কিভাবে কাজ করে বিধ্বংসী ‘পেজার’ ডিভাইস? (ভিডিও)
অন্য স্বাভাবিক দিনের মতই প্রাত্যহিক কাজে ব্যস্ত ছিলেন লেবাননের সাধারণ মানুষ। নির্বিঘ্নেই চলছিলো জনজীবন। কিন্তু হঠাতই এক বিপর্যয়। একযোগে পুরো লেবানন জুড়ে হতে থাকলো একের পর এক বিস্ফোরণ। যেই বিস্ফোরণের নজিরবিহীন আলামত দেখে হতভম্ব পুরো বিশ্ব।
একসঙ্গে কয়েক হাজার তারবিহীন যোগাযোগের ডিভাইসের বিস্ফোরণের শিকার হয়েছে লেবানন। ছোট্ট একটি ডিভাইস পেজার মুহুর্তেই কেড়ে নিলো নয়টি তাজা প্রাণ, আহত করলো তিন হাজারেরও বেশি মানুষকে।
দখলদার ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ অত্যন্ত সূক্ষ্ম পরিকল্পনার মাধ্যমে এই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বলে জানিয়েছে স্কাই নিউজ অ্যারাবিয়া। কিন্তু প্রশ্ন হলো কি এই পেজার ডিভাইস? আর কিভাবেই বা কাজ করে এটি?
পেজার মূলত যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত একটি যন্ত্র। নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য ডিভাইসগুলো ব্যবহার করে লেবাননের শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। যেসব পেজারে বিস্ফোরণ ঘটেছে সেগুলো পাঁচ মাস আগে লেবাননে যায়। তবে লেবাননে যাওয়ার আগে এ ডিভাইসগুলো ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হাতে এসেছিল। আর বিপত্তিটা ঘটে সেখানেই।
অতি সূক্ষ চালাকির মাধ্যমে পেজার ডিভাইস নিয়ে বিধ্বংসী এক পরিকল্পনা সাজায় ইসরাইলের গোয়েন্দা বাহিনী। তারা ডিভাইসগুলোর ব্যাটারির উপর অত্যন্ত উচ্চ বিস্ফোরক যন্ত্র পিইটিএন স্থাপন করে দেয়। এরপর দূর থেকে ব্যাটারির তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে ডিভাইসগুলোতে গতকাল মঙ্গলবার একযোগে সারাদেশে বিস্ফোরণ ঘটায়।
কাতারের সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে লেবানের একটি নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, ডিভাইসগুলোতে যে বিস্ফোরক স্থাপন করা হয়েছে সেগুলোর ওজন ২০ গ্রামের মতো। আর যেসব পেজার বিস্ফোরিত হয়েছে সেগুলো পাঁচ মাস আগে লেবাননে যায়। দূর থেকে কীভাবে এসব ডিভাইসে বিস্ফোরণ ঘটানো হলো সেটি তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি। তবে ঠিক কতটি পেজার বিস্ফোরিত হয়েছে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে এখনো কেউ দিতে পারেনি।
ভয়াবহ এই হামলার জন্য চিরশত্রু ইসরায়েলকে দায়ী করেছে হিজবুল্লাহ। এই হামলার জন্য তাদের সমুচিত জবাব দেয়া হবে বলেও জানিয়েছে ইরানপন্থী গোষ্ঠীটি। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। লেবাননের এই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র কোনোভাবেই জড়িত নয় বলে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর। পাশপাশি সুষ্ঠ তদন্তের তথ্য সংগ্রহ চলছে বলেও জানিয়েছে দেশটি।
এই বিস্ফোরণের ঘটনার পর লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জরুরি ভিত্তিতে বিপুলসংখ্যক আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সব চিকিৎসাকর্মীর ছুটি বাতিল করেছে এবং তাদের নিজ নিজ হাসপাতালে যেতে বলেছে। একই সঙ্গে তাদের পেজার ব্যবহার থেকে দূরে থাকতে বলেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৮ বছর বয়সী এক মেয়ে শিশুও রয়েছে। এছাড়া আহতদের মধ্যে ২০০ জনের বেশির অবস্থা গুরুতর। হতাহতের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য সারা দেশে ৫০ টিরও বেশি অ্যাম্বুলেন্স এবং ৩০০ স্বাস্থ্যকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে।
বিভি/এমএফআর
মন্তব্য করুন: