মুসলিম বিশ্বকে নেতৃত্ব শূন্য করতে চাইছে ইসরাইল? (ভিডিও)
সময়টা এখন যেন কারও অনুকূলে নেই। থাকবেই বা কী করে! একদিকে মুসলিম বিশ্বে ঐক্য একপ্রকার অধরা। অন্যদিকে ইসরাইল ও পশ্চিমা শক্তির তাণ্ডবে এখন নেতৃত্বশূন্য হওয়ার পথে গোটা মুসলিম বিশ্ব।
শুরুটা হয়েছিলো ২০২০ সালে ইরানের মেজর জেনারেল কাসেম সোলাইমানির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। এরপর চলতি বছরের এপ্রিলে ইসরাইলি বাহিনী হত্যা করে ইরানের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেজা জাহিদিকে। ১৯ মে রহস্যজনক বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন ইরানের সাবেক রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম রাইসি। তার মাত্র ১২ দিন পরই হত্যা করা হলো হামাসের সাবেক প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে। সেই শোক কাটিয়ে না উঠতেই ইসরাইলের বিমান হামলায় প্রাণ হারালেন হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ।
এভাবেই একের পর এক টার্গেট করে হত্যা করা হচ্ছে বিভিন্ন মুসলিম দেশ ও সামরিক গোষ্ঠীর নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের। শুধু শীর্ষ নেতা নয়, হত্যা করা হয়েছে অনেক সামরিক কমান্ডার ও কর্মকর্তাকেও। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি নেতাবিহীন এক মুসলিম বিশ্ব তৈরি করতে চাচ্ছে ইসরাইল ও এর মিত্ররা?
বর্তমান প্রেক্ষাপটে যদি প্রশ্ন রাখা হয়, মুসলিম বিশ্বের নেতা কে? এই প্রশ্নের উত্তর এক কথায় দেওয়া কঠিন। আর উত্তর এলেও তা হবে প্রশ্নবিদ্ধ। বিদ্যমান বাস্তবতায় মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্বের কথা বললে সৌদি আরব, ইরান ও তুরস্ক; সম্ভাব্য এই তিনটি দেশের নামই সামনে চলে আসে।
মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্বের জায়গায় অনেক দিন ধরেই একটা শূন্যতা বিরাজ করছে। পাশাপাশি নানাবিধ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে মুসলিম দেশগুলো। কিন্তু এই সংকট উত্তরণে সুন্নি রাষ্ট্র সৌদি আরব প্রত্যাশিত ভূমিকা পালন করতে পারেনি। নিতে পারেনি নেতৃত্বের আসন। বরং সৌদি আরবের আধিপত্যশীল আচরণে সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। ইয়েমেনে দিনের পর দিন বোমা ফেলছে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট। ইতিমধ্যে দেশটিতে বহু মানুষের প্রাণ গেছে। তবে সমালোচনা সত্ত্বেও থামার কোনো লক্ষণ নেই রিয়াদের।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইরান আলোচিত নাম। মুসলিম বিশ্বে ইরানের তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক অবরোধে ইরান জর্জরিত। দেশটির অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়েছে। পশ্চিমা চাপ মোকাবিলার পাশাপাশি আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ রিয়াদকেও সামাল দিতে তেহরানকে ব্যতিব্যস্ত থাকতে হয়। তবে এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও মুসলিম বিশ্বের নানান সংকটে তেহরানের কণ্ঠ উচ্চকিত। কিন্তু শিয়া রাষ্ট্র হওয়ায় মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্বের জায়গাটি নিজের করে নিতে পারছে না ইরান। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ইরান ও এর মদদপুষ্ট বিভিন্ন গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতাদের হত্যার ঘটনায় এখন অনেকটাই কোণ্ঠাসা দেশটি।
সামরিক দিক দিয়ে বিবেচনা করলে এই মুহূর্তে মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ তুরস্ক। তারা সামরিক জোট ন্যাটোরও সদস্য। রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের আমলে তুরস্কের ভাবমূর্তির বদল ঘটছে। এরদোয়ানের জোর প্রচেষ্টায় ইতিমধ্যে ইসলামিক বিশ্বে একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে আঙ্কারা। ফলে বলাই যায় এখন এরদোয়ানের সামনেই সুবর্ণ সুযোগ।
মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্বের জায়গায় যে শূন্যতা বিরাজ করছে সেটি সহসাই কেটে উঠবে কিনা তা বলার উপায় নেই। তবে ইসরাইল ও এর মিত্র দেশগুলো মুসলিম নেতাদের হত্যার এই মিশন জারি রাখলে যে গোটা মুসলিম বিশ্ব আরো গভীর সংকটে পড়বে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।
বিভি/এমএফআর
মন্তব্য করুন: