ভারতে শেখ হাসিনার অবস্থান কি প্রতিবিপ্লবের বার্তা দিচ্ছে? (ভিডিও)
বাংলাদেশ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনা তার পরম মিত্র দেশ ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী হাসিনার যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়ের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। তাই সম্ভবত তিনি অদূর ভবিষ্যতে ভারতেই থাকতে বাধ্য হবেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ভারতে শেখ হাসিনার এমন অবস্থান বাংলাদেশ ও ভারতের স্বিপাক্ষিক রাজনীতিকে কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে?
সম্প্রতি হাসিনার ভারতে অবস্থান ও ভারতের রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এশিয়ান টাইমস। যেখানে বলা হয়, হাসিনা তার দীর্ঘ স্বৈরতান্ত্রিক শ্বাসন টিকিয়ে রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় এখন প্রতিবিল্পবের কৌশল নিয়েই আগাচ্ছেন।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, হাসিনার দৃষ্টিভঙ্গি এখনও ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি এবং তার হিন্দুত্ববাদী সমর্থকদের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। তিনি যদি পুনরায় ক্ষমতা দখল করতে পারেন তাহলে বাংলাদেশ সহ এই উপমহাদেশে ভারতের জন্য বৃহত্তর রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার আরও সহজ হবে। আর এজন্যই দিল্লি সরকার এখনো অন্য দিকে না ঝুকে, ধারাবাহিকভাবে হাসিনা এবং তার আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছে।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে নিজের ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে বিতর্কিত এক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসেন হাসিনা। সেসময় প্রধান বিরোধীদল বিএনপি নির্বাচন নিয়ে নানা অভিযোগ তুললেও ভারত সেটিকে আমলে নেয়নি। উল্টো সেই প্রতারণামূলক ভোটকে বৈধতা দেয়ার জন্য ভারত তাদের কৌশল ব্যবহারের চেষ্টা করে। এরপর ২০১৮ সালেও নজিরবীহিন প্রতারণামূলক নির্বাচন দিয়ে নিজেদের ক্ষমতা পোক্ত করেন হাসিনা।
নির্বাচনের পর জালিয়াতির অভিযোগে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিন্দার ঝড় উঠলেও বিজেপি নেতৃত্বাধীন ভারত সরকারই প্রথম হাসিনাকে অভিনন্দন জানায়। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে ২০২৪ সালের নির্বাচনেও। সেসময় ভারতের সাথে সম্পর্কের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে মোমেন। তিনি বলেছিলেন, আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আনতে ভারতকে অনুরোধ করা হয়েছে। যা আওয়ামী লীগ সরকারের ভারতের প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্যের প্রকাশ ঘটায়। বিপরীতে মোদি সরকারও আওয়ামী লীগের কাঁধে ভর করে আধিপত্যের নেশায় মত্ত হয়ে ওঠে।
সম্প্রতি হাসিনার ছেলে জয় বলেছেন, আগামী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপ দেবে ভারত। কেননা হাসিনার আকস্মিকভাবে ক্ষমতা থেকে ছিটকে পড়ায় ভারতীয় আধিপত্যবাদী রাজনীতি বড় একটি ধাক্কা খেয়েছে বলে মনে হচ্ছে। ফলে পুনরায় ক্ষমতায় আসীন হওয়া ছাড়া আওয়ামী লীগকে অন্য কোনো বিকল্প দিচ্ছে না ভারত।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ফ্যাকটরকে আওয়ামী লীগ হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়। কেননা ৫ আগস্টের পর ঘটে যাওয়া বিভিন্ন হামলাকে ভারতের বিজেপি-সংলগ্ন মিডিয়া একতরফা ভাবে হিন্দুদের উপর হামলা বলে অপপ্রচার করে। যার উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট থেকে মনোযোগ
অন্যদিকে সরিয়ে নেয়া।
শেখ হাসিনা দিল্লির একজন কট্টর সমর্থক যা এখন আনুগত্যের চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। এমন অবস্থায় বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের অবস্থান কেমন হবে তার উপরই নির্ভর করছে হাসিনার ভবিষ্যৎ। এক্ষেত্রে ভারতের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় আরেকটি প্রতিবিপ্লব ঘটিয়ে বাংলাদেশে আবারো ক্ষমতা কুক্ষিগত করার দিকেই হয়ত বেশি জোর দিচ্ছেন হাসিনা।
বিভি/এমএফআর
মন্তব্য করুন: