বাংলাদেশের হাই কমিশনে হামলার ঘটনায় কেন নিশ্চুপ পশ্চিমারা? (ভিডিও)
গত কয়েক সপ্তাহ থেকে বেড়েই চলছে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উত্তেজনা। চলমান অস্থিরতা নতুন মাত্রা পায় গেলো সোমবার। এদিন ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনে চালানো হয় ভাঙচুর, টেনে হিঁচড়ে ছিঁড়ে আগুন দেয়া হয় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকায়। যার নেপথ্যে ছিলো ‘হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি' নামের একটি উগ্রবাদী সংগঠন।
এরপর নিরাপত্তাজনিত কারণে বন্ধ করে দেয়া হয় আগরতলার বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে কনস্যুলার সেবা। ৩ পুলিশ কর্মকর্তা বরখাস্তসহ আটক হন ৭ জন। এ ঘটনায় ভারত তাৎক্ষণিক দুঃখ প্রকাশ করলেও ঘটনাটি কূটনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। তবে এখন পর্যন্ত ন্যক্কারজনক এই ঘটনায় নিন্দা বা প্রতিবাদ জানায়নি কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা, প্রভাবশালী দেশ ও জোটগুলো।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় সংস্থা হওয়া সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত এই ইস্যুতে কোনো বিবৃতি দেয়নি জাতিসংঘ। মানবাধিকার নিয়ে বিভিন্ন সময় সোচ্চার থাকলেও ভারত ইস্যু যেন চোখেই পড়েনি সংস্থাটির। ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়ায় এখনো কোনো বক্তব্য দেয়নি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রবিষয়ক দপ্তর। এছাড়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের ইস্যুতে বিশ্বব্যাপী সরব থাকলেও এই ঘটনায় একেবারেই নীরব ইউরোপীয় ইউনিয়ন। মানবাধিকার, কূটনৈতিক সুরক্ষা নিয়ে সরব হলেও এই ঘটনায় পশ্চিমা দেশগুলোর নীরবতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এমনকি ভারতীয় গণমাধ্যমের লাগাতার মিথ্যাচার নিয়েও নীরব ভূমিকা পালন করছে তারা।
আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনের ঘটনায় চুপ থাকলেও বাংলাদেশে তথাকথিত সংখ্যালঘু অত্যাচার নিয়ে যথেষ্ট সরব পশ্চিমারা। হামলা সহিংসতা ঘটছে ভারতে অথচ নিজ দেশের নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাজ্য। ‘সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা’র কথা তুলে ধরে বাংলাদেশের কয়েকটি এলাকায় ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস। এছাড়াও বিতর্কিত হিন্দু পণ্ডিত চিন্ময় দাসের মুক্তি ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার দাবিতে প্রতিবাদ মিছিল হয় যুক্তরাজ্য, কানাডা সহ বিভিন্ন দেশে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মানবাধিকার লঙ্ঘন, নারীর অধিকার এবং গণতন্ত্র নিয়ে সবসময় সরব থাকা পশ্চিমা দেশগুলোর এমন নীরবতা দুঃখজনক। প্রতিনিয়ত চীন, রাশিয়া এবং ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও ভারতের ঔদ্ধত্যপূর্ণ এবং বিমাতাসূলভ আচরণ চোখে পড়ছে না তাদের।
যদিও এই হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে দেখছেন অনেকে। তবে নিশ্চুপ থাকা সংস্থা ও দেশগুলো তাদের অবস্থান স্পষ্ট না করলে এটি কূটনৈতিক অঙ্গনে তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন তুলে ধরবে। যা ভবিষ্যতে খুলে দিতে পারে পশ্চিমা এসব দেশের দ্বৈতনীতির মুখোশ।
বিভি/এমএফআর
মন্তব্য করুন: