• NEWS PORTAL

  • রবিবার, ০৫ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

সাইবার নিরাপত্তা সূচকে ইসরাইলকে ছাড়ালো বাংলাদেশ, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

প্রকাশিত: ১৮:৪৩, ৩১ জানুয়ারি ২০২২

আপডেট: ১৩:১৭, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২২

ফন্ট সাইজ
সাইবার নিরাপত্তা সূচকে ইসরাইলকে ছাড়ালো বাংলাদেশ, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

এস্তোনিয়াভিত্তিক ই-গভর্নেন্স অ্যাকাডেমি ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে বিশ্বের ১৬০ দেশের সাইবার নিরাপত্তা ও ডিজিটাল উন্নয়ন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তৈরি করা হয় ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি ইনডেক্স (এনসিএসআই)। ইতিমধ্যেই এই ইনডেক্সে পৃথিবীর উন্নত অনেক রাষ্ট্রকেই পেছনে ফেলে নিজেদের অবস্থান পাকা করেছে বাংলাদেশ। 

এনসিএসআই’এর ডেভেলপমেন্ট এবং র‌্যাংকিং টাইমলাইনে দেখা যায়, ২০১৯ সালে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টি স্টেবল হলেও ২০২০, ২১ ও ২২ সালে ধাপে ধাপে উন্নতি লাভ করেছে বাংলাদেশ। এমনকি সবশেষ সূচকে সাইবার সক্ষমতায় শক্তিশালী দেশ ইসরাইলকেও তালিকায় পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। সূচক অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়া কিংবা সার্কভুক্ত দেশের মধ্যে বাংলাদেশের সাইবার আকাশ সবচেয়ে সুরক্ষিত। 

২০২০ সালে আগের অবস্থান থেকে ৮ ধাপ এগিয়ে ৬৫তম স্থানে উন্নীত হয় বাংলাদেশ। এরপর ২৭ ধাপ এগিয়ে ২০২১ সালে ৩৮তম অবস্থান দখল করে সার্কভুক্ত দেশের শীর্ষে উঠে আসে। তবে, সব পরিসংখ্যানকে পেছনে ফেলে এবার বছরের শুরুতেই ইসরাইল, সাইপ্রাস ও কানাডাকে পেছনে ফেলে তালিকায় ৩২ নম্বরে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। 

সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশই নাগাল পায়নি বাংলাদেশের। সবশেষ প্রকাশিত তালিকায় দেখা যায়, তালিকায় ৬৭.৫৩ পয়েন্ট পেয়ে ৩২ নম্বরে অবস্থান করছে বাংলাদেশ, যেখানে ৫৯.৭৪ পয়েন্ট পেয়ে পাশের দেশ ভারতের অবস্থান তালিকার ৪৪ নাম্বারে। পাকিস্তান আছে ৭৪তম স্থানে। মিয়ানমারের স্থান ১৪০তম।

এ বিষয়ে ন্যাশনাল সার্টের প্রকল্প পরিচালক তারেক এম বরকতুল্লাহ বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, দেশের ধারাবাহিক এই অর্জন সাইবার নিরাপত্তা বিধানে সক্ষমতার প্রতিফলন। এই সাফল্য দেশকে সাইবার সুরক্ষিত জাতি হিসেবেও প্রতিষ্ঠা করতে ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও সার্ট গবেষণা ও উন্নয়নে সার্বিক প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে। 

সবশেষ সূচকে দেখা যায়, বাংলাদেশ এবং ইসরাইল একই পয়েন্ট (৬৭.৫৩) অর্জন করেছে। কিন্তু এনসিএসআই ইনডেক্স-এ কিভাবে বাংলাদেশ ইসরাইলের থেকে একধাপ উপরে উঠলো এই প্রশ্নের জবাবে তারেক এম বরকতুল্লাহ বলেন, একই পয়েন্ট অর্জিত হলেও বাংলাদেশ তালিকায় উপরে থাকার কারণ হলো, ইসরাইলের থেকে বাংলাদেশের থ্রেটস প্রটেকশন সক্ষমতা বেশি। 

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা সূচকে চোখে পড়ার মতো উন্নতি ঘটলেও ‘কন্ট্রিবিউশন টু গ্লোবাল সাইবার সিকিউটিটি’, ‘প্রটেকশন টু ডিজিটাল সার্ভিসেস’, ‘প্রটেকশন টু পারসোনাল ডাটা’ এবং ‘মিলিটারি সাইবার অপারেশনস’ এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সিকিউরিটির অবস্থা একেবারে নাজুক। 

এরমধ্যে ‘কন্ট্রিবিউশন টু গ্লোবাল সাইবার সিকিউটিটি’, ‘প্রটেকশন টু ডিজিটাল সার্ভিসেস’ এর সংগে সরাসরি জড়িত ন্যাশনাল সার্ট। এছাড়া‘মিলিটারি সাইবার অপারেশনস’-এ কোলাবোরেশন করে সার্ট।
 
এ বিষয়ে তারেক এম বরকতুল্লাহ বলেন, দুর্বল বিষয়গুলো চিহ্নিত করে করণীয় সম্পর্কে একটি মিটিং হয়েছে। স্ট্র্যাটিজি এবং করণীয় সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা আইসিটি থেকে কেবিনেটে পাঠানো হবে। কেবিনেট ডিভিশন থেকে পাশ হলে সেটি জারি করা হবে। 

ন্যাশনাল সার্টের চিফ ইনফরমেশন সিকিউরিটি অফিসার (সিআইএসও) তৌহিদুর রহমান বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সার্টের বিভিন্ন সাইবার সংক্রান্ত যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের ফলে সাইবার বিশ্বে দেশ লক্ষ্যণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। ‘ইন্টার ইউনিভার্সিটি সাইবার ড্রিল’, ‘ইন্টার ব্যাংকিং সাইবার ড্রিল’ এবং ‘ন্যাশনাল সাইবার ড্রিল’ আয়োজনের মাধ্যমে নিজেদের সাইবার সক্ষমতাকে বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হচ্ছে।  

‘কন্ট্রিবিউশন টু গ্লোবাল সাইবার সিকিউরিটি’, ‘প্রটেকশন টু ডিজিটাল সার্ভিসেস’-‍এর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এখন জনবল সংকটে ভুগছে সার্ট। দেশের সাইবার সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি গ্লোবাল সাইবার সিকিউরিটি অথবা ডিজিটাল সার্ভিসেস নিয়ে কাজ করা স্বল্প জনবলে কষ্টসাধ্য ব্যাপার।

সাইবার বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাব্বির বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, দেশের এই সাফল্য নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন কারণেই দেশ সাইবার সক্ষমতায় এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, শুধু কোনো একটি পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করেই সবকিছুর মাপকাঠি নির্ধারণ করা যাবে না।

তালিকায় ইসরাইলের উপরে বাংলাদেশের অবস্থানের বিষয়ে তিনি দ্বিধান্বিত স্বরে বলেন, সাইবার ওয়ার্ল্ডে ইসরাইল প্রথম সারির দেশ। তালিকায় তাদের অবস্থান আমাদের নিচে, বিষয়টা একটু...। পরিসংখ্যানগত দিক থেকে হতে পারে কিছু জায়গায় আমরা তাদের থেকে ভাল অবস্থানে আছি। 

সুমন আহমেদ সাব্বির বলেন, নিঃসন্দেহে এনসিএসআই-এর রিপোর্টে যে সমস্ত দুর্বলতা উঠে এসেছে তা সঠিক। আমাদের ব্যক্তিগত প্রাইভেসি, ‘কন্ট্রিবিউশন টু গ্লোবাল সাইবার সিকিউটিটি’, ‘প্রটেকশন টু ডিজিটাল সার্ভিসেস’ এবং মিলিটারী সেকশনে প্রচুর কাজ করতে হবে। এখনো আমাদের ডাটা প্রাইভেসির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো মানদণ্ড নেই। দেশি বা বিদেশি প্রতিষ্ঠান আমাদের যে তথ্য সংগ্রহ করে তা কতোটা সংরক্ষণ করে তাও জানা জরুরি।

তিনি আরও বলেন, এখনো আমরা কোনো সাইবার হামলা সম্পর্কে তথ্য দিতে অনাগ্রহ দেখাই। ফলে দিন শেষে আমরাই ক্ষতিগ্রস্ত হই। এসব বিষয় দেখভালের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থাকলেও, কোলাবোরেশনের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। তাই, সাইবার সিকিউরিটির বিষয়ে একটি যথাযথ মানদণ্ড তৈরি প্রয়োজন। 

অনেক সাইবার বিশেষজ্ঞ বলছেন, যে সূচকে ইনডেক্সটি তৈরি করা হয়েছে, সেই অনুযায়ী বাংলাদেশের সাইবার সক্ষমতা বেড়েছে বলা যায়। কিন্তু এখনো কোন দেশের সংগে হেড টু হেড তুলনা করার সময় হয়নি। এখনো ডাটা প্রোটেকশনে আমরা কোনো লিগ্যাল ফ্রেম ওয়ার্ক তৈরি করতে পারিনি। এছাড়াও ব্যাক্তি পর্যায়ে সচেতনার বিষয়ও রয়েছে। 

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বাংলাভিশন ডিজিটালকে জানান, সাইবার সূচকে বাংলাদেশ ইসরাইলকে পেছনে ফেলেছে, এটা খুবই গর্বের বিষয়। এই সাফল্য দেশের ভবিষ্যত সাইবার সেক্টরকে আরো সুদৃঢ় করবে। 

মন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ডেটা প্রাইভেসির বিষয়টি সুরক্ষিত হয়নি, এমনকি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও অনেকটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়েছে। কিন্তু, সামাজিক এসব মাধ্যমকে অন্য উপায়ে দেখভাল করে সরকার। 

সরকারের তথ্য প্রযুক্তি বিভাগ ডেটা প্রাইভেসির বিষয়ে কাজ করছে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, সরকারের বর্তমান সময়ের মধ্যেই এ সংক্রান্ত একটি আইন বা অ্যাক্ট তৈরি করা হবে।

মন্ত্রী বলেন, সাইবার ইস্যুগুলো দেখভালের জন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সি’র ‘সার্ট’ কাজ করছে এবং তারা অনেক অ্যাক্টিভ। যে কোনো প্রতিষ্ঠান সাইবার হামলার শিকার হলে তারা সার্টের সংগে কোলাবোরেশনে কাজ করতে পারেন বা সহযোগিতা নিতে পারেন।

কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠানই এসব বিষয়ে তথ্য দিতে অনাগ্রহ দেখায় এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমাদের এই প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আমরা সার্টের কার্যক্রম অবজার্ভ করছি, পরবর্তীতে সার্টকে বাধ্যতামূলক তথ্য প্রদানের বিষয়টি ভেবে দেখা হবে।

এ কথা বলাই যায়, বিগত কয়েক বছরে তথ্য প্রযুক্তি এবং সাইবার সক্ষমতায় বাংলাদেশ অনেকটা এগিয়েছে। তবে, কোন কোন সাইবার বিশেষজ্ঞের অভিমত, সাইবার ওর্য়াল্ডে দেশ এখনো প্রাইম স্টেজে। এখনো অনেক শেখার বাকি। তাই কোন নির্দিষ্ট পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে নিজেদের সক্ষমতাকে মানদণ্ড করার এখন উপযুক্ত সময় নয়।

বিভি/এসআই/এসডি

মন্তব্য করুন: