পাকিস্তান–বাংলাদেশ সম্পর্কে নয়া মোড়ের ইঙ্গিত (ভিডিও)
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থনে ক্ষমতাচ্যূত হওয়া শেখ হাসিনার গত ১৫ বছরের শাসনামলে কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছিলো বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক। তবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক মেরামতে এখন নীরবে কাজ করছে ঢাকা ও ইসলামাবাদ। এর মধ্য দিয়েই পাওয়া যাচ্ছে পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্কে নতুন মোড়ের ইঙ্গিত।
সম্প্রতি পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের এক প্রতিবেদনে বলা হয় ইসলামাবাদের জন্য ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের দুয়ার এখন খোলা। গত কয়েক সপ্তাহে পাকিস্তানি কূটনীতিক এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্যদের মধ্যে বেশ কয়েকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে এরই মধ্যে টেলিফোনে আলাপ হয়েছে। যোগাযোগের এমন ধারাবাহিকতা দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার আশা দেখাচ্ছে।
সম্পর্ক সংশোধনের চলমান প্রচেষ্টায় গতি আনতে চলতি মাসের শেষ দিকে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন শাহবাজ শরিফ। এই দুই নেতার মধ্যে যদি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে গত কয়েক দশকের মধ্যে দুই দেশের মধ্যকার প্রথম উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হবে এটি। যদিও এই একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিলো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও। তবে দিল্লির তরফ থেকে কোনো ইতিবাচক বার্তা না আসায় ইউনুস-মোদি বৈঠকের সম্ভাবনাও ক্ষীণ হয়ে যায়।
সম্পর্ক জোরদারে এরই মধ্যে ঢাকায় পাকিস্তানি হাইকমিশনার এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার মধ্যে একটি বৈঠক হয়েছে। সেখানে উভয় পক্ষ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রক্রিয়া পুনঃস্থাপনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। দুই দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য দ্বিপক্ষীয় প্রক্রিয়া রয়েছে। দুই দেশের ব্যবসা ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার জন্য শীর্ষ ফোরাম হলো যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন। তবে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে এই কমিশনের কাজ কার্যত বন্ধ হয়ে পড়ে। এই যৌথ কমিশনের সর্বশেষ বৈঠক হয়েছিল ২০০৭ সালে। তাই এখন যৌথ কমিশন পুনরায় সচল করতে চাইছে পাকিস্তান। এরই মধ্যে এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক অনুরোধও জানিয়েছেন পাকিস্তানের হাইকমিশনার।
একপ্রেস ট্রিবিউনের সেই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শেখ হাসিনার আমলে কোনো সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে পাকিস্তানি কূটনীতিকদের দেখা করাটা ছিল কঠিন কাজ। তবে এখন বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তা ধীরে ধীরে সহজ হয়ে উঠছে।
দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে ভারত এতদিন আধিপত্যের রাজনীতি করে আসলেও এখন প্রেক্ষাপট অনেকটাই ভিন্ন। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সাথে সুসম্পর্ক রাখতে না পেরে এখন অনেকটাই একঘরে ভারত। বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তনের যৌথ রাজনৈতিক শক্তি অচিরেই কমিয়ে ফেলতে পারে এই অঞ্চলে ভারতের প্রভাব। তবে বর্তমানে বাংলাদেশে পাকিস্তান সম্পর্কে অনেক ইতিবাচক মনোভাব থাকলেও ১৯৭১-এর ইতিহাসকে পেছনে ফেলে দু দেশের সম্পর্ক কতটুকু আগাতে পারবে সেটিই এখন দেখার বিষয়।
বিভি/এমএফআর
মন্তব্য করুন: