বাংলাদেশ ইস্যুতে সরব হয়ে উঠছেন ভারতের নেতারা (ভিডিও)
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে ভারতের অযাচিত হস্তক্ষেপ নতুন কোনো বিষয় নয়। বাংলাদেশে কোনো ইস্যুর জন্ম নিলেই সেটি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে ভারত গমনের পর থেকেই প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যের ঝুলি খুলে বসেছেন ভারতের অনেক রাজনীতিক।
শুরুটা হয়েছিলো ভারতের গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে ভুলে ভরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিভিন্ন খবর প্রচারের মাধ্যমে। তবে সেসব করে খুব একটা সুবিধা করতে না পারায় এবার প্রতিক্রিয়া জানানোর অস্ত্র নিয়ে নেমেছেন অনেকে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলেও চালাচ্ছেন দেন দরবার।
শুরুর দিকে বাংলাদেশ নিয়ে এসব মন্তব্য ছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ কেন্দ্রিক। তবে ধীরে ধীরে এখন তা হয়ে উঠছে ভারতের জাতীয় রাজনীতির অংশ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পর এখন একে একে বাংলাদেশের দিকে মন্তব্যের তীর ছুড়তে শুরু করেছেন অনেকেই।
বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায় বর্তমানে নিজেদের পরিচয় নিয়ে বিপদে আছে বলে মনে করেন ভারতের উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। হিন্দুদের ওপর নৃশংসতা হচ্ছে বলেও ধারণা তার। অভিযোগ করেছেন, সবকিছু দেখেও বিভিন্ন দেশের তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা নীরব রয়েছেন। বাংলাদেশে হিন্দুদের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে আদিত্যনাথ বলেন, ‘সিন্ধু ছিল হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য। কেন এটিকে পাকিস্তানে যেতে দেওয়া হলো? ১৯৪৭ সালে বাংলাদেশে ২২ শতাংশ হিন্দু ছিল। আজ এই সংখ্যা ৭-৮ ভাগে নেমে এসেছে। অর্থাৎ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেই অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠারই ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন সন্ন্যাসী থেকে মূখ্যমন্ত্রী বনে যাওয়া কট্টর এই হিন্দুত্ববাদী নেতা।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে সামরিক সংকটে রূপ দেওয়ার চেষ্টাও চালাচ্ছেন কেউ কেউ। বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নৃশংস হামলা বন্ধে নরেন্দ্র মোদিকে ‘সামরিক পদক্ষেপ’ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কর্ণাটক রাজ্যের বিধায়ক রিজওয়ান আরশাদ। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মাটিতে ইন্দিরা গান্ধী যেভাবে সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, নরেন্দ্র মোদিকেও সেই পথে হাটার পরামর্শ দেন তিনি।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টায় আছেন ভারতীয়দের অনেকে। বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের প্রতিক্রিয়া দাবি করেছেন হাউজ অব লর্ডসের সদস্য সন্দ্বীপ ভার্মা। কিয়ার স্টারমারকে পাঠানো এক চিঠিতে তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর ‘অবর্ণনীয় সহিংসতা’ চালানো হচ্ছে। ধর্মীয় উপাসনালয়, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীকে অবিলম্বে এই অপরাধের নিন্দা জানানোর আহ্বান জানান তিনি।
এরই মধ্যে ভারতের এসব অপ-তৎপরতার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ. রহমানকে রিমান্ডে নেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আদালতের আচরণ নিয়েও প্রশ্ন তুলেন তিনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত নিজেই এখন অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, পররাষ্ট্রনীতিসহ একটি আঞ্চলিক সংকটের মুখোমুখি। তাই অতি দ্রুত বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারতের প্রভাব বিস্তারকে হ্রাস করতে হবে। এছাড়া বিএনপি ও ইসলামপন্থী মিত্ররা ক্ষমতায় ফিরে এলে ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কেমন হবে সেটি নিয়ে এখন থেকেই হোমওয়ার্ক শুরু করতে হবে।
বিভি/এমএফআর
মন্তব্য করুন: