• NEWS PORTAL

  • রবিবার, ০৫ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

বস্তি থেকে মাইক্রোসফটের ম্যানেজার

বাংলাভিশন ডিজিটালকে জীবনের গল্প শোনালেন হার না মানা শাহীনা (ভিডিও)

প্রকাশিত: ২১:৩৯, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২

আপডেট: ১৭:৫৬, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২

ফন্ট সাইজ

‘সফলতা’ চার অক্ষরের এই শব্দের গভীরতা সহজে বোঝা যায় না। উচ্চারণে দুই সেকেন্ড সময় নেওয়া এই ‘সফলতা’ অর্জনে কখনো কখনো সারা জীবন কষ্ট করতে হয়। সমাজের নানান আচারে পিষ্ট এই সমাজে দারিদ্র্য, বৈষম্য আর রক্ত চক্ষুকে টপকে সফলতার সোপানে ওঠা খুব একটা সহজ নয়। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে এ চিত্র আরো সঙ্গীন।

সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি’র একটি প্রতিবেদন নাড়া দেয় ভারতসহ আশপাশের বিভিন্ন দেশকে। “ফ্রম মুম্বাই স্লাম টু মাইক্রোসফট” নামের এই প্রতিবেদনে ভারতের একজন নারীর সফলতার পেছনের কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং জীবন তুলে ধরা হয়েছে।

‘বামন হয়ে চাঁদ ধরা যায় না’ বাংলা প্রবাদের একথা ঠিক থাকলেও এই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন শাহীনা আত্তারওয়ালা। অভাব-অনটন, লিঙ্গ বৈষম্য আর বস্তির চ্যালেঞ্জিং জীবন পেরিয়ে এখন তিনি মাইক্রোসফটের প্রোডাক্ট ডিজাইন ম্যানেজার।

সফল এই নারীর সঙ্গে কথা হয় বাংলাভিশন ডিজিটালের এই প্রতিবেদকের। তিনি জানান, ভারতের বান্দ্রা রেলস্টেশনের কাছে দরগা গালি বস্তিতে থাকতেন তিনি। বাবা ফেরি করে তেল বিক্রি করতেন। দীর্ঘ ১৫ বছর এই বস্তিতে ছিলেন তিনি। সেসময় কষ্টকর জীবনযাপন, লিঙ্গবৈষম্য এবং যৌন হয়রানির মুখোমুখি হতে হয়েছে প্রতি মুহূর্তে। এরপর কাজের জন্য একসময় তিনি মুম্বাইতে চলে আসেন।

কম্পিউটারের প্রতি প্রবল আকর্ষণ থাকলেও সেসময় রেজাল্ট খারাপ হওয়ায় এবং টাকার অভাবে প্রথমে ভর্তি হতে পারেননি। পরে, ধারের টাকায় ভর্তি হলেও, কম্পিউটার কিনতে বাদ দিতে হয়েছে দুপুরের খাবার, হেঁটে ফিরতে হয়েছে বাড়িতে। 

কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শিখলেও ডিজাইনে ক্যারিয়ার গড়ার সিদ্ধান্ত নেন শাহীনা। মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিকম-এ স্নাতক শেষে এনআইআইটি থেকে ভিজ্যুয়াল কমিউনিকেশন অ্যান্ড ডিজাইনে ডিপ্লোমা করেন তিনি। পড়াশোনা শেষ করে বিভিন্ন সংস্থার পণ্যের ডিজাইন করতে শুরু করেন। এরপর ২০২১ সালে তাঁর ঝুলিতে আসে মাইক্রোসফটের চাকরি। ধীরে ধীরে ডিজাইন বিভাগের প্রধান হন। ২০১৯ সালে ইন্ডিয়া টুডে গ্রুপ তাঁকে ‘আনসাং হিরো’ হিসেবে চিহ্নিত করে।

নিজের চেষ্টা, পরিশ্রম, মেধায় আজ সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছেছেন শাহীনা। তিনি বলেন, জীবনে কিছু অর্জনের জন্য নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করা উচিত, যে কোন সময় এই দক্ষতাই গেম চেঞ্জার হিসাবে কাজ করবে।

বাংলাভিশন ডিজিটালকে শাহীনা আত্তারওয়ালা বলেন, তিনি এখন মেয়েদের মেন্টরিং করছেন, কিভাবে অভাব অনটনের মধ্যে থেকেও শিক্ষা, দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। এক্ষেত্রে সমাজের অনুশাসন একটি বড় বাধা হতে পারে। কিন্তু সবকিছুকে সামনে নিয়েই এগুতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

শাহীনা বলেন, আমি শুধু নিজের জন্য একটা ভালো অবস্থান তৈরি করেই থেমে যেতে চাই না। আমি একটি লিডারশিপ তৈরি করতে চাই যেখানে পৃথিবীব্যাপী ১০০ জন মেয়ে উদ্যোক্তা এবং সামাজিক কর্মী থাকবে যারা পৃথিবীব্যাপী বিভিন্ন বিষয়ে ভূমিকা রাখবে।

ভারতের বান্দ্রা রেলস্টেশনের কাছে দরগা গালি বস্তিতে থাকতেন তিনি

শাহীনা বলেন, ‘আমি সবচেয়ে আনন্দিত হই, যখন বস্তি বা গ্রাম থেকে আমাকে ফোন করে অনেকেই বলে, আমার মেয়েটা তোমার মতো হতে চায় অথবা আমি আমার মেয়েকে পড়াশোনা করাতে চাই, কি করতে হবে?’ 

‘আমাকে উদাহরণ হিসাবে ধরে, এখন অনেকেই তাদের মেয়েদের শুধু যে শিক্ষিতই করতে চান- তা নয়, তাদের কাজের স্বাধীনতাও দিচ্ছেন তারা।’ তিনি বলেন, আমার মেন্টরিং–এ একজন বর্তমানে ব্যাঙ্গালুরুতে ফরেনসিক সাইন্সে আছে, তার সমস্ত ফি আমরা গণচাঁদা থেকে সংগ্রহ করেছি।

‘যে সমস্ত মেয়েরা তাঁদের স্বপ্ন পূরণে দারিদ্রকে জয় করে এগিয়ে যাচ্ছে আমার এই সফলতা মূলত তাদের। আমি আশা করি অভিভাবকরা বুঝতে পারবেন যে তাদের সন্তানদের স্বপ্ন পূরণে বাধা অতিক্রম করতে তাদের সহযোগিতা প্রয়োজন’ – যোগ করেন শাহীনা।

বিভি/এসআই/এসডি

মন্তব্য করুন: