিনটি গাড়িতে মোট ১৬ জন ব্যক্তি শামসুজ্জামানের বাসার সামনে যান। তাদের মধ্যে ৭-৮ জন বাসায় ঢোকেন। একজন শামসুজ্জামানের কক্ষ তল্লাশি করে তার ব্যবহৃত ল্যাপটপ, দুটি মোবাইল ও পোর্টেবল হার্ডডিস্ক নিয়ে যায়। বাসায় ১০-১৫ মিনিট অবস্থান করার পর তাকে নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় যান তারা।

সিআইডি পরিচয় দেয়া ব্যক্তিদের ব্যবহৃত দুটি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর ছিল (ঢাকা মেট্রো চ ৫৬-২৭৪৭ এবং ঢাকা মেট্রো জ ৭৪-০৩৩১), আরেকটিতে কোন নম্বর প্লেট দেখা যায়নি।

আরিফুল বাংলাভিশনকে বলেন, সাদা পোশাকধারী ব্যক্তিরা বাসায় ঢুকে জব্দ করা মালামালের তালিকা করেন। শামসুজ্জামানকে জামাকাপড় নিতে বলা হয়। এ সময় কক্ষের ভেতরে দাঁড় করিয়ে তার ছবি তোলা হয়। ৫-৭ মিনিটের মধ্যে আরিফুল বাংলাভিশনকে বলেন, সাদা পোশাকধারী ব্যক্তিরা বাসায় ঢুকে জব্দ করা মালামালের তালিকা করেন। শামসুজ্জামানকে জামাকাপড় নিতে বলা হয়। এ সময় কক্ষের ভেতরে দাঁড় করিয়ে তার ছবি তোলা হয়। ৫-৭ মিনিটের মধ্যে আবার তারা বের হয়ে যান। বাসা তল্লাশির সময় দুইবারই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন উপস্থিত ছিলেন বলে জানান তিনি।

ওই সময় বাসার মালিক ফেরদৌস কবিরকে পুলিশের এক কর্মকর্তা ডেকে বলেন, 'শামসুজ্জামানের করা একটি প্রতিবেদনের বিষয়ে মামলা হয়েছে। তাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে নেয়া হচ্ছে।'

জাবির কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, বটতলার নূরজাহান হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন, একজন নিরাপত্তা প্রহরী, শামসুজ্জামানসহ মোট ১৯ জন সেহেরির খাবার খান। ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে বটতলা থেকে তারা আবার শামসুজ্জামানের বাসায় যান। ওই সময় আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাজু মণ্ডল উপস্থিত ছিলেন।

এবিষয়ে নূরজাহান হোটেলের মালিক ফরমান আলী বাংলা ভিশনকে বলেন, 'আজ ভোর দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিকিউরিটি গার্ড এসে ১৯ জনের জন্য খাবার অর্ডার করে যায়। পরে চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন ও একজন প্রহরীসহ মোট ১৯ জন লোক খাবার খায়। তাদের খাবারের বিল ৪ হাজার ৬০০ টাকা আসে কিন্তু তারা ৪ হাজার টাকা দিয়ে খুব তাড়াহুড়ো করে চলে যায়।'

বিষয়টি নিয়ে জাবির প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন, আশুলিয়া থানার এসআই রাজু ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি। তবে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, আটকের বিষয়ে তিনি জানেন না।

গত ২৬ মার্চ সাভার থেকে প্রথম আলো পত্রিকায় 'চাল, মাংসের স্বাধীনতা চাই' শিরোনামে প্রতিবেদন করেছিলেন শামসুজ্জামান। আলোচিত সেই প্রতিবেদনে জাকির নামে এক দিনমজুরের উক্তির সঙ্গে এক ফুল বিক্রেতা শিশুর ছবি দেয়া হয়। পরে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠলে প্রতিবেদনটি পরিমার্জন করে পুনরায় প্রকাশ করে প্রথম আলো। প্রতিবেদনের সঙ্গে ভুলেট একটি ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়।

বিভি/আরএইচ/এইচএস

মন্তব্য করুন: