• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আরমান ভাই এবং সিকান্দর বক্স যেভাবে এল

শামীম শাহেদ, কুইন্স, নিউইয়র্ক

প্রকাশিত: ১৫:২০, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ফন্ট সাইজ
আরমান ভাই এবং সিকান্দর বক্স যেভাবে এল

যেকোনো মিডিয়া সফল করার সহজ সূত্র হলো, আপনাকে নিজস্ব তারকা তৈরি করতে হবে, তারপর সেই তারকামূল্য বারবার ব্যবহার করতে হবে। সেটা মানুষ তারকা হোক, লোগো তারকা হোক বা পন্য তারকা হোক। সেই তারকা চিহ্ন তৈরি হওয়ার আগপর্যন্ত অন্য প্রতিষ্ঠিত তারকাদের ব্যবহার করা যেতে পারে। বাংলাভিশনে দ্বিতীয়বার যুক্ত হওয়ার পর নানা ভাবে সেই কাজটাই শুরু করলাম। সময়টা ২০১০ এর দিকে। ঠিক করালাম কয়েকজন নির্মাতা ও লেখককে আমরা আরও বেশি করে আলোচনায় আনব। কয়েকটি নাম চিহ্নিত করলাম, সাগর জাহান, মাসুদ সেজান, তানভীর হোসেন প্রবাল, মারুফ মিঠু, আশরাফুল চঞ্চল। তাদের মধ্যে অনেকে অবশ্য আগে থেকেই আলোচিত ছিলেন। 

 

সাগর জাহানকে আমি আগে থেকে চিনতাম না, পরিচয় ছিল না। একদিন দেওয়ান শামসুর রকীব এবং তারেক আখন্দ আমার কাছে একটা স্ক্রীপ্ট নিয়ে এলেন, শিরোনাম ‌'আরমান ভাই কয়া-পারছে'। প্রথমে নাটকের নামটা শুনে একটু গেঁয়ো গেঁয়ো লাগল। বিষয়টা কী? বিষয়টা হলো, আরমান নামে পুরান ঢাকার এক ছেলে পুরান ঢাকার বিরাট মাস্তান। সবাই তাকে এক নামে চেনে, ভয় পায়। ভক্তি করে সবাই তাকে আরমান ভাই নামে ডাকে। বড়-ছোট সবারই সে আরমান ভাই। কিন্তু সেই ছেলেই এক তরুণীর সামনে এলে কাঁপতে থাকে, তোতলাতে থাকে, লজ্জায়-ভয়ে কথা বলতে পারে না। মেয়েটাকে আরমান ভাই প্রচণ্ড পছন্দ করে, কিন্তু তার সামনে এলেই সে এত নার্ভাস হয়ে যায় যে তার ভালো লাগার কথাটাই বলতে পারে না। চমৎকার বৈপরীত্য। আমি সঙ্গে সঙ্গে পিক করলাম। সাগরের সাথে মিটিং হলো, ঈদের নাটকের প্রথম কাজ হিসেবে চুড়ান্ত হলো। আরমান ভাই করবেন জাহিদ হাসান, যাকে আরমান ভাই ভয় করেন সেই চরিত্রটি করবেন তিশা। মনে মনে ঠিক করলাম প্রথম পর্ব যদি দর্শকদের সাথে প্রপারলি কমিউনিকেট করে তাহলে এটার সিরিজ করা হবে। 

সাগর জাহান এর আসাধারণ উপস্থাপনায় প্রথম ঈদেই বিষয়টি ক্লিক করল। একে একে তৈরি হলো আরমান ভাই কয়া পারছে, আরমান ভাই ফাইসা গেছে, আরমান ভাই জেন্টেল ম্যান, আরমান ভাই হানিমুনে, আরমান ভাইয়ের গদিসাইত, আরমান ভাই হাউজ হাজবেন্ড, আরমান ভাই বিরাট টেনশনে...। জাহিদ হাসান খুশি, সাগর জাহান খুশি, আমরাও খুশি। বাংলাভিশনের পক্ষ থেকে ঠিক করলাম আরমান ভাই সিরিজ নিয়ে ফিল্ম করা হবে। সাগর কে বললাম, চলেন একদিন সবাই মিলে সাত দিনের জন্য কক্সবাজারের কোনো একটা জায়গায় চলে যাই। আড্ডা দিব, গল্প করব আর আরমান ভাইয়ের সিনেমার গল্প ঠিক করব। জাহিদ ভাইকে রাজি করান। সব প্রায় ঠিক ঠাক। জাহিদ ভাইও রাজি। হঠাৎ একদিন শুনলাম জাহিদ হাসান নাকি সাগর জাহানের সাথে আর কোনো কাজ করবেন না। আমাদের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার অবস্থা। ঘটনা কী? ঘটনা হলো, প্রথম আলোতে সাগর জাহানের একটা ইন্টারভিউ ছাপা হয়েছে সেখানে সাগর জাহান কিছু একটা উল্টাপাল্টা বলেছেন যেটা জাহিদ ভাইয়ের পছন্দ হয় নাই। 

জাহিদ হাসান, যাকে আরমান ভাই ভয় করেন সেই চরিত্রটি করেন তিশা

আমি অস্থির হয়ে উঠলাম, জাহিদ হাসান এবং সাগর জাহানের যদি মিল না থাকে তাহলে আরমান ভাই সিনেমা কীভাবে হবে? আমি জাহিদ ভাইকে ফোন করলাম, ভাই আপনি কি অফিসে আছেন? আমি একটু আসতে চাই। জাহিদ ভাই বললেন, হ্যাঁ শামীম শাহেদ আসো। আমি আছি।
আমি ‘মিস্টার বেকার’ থেকে সুন্দর একটা কেক কিনলাম। তারপর জাহিদ ভাইয়ের বেধে দেওয়া সময়ের আগেই গিয়ে হাজির হলাম। গিয়ে আরও অবাক হলাম, জাহিদ ভাই নাই। তিনি চলে গেছেন। বুঝলাম ‘আরমান ভাই’ ফিল্ম আর হচ্ছে না। কিন্তু সামনে তো ঈদ, আরমান ভাই না হলে আমাদের স্ক্রীনের কী হবে?
সঙ্গে সঙ্গে সাগরকে ডাকলাম। সাগর এলেন, আমি পুরো ঘটনা খুলে বললাম। বললাম, ধরে নেন আরমান ভাই আর হচ্ছে না। জাহিদ ভাই আর টাইম দিবে বলে মনে হয় না। নতুন কিছু একটা ভাবেন। সাগর চিন্তিত হয়ে উঠলেন। কী হতে পারে? 

আধাঘন্টার মধ্যেই নতুন একটা চরিত্রের কথা ভাবা হলো, একটা লোক যে দেখতে কালো, কুৎসিত, বেঁটে-খাটো। ঠিক মতো কথাও বলতে পারে না কিন্তু কোনো একভাবে সে নায়িকার মতো দেখতে একটা মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে আসল। এখন তার যে বন্ধুই বাসায় আসে সেই ছেলে মনে করে বন্ধুটা তার বউকে দেখতে আসে। সেই ছেলের নাম হবে সিকান্দার বক্স। দেখতে কুৎসিত হলে কী হবে তার মনটা অনেক বড়। ইনফিউরিটি কম্প্লেক্সই হবে তার মূল সমস্যা। কিন্তু কে করবে চরিত্রটা? সাগর বললেন, মোশারফ করিম করলে চমৎকার হবে। 
আমি বললাম, মোশারফ করিম তো দেখতে সুন্দর। সাগর বললেন, তাকে ম্যাকআপ দিয়ে কালো বানানো হবে, ক্যামেরা বিশেষভাবে উপর থেকে ধরে তাকে বেটে বানানো হবে। আর তার আঞ্চলিক ভাষা হবে ময়মনসিংহের ভাষা। সেই ছেলেটা গর্বের সঙ্গে তার নিজের ভাষায় কথা বলবে। ব্যাস শুরু হলো সিকান্দার বক্স। সিকান্দার বক্সের হাওয়াই গাড়ি, সিকান্দার বক্স বান্দরবনে, সিকান্দার বক্স এখন বিরাট মডেল, সিকান্দার বক্স কক্সবাজারে, সিকান্দার বক্স এখন ময়মনসিংহে। সুপার হিট হয়ে গেল। আর বাংলাভিশনের পর্দাও সবার কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠল। 

আরমান ভাই`র পরে  সিকান্দার বক্স সিরিজও সুপার হিট হয়

আমি সাংগঠনিক অংশটুকু বললাম, নাটকের ভিতরের রহস্য বলবেন সাগর জাহান । অন্যদের মধ্যে, মাসুদ সেজানের ছিল লংমার্চ, রেড সিগন্যাল, ফরমালিন। তানভীর হোসেন প্রবালের ছিল অ-এর গল্প। মারুফ মিঠু আর আশরাফুল চঞ্চলের ছিল সেই রকম চা খোর, সেই রকম ঝাল খোর, সেই রকম পান খোর। শিরোনাম একটু অন্যরকম হলেও প্রডাকশনগুলো ছিল মনেরাখার মতোই। ধন্যবাদ সংশ্লিষ্ট সবাইকে। 

লেখক : সাবেক অনুষ্ঠান প্রধান, বাংলাভিশন

 

মন্তব্য করুন: