• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

আরব আমিরাতে আগুনে ৩ বাংলাদেশির মৃত্যু

প্রকাশিত: ০০:৩৭, ৩১ মে ২০২৩

ফন্ট সাইজ
আরব আমিরাতে আগুনে ৩ বাংলাদেশির মৃত্যু

সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাতে একটি সোফা ফ্যাক্টরিতে অগ্নিকাণ্ডে ঘুমন্ত অবস্থায় দগ্ধ হয়ে তিন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। তাদের সবার বাড়ি নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলায়। 

মঙ্গলবার (৩০মে) তিনজনের পরিবার তাদের মৃত্যুর খবর পায়। ভোর ৪টার দিকে (স্থানীয় সময়)  বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে নিহতদের পরিবার জানিয়েছে।

নিহতরা হলেন-সেনবাগ উপজেলার ডমুরুয়া ইউনিয়নের পলতি তারাবাড়ীয়া গ্রাামের মৃত আবদুল কাদেরের ছেলে মো. ইউসুপ (৪৩), একই এলাকার বড় বাড়ির মীর আহাম্মদের ছেলে তারেক হোসেন বাদল (৪০) ও মাতইন আবদুল ওয়াহাব মিয়ার ছেলে মো. রাসেল (৩০)। 

আমিরাতে অবস্থানরত নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা দূতাবাসের মাধ্যমে লাশগুলো দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।

নিহতদের পরিবারের সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার (৩০ মে) সকালে তিনজনের পরিবার অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যুর ঘটনা জানতে পারে। এরপর বেলা ১১টার দিকে নিহত ইউসুপের ছোট ভাই ইমরান হোসেন আবুধাবি থেকে তিনজনের মৃত্যুর খবর পান। এরপর তিন পরিবারসহ এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশিসহ শত শত নারী-পুরুষ ছুটে আসেন নিহত তিনজনের বাড়িতে।

নিহত ইউসুপের ছোট ভাই গোলাম রসুল জানান, ২৫ বছর আগে তার বড় ভাই মো. ইউসুপ জীবিকার সন্ধানে পাড়ি জমায় আরব আমিরাতে। এক বছর আগে তিনি শারজাহ সামাইয়া এলাকায় ধার দেনা করে সোফা ফ্যাক্টরির ব্যবসা শুরু করেন। এতে এলাকার কয়েক জনকে তার প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যান। ঘটনার সময় তারা তিনজন ঘুমিয়ে ছিলেন। মুহূর্তের মধ্যে ফ্যাক্টরি পুড়ে যায় এবং তারা দগ্ধ হয়ে মারা যান। পাশে তার অপর ভাই আনোয়ার হোসেনের ফ্যাক্টরিও পুড়ে যায়। এতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। জুলাই মাসে তার দেশে আসার কথা ছিলো। মিলন (২২) ও সিফাত (১৩) নামে দুই সন্তান পিতা ইউসুপকে হারিয়ে স্তব্ধ। নিহত ইউসুপের বৃদ্ধা মা মহব্বতের নেছা পুত্র শোকে বারবার মূর্ছা যান।

অপর নিহত বাদলের পিতা মীর আহাম্মদ জানান, ৮ মাস আগে পরিবারের অনটন ঘুঁচাতে বাংলাদেশ থেকে ইউসুপের ফ্যাক্টরিতে কাজ নেয় বাদল। বাদলের দুই ভাই প্রতিবন্ধী। তার সাজ্জাদ, জাহিদ ও আবীর নামে তিন ছেলে লেখা পড়া করছে। বাদলের মৃত্যুতে পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়ল। পুত্র শোকে পিতা মীর আহাম্মদ ও মাতা পেয়ারা বেগম বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন।

নিহত রাসেলের মা শরীফা বেগম ছেলে হারিয়ে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। বাড়িতে শত শত নারী-পুরুষের সমাগম ও কান্নার আহাজারি। স্বামী রাসেলকে হারিয়ে স্ত্রী পান্না পাথর হয়ে গেছেন। তার দুই চোখে বেয়ে শুধু অশ্রæ ঝরছিলো। পাশে তার স্বজনসহ অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ।

নিহত রাসেলের চাচা সাহাব উদ্দিন জানান, গত বছরের এপ্রিল মাসে ধার-দেনা ও কিস্তি নিয়ে রাসেল ইউসুপের সোফা ফ্যাক্টরিতে যায়। নিজের কোনো ভূমি বা বসতঘরও নেই রাসেলের। তার মা, স্ত্রী ও এক সন্তান চাচা আবদুস ছাত্তারের ঘরে থাকেন। কিস্তির টাকাও পরিশোধ করতে পারেননি রাসেল। রাসেলের কন্যা সন্তানও প্রতিবন্ধী।

ডমুরুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত হোসেন বলেন, আমিরাতে অগ্নিকাণ্ডে তার ইউনিয়নের তিন প্রবাসীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। তিনি এলাকার বাইরে থাকায় তার প্রতিনিধির মাধ্যমে নিহত ব্যক্তি ও তাদের বাড়ির খোঁজখবর রাখছেন।

সেনবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে আগুনে সেনবাগের তিন প্রবাসী নিহত হওয়ার খবর তিনি লোকমুখে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জেনেছেন। তবে এ বিষয়ে নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা থানায় কিছু জানাননি।

নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহাবুর রহমান বলেন, এ ঘটনা শুনিনি। সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। নিহতের পরিবারের খোঁজখবর নেবো।

বিভি/টিটি

মন্তব্য করুন: