মুসলিম ছাত্রকে চড়থাপ্পড় মারার ঘটনায় ক্ষুব্ধ ভারতের সপ্রিম কোর্ট

ছবি: ভারতের সুপ্রিম কোর্ট
ভারতের উত্তর প্রদেশের এক স্কুলে মুসলমান ছাত্রকে ক্লাসে সহপাঠীদের দিয়ে চড়থাপ্পড় মারার ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। ওই ঘটনার ঢিলেঢালা তদন্তে রাজ্য সরকারের ভূমিকায় অখুশি সুপ্রিম কোর্ট সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) জানান, ঘটনাটি গুরুতর ও জঘন্য। চেতনাকে নাড়া দেওয়ার মতো। এর সঙ্গে মানুষের বাঁচার অধিকারের প্রশ্ন জড়িত।
কিছুদিন আগে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও-তে দেখা যায়, উত্তর প্রদেশের মুজাফফরনগরের এক স্কুলশিক্ষিকার নির্দেশে দ্বিতীয় শ্রেণির সাত বছরের এক ছাত্রকে তারই সহপাঠীরা একে একে চড়থাপ্পড় মেরে চলছে। যে ছেলেটি মার খাচ্ছে, সে মুসলমান, তাকে মারছে হিন্দু সহপাঠীরা।
অভিযোগ, মুসলমান ছেলেটি হোমওয়ার্ক করেনি। দেখা যায়, শিক্ষিকা ওই ছাত্রকে গালমন্দও করছেন। ধর্ম নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করছেন। ক্লাসের অন্য ছাত্রদের নির্দেশ দিচ্ছেন, একে একে ওই ছেলেটিকে চড়থাপ্পড় মারতে। জোরে জোরে মারার নির্দেশও দিতে দেখা যায়।
৬০ বছর বয়সী ওই শিক্ষিকা তার কাজের জন্য অনুতপ্তও ছিলেন না। সংবাদমাধ্যমে লেখা হয়েছিল, তিনি মোটেই অনুতপ্ত নন। লজ্জিতও নন। পরে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে তিনি এক ভিডিও বার্তায় ‘ভুল স্বীকার’ করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
মহাত্মা গান্ধীর প্রপৌত্র সমাজসেবী তুষার গান্ধী ওই ঘটনার পর সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা করেন। উত্তর প্রদেশ সরকার অবশ্য এই বিষয়ে বলে, ওই ঘটনার সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার কোনো সংযোগ নেই। সাম্প্রদায়িক কারণে ওই শিক্ষিকা এমন করেছেন বলে অভিযোগ করাটা অতিরঞ্জিত হবে।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অভয় এস ওকা ও পঙ্কজ মিত্তলের ডিভিশন বেঞ্চ আজ সোমবার এই মামলার শুনানিতে বলেন, প্রাথমিকভাবে দেখা যাচ্ছে রাজ্য সরকার শিক্ষার অধিকার রক্ষায় ব্যর্থ। ওই আইনে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের বিনা খরচে উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আইনে এ কথাও বলা হয়েছে, সেই শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে জাত, ধর্ম, বর্ণ বিশেষে কোনো রকমের বৈষম্য যেন না থাকে।
তদন্তের তদারকিতে জ্যেষ্ঠ আইপিএস কর্তাকে দায়িত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য সরকারকে বলেন, যে ছাত্রকে মারা হয়েছে, ও যারা তাকে মারধর করেছে, তাদের যথাযথ কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। সেই কাজ পেশাগত কাউন্সেলরদের দিয়ে করাতে হবে। মামলার পরবর্তী শুনানি ৩০ অক্টোবর। এ সময়ের মধ্যে রাজ্য সরকারকে প্রতিবেদন পেশ করতে হবে।
উল্লেখ্য, রাজ্য সরকারের তরফে যে এফআইআর করা হয়েছিলো, তাতে ওই ছাত্রটির বাবার অভিযোগ ছিল না। ওই শিক্ষার্থীর বাবা জানিয়েছিলেন, তার ছেলেকে মারধর করা হয়েছে ধর্মের কারণে।
বিভি/এমআর
মন্তব্য করুন: