প্রবাসে নিঃসঙ্গতায় চাদরে মোড়া ঈদ

মালদ্বীপে বাংলাদেশের একদিন আগেই পালিত হচ্ছে ঈদু-উল ফিতর
ঈদ-মানে খুশি, ঈদ-মানে আনন্দ। এ কথা প্রত্যেকে মানলেও, প্রবাসীদের জীবনে এর বাস্তবতা খুঁজে পাওয়া কঠিন। ঈদের আনন্দে দেশের সবাই যখন আত্মহারা, তখন প্রবাসীরা থাকেন কাজে। রাত পেরিয়ে সকালবেলা ঘুম ভাঙার পর আশপাশে যখন পরিবারকে দেখতে পাওয়া যায়না। ঠিক তখনই নিজের অজান্তে টলমল অশ্রু ভেজা মনে ভাবতে থাকে চিরচেনা গ্রামের ঈদ উদযাপনের স্মৃতিগুলো।
নামাজ শেষে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে কথা বলে ভুলে থাকার চেষ্টা করে নিজের কষ্টগুলো। কেউ তো আবার ৫ বছর ১০ বছর দেশে যান না। ভিসা জটিলতা, আর্থিক সমস্যাসহ নানা কারণে ইচ্ছে থাকলেও অনেকের দেশে গিয়ে ঈদ উদযাপন কখনো সম্ভব হয় না। এমন অনেক প্রবাসী রয়েছেন মালদ্বীপের বিভিন্ন দ্বীপে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাংলাদেশীরা, যাঁরা বছরের পর বছর দেশের স্মৃতি নিয়ে প্রবাসে ঈদ উদযাপন করছেন। নিজের পরিবারের ঈদের খরচ পাঠিয়ে নিজে প্রতিনিয়ত কষ্ট করে যাচ্ছেন। এভাবে একের পর এক ঈদ আসে যায়, প্রবাসীদের ঈদ রয়ে যায় নিঃসঙ্গতায় ভরা।
এমনই কিছু প্রবাসীদের সাথে তাদের ঈদ ভাবনা নিয়ে কথা হয় বাংলা ভিষণ এর সঙ্গে, আলাপকালে তারা জানিয়েছেন ঈদ অনুভূতির কথা। আর তাতে উঠে এসেছে পরিবারকে কাছে না পাওয়ার কষ্ট আর যন্ত্রণার সুর। মাসুদ আলম নামের একজন মালদ্বীপ প্রবাসী জানান ঈদ মানে আনন্দ হলেও, প্রবাসীদের কাছে তা কষ্টের। জীবিকার প্রয়োজনে প্রিয়জনদের ছাড়া একাকী ঈদ উদযাপন করতে হয়। সবসময় তো বটেই, ঈদের সময় পরিবারের সবাইকে খুব বেশি মিস করি। ঈদের নামাজ পড়ে এসে একটা ঘুম দেই, বিকেল হলে বন্ধুদের নিয়ে সাগর পাড়ে অথবা পার্কে গিয়ে আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরে আসি- এই হলো প্রবাসীদের ঈদ বলেন মালদ্বীপ প্রবাসী মো. শাওন।
ঢাকা ট্রেডার্স এর কর্ণধার মো. বাবুল হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন যাবত মালদ্বীপে আছি এবং প্রতিটি ঈদ দেশে পরিবারের সঙ্গে কাটানোর চেষ্টা করেছি। এবার বিভিন্ন কারণে যাওয়া হয়নি, তাই বেশ খারাপ লাগছে। এবার দেশে যেতে না পারলেও, ফোনে পরিবারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করার চেষ্টা চালাচ্ছি।
ব্যবসায়ী হোসেন সাহেদ বলেন, ঈদের সময় পরিবারের সবাইকে খুব মিস করি। বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে আনন্দ করে কষ্ট ভুলে থাকার চেষ্টা করি। প্রবাসী মো. রিয়াদ হোসেন বলেন, পৃথিবীতে প্রবাসের কষ্টটা একটু অন্য ধরনের। সব আছে, তবু যেন কিছুই নেই। প্রবাসী না হওয়া পর্যন্ত কেউ আমাদের কষ্ট অনুভব করতে পারবে না। আমাদের কষ্টের বাড়তি মাত্রা যোগ করে ঈদ এবং বিশেষ উৎসবের দিনগুলি।
আনন্দ আর বেদনার নাম হচ্ছে প্রবাসীদের ঈদ। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও নিজের মতো করে আনন্দ খুঁজে নেয় প্রবাসীরা। প্রবাসের কষ্টটা একেবারেই আলাদা। সব আছে তবুও যেন কিছুই নেই। একমাত্র প্রবাসীরাই তাদের কষ্ট অনুভব করতে পারে, তাছাড়া আর কেউ না। আর এভাবেই প্রতিনিয়ত নিজের কষ্টকে চাপা দিয়ে পরিবার ও দেশের জন্য নিশ্চুপভাবে কাজ করে যায় এই প্রবাসীরাই।
্এবার বিত্র ঈদুল ফিতর এর নামাজ শেষে উপস্থিত সকল প্রবাসীদের সাথে কুশলাদি ও ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন মালদ্বীপের বাংলাদেশ মিশনের কাউন্সেলর ও দুতালয় প্রধান (শ্রম) মো. সোহেল পারভেজ। এছাড়াও মালদ্বীপে অবস্থানরত সকল প্রবাসীদের ঈদ শুভেচ্ছা জানান তিনি।
আর সবকিছুর পরেও চাপা কান্না বুকে নিয়ে মুচকি হেসে এই প্রবাসীরাই বলেন আমি ভাল আছি।
মন্তব্য করুন: