বাংলাদেশে কর্মকর্তাদের পদত্যাগ, ভারতীয় মিডিয়ার অপপ্রচার (ভিডিও)
মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি। মুখে মুখে প্রচলিত এই প্রবাদের বাস্তব প্রয়োগে এখন ব্যস্ত হয়ে উঠেছে ভারত। কোনো ভাবেই কমানো যাচ্ছে না বাংলাদেশ নিয়ে প্রতিবেশী এই দেশের মাথাব্যাথা। দেশটির কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও গণমাধ্যম বাংলাদেশের নতুন সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমকে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টায় আছে।
ক্ষমতার পালাবদলের জেরে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এখন চলছে পদত্যাগের হিরিক। প্রশাসন, পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা ব্যাংক খাত- সব জায়গাতেই স্বেচ্ছায় চেয়ার ছেড়ে দিচ্ছেন অনেকে। অনেকের বিরুদ্ধে হচ্ছে মামলা, লম্বা হচ্ছে দুর্নীতির অভিযোগের তালিকা।
কিন্তু এই ইস্যুকেও ভিন্ন ভাবে উপস্থাপনের চেষ্টায় আছে ভারতের কিছু গণমাধ্যম। বাংলাদেশে কর্তব্যরত হিন্দু কর্মকর্তাদের জোর করে পদত্যাগ করানো হচ্ছে দাবী করে সম্প্রতি সংবাদ প্রকাশ করে দ্যা টাইমস অফ ইন্ডিয়া। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর হামলার পর এখন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হিন্দু জনগোষ্ঠী। হিন্দু ধর্মালম্বী হওয়ায় তাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে জোর করে পদত্যাগ করানো হচ্ছে।
বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাসগুপ্ত টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে বলেন, তিনি ১০-১২ জন সংখ্যালঘু কর্মকর্তার জোরপূর্বক পদত্যাগের দাবি পেয়েছেন। তবে যারা পদত্যাগ করছেন তারা যে সরকার ঘনিষ্ঠ হিসেবে কুখ্যাতি কামিয়েছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে যে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ জমেছে সে বিষয়ে কিছুই বলেননি তিনি।
মৌলবাদী শিক্ষার্থীরা জোর করে হিন্দু শিক্ষিকাকে পদত্যাগ করাচ্ছেন দাবি করে সংবাদ প্রকাশ করেছে ভারতের আরেক গণমাধ্যম হিন্দু পোস্ট। প্রতিবেদনে বলা হয়, যশোর নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইনচার্জ খুকু রাণী বিশ্বাসকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তাকে পদত্যাগ করানো হয়েছে এটি সত্য। কিন্তু এর জন্য মোটেও তার ধর্মীয় পরিচয় দায়ী নয়। জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় রাজনৈতিক বিবেচনায় যশোর নার্সিং ও মিড ওয়াইফাই ইনস্টিটিউটের ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন খুকু রানী বিশ্বাস। এরপর তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে লাগামহীন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
এমনকি প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর মাসিক বৃত্তির টাকা কেটে রাখার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কিন্তু এসবের কিছুই উল্লেখ করা হয়নি হিন্দু পোস্টের সেই প্রতিবেদনে। উপরন্তু হিন্দুদের জোরপূর্বক পদত্যাগের এমন ঘটনা আরও অনেক ঘটছে বলে দাবি করা হয়। এভাবেই আরও অনেক ঘটনাকে সংখ্যালঘু ট্যাগ দিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে ভারতের বেশ কিছু গণমাধ্যম। যদিও বাস্তবতা হলো এর প্রায় সবগুলোই ছিলো সাজানো এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর এমন নৈতিকতা বিবর্জিত সংবাদ প্রকাশকে সমালোচনা করেছে বৃটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। সম্প্রতি বিবিসির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, হিন্দুদের উপর হামলার বিষয়ে ভারতের মিডিয়াগুলো যেসব সংবাদ প্রকাশ করছে তার বেশিরভাগই মিথ্যা। প্রতিবেদনটিতে আলাদা ভাবে বেশ কয়েকটি গুজবকে খোলাসা করা হয়। কিন্তু এরপর ও থামেনি বাংলাদেশ নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর অপপ্রচারের প্রয়াস। যা প্রশ্ন জাগাচ্ছে, আসলেই কি এসব সংবাদ নাকি সংবাদের আড়ালে এজেন্ডা বাস্তবায়নের অপ প্রয়াস।
বিভি/এমএফআর
মন্তব্য করুন: