কারাদণ্ড মাথায় নিয়ে গোপনে ইরান ছাড়লেন নির্মাতা মোহাম্মদ রসৌলফ

বিশ্বের অন্যতম সুপ্রাচীন আর জাঁকজমকপূর্ণ চলচ্চিত্র কান উৎসবে বিশ্বের খ্যাতিমান নির্মাতারা তাদের চলচ্চিত্র প্রদর্শনে উন্মুখ হয়ে থাকেন। ইরানের গুণী নির্মাতা মোহাম্মদ রসৌলফ তার ব্যতিক্রম নন। কান উৎসবের এবারের আসরে প্রিমিয়ার হবে ইরানি পরিচালক মোহাম্মদ রসৌলফের সিনেমা ‘দ্য সিড অব দ্য সেক্রেড ফিগ’ এর। উৎসবের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে পাম দ’রের জন্য লড়বে ছবিটি। কিন্তু ইরানি সরকার তাকে ছবিটি প্রদর্শন না করার আদেশ দেয়। নির্দেশ অমান্য করার অপরাধে রসৌলফকে কারাদণ্ড, জরিমানা ও চাবুক মারার নির্দেশ দেয় আদালত। একইসাথে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশও জারি হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে গোপনে ইরান ছেড়েছেন রসৌলফ। নির্মাতা নিজেই নিশ্চিত করেছেন বিষয়টি।
সোমবার নির্মাতার অফিশিয়াল ইনস্টাগ্রাম পেজ শেয়ার করা পোস্টে রসৌলফ লিখেছেন, ‘আমি আমার বন্ধু, পরিচিতজন ও সে সব মানুষদের কাছে কৃতজ্ঞ, যারা সদয়, নিঃস্বার্থভাবে ও কখনো কখনো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাকে সীমান্ত পার করে দিয়েছেন এবং আমাকে দীর্ঘ যাত্রার পর নিরাপদে পৌঁছাতে সাহায্য করেছেন।’
কান চলচ্চিত্র উৎসবে নির্মাতার ‘দ্য সিড অফ দ্য সেক্রেড ফিগ' ছবির প্রিমিয়ার হবে। উৎসবের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে পাম দ’রের জন্য লড়বে ছবিটি। ’ ধারণা করা হচ্ছে এই ছবির প্রিমিয়ারে অংশ নেবেন নির্মাতা। ফ্রেঞ্চ ডিস্ট্রিবিউটরের দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘তিনি এখন ইউরোপের এক অজানা স্থানে আছেন। তিনি তার সিনেমার ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ারে উপস্থিত থাকতে পারেন।’
‘ঝুঁকিপূর্ণ এক যাত্রা শেষে রসৌলফ নিরাপদে ইউরোপে পৌঁছে গেছেন। আশা করছি তিনি কান উৎসবে সিনেমার প্রিমিয়ারে উপস্থিত থাকবেন,’ জানিয়েছেন ফিল্ম বুটিক অ্যান্ড প্যারালাল ফোর্টিফাইভের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জিন-ক্রিস্টোফ সিমন।
‘দ্য সিড অব দ্য সেক্রেড ফিগ’ ছবির গল্প ইমান নামের এক ব্যক্তিকে ঘিরে। যিনি তেহরানের বিপ্লবী আদালতের একজন তদন্তকারী বিচারক। দেশব্যাপী রাজনৈতিক প্রতিবাদ তীব্র হওয়ার সাথে সাথে তার মনে জন্মায় অবিশ্বাস এবং সন্দেহ। এক সময় তার বন্দুক রহস্যজনক ভাবে অদৃশ্য হয়ে যায়। তিনি সন্দেহ করা শুরু করেন যে স্ত্রী নাজমেহ এবং তার কন্যা রেজভান এবং সানা এই ঘটনায় জড়িত। তিনি বাড়িতে কঠোর ব্যবস্থা আরোপ করেন, যার ফলে উত্তেজনা বেড়ে যায়। ধাপে ধাপে তাদের সামাজিক রীতিনীতি ও পারিবারিক জীবনের চিত্র বদলে যায়।
প্রায় বিশ বছর ধরে সেন্সরশিপ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে আসছেন রসৌলফ। নিজের পঞ্চম ছবি ‘আ ম্যান অব ইন্টিগ্রিটি’র জন্য ২০১৭ সালে নিষিদ্ধ হন মোহাম্মদ রসৌলফ। সিনেমা বানানো এবং দেশের বাইরে বের হওয়া, দুটোই বারণ তার জন্য। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নাকি সরকারবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এই অভিযোগে এক বছর জেলও খাটতে হয়েছিল এই নির্মাতাকে।
বিশ্বের বিভিন্ন দাপুটে চলচ্চিত্র উৎসবের কল্যাণে বরাবরই আলোচিত ইরানি সিনেমা! সরকার আরোপিত সীমাবদ্ধতাগুলো সিনেমার মাধ্যমে তুলে ধরায় আইনি ঝামেলায় পড়েছেন সিনেমাগুলোর নির্মাতা-কলাকুশলীরা। যদিও বর্তমানে সরকারের এসব নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করতে শিখে গিয়েছেন নির্মাতারা। বিদেশি চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে অংশ নিয়ে নিজেদের সিনেমা প্রদর্শন করছেন। আর এমনটা রুখতেই নির্মাতা কিংবা শিল্পীদের উপর প্রায়শই শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে।
বিভি/জোহা/রিসি
মন্তব্য করুন: