এরদোয়ানের সঙ্গে শীর্ষ পিকেকে নেতা আবদুল্লাহর সমঝোতার ইঙ্গিত
ফিকে হয়ে যাচ্ছে কুর্দিদের স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন? (ভিডিও)
কিছুদিন আগেই কুর্দি যোদ্ধাদের শেষ পরিণতির বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। তিনি বলেছিলেন, কুর্দি যোদ্ধারা আত্মসমর্পণ না করলে তাদের জীবন্ত কবর দেওয়া হবে। এরই মাঝে আসলো নতুন খবর, পাওয়া গেলো তুরস্কে ৪০ বছরের পুরনো কুর্দি বিদ্রোহের অবসানের ইঙ্গিত।
তুরস্কের কারাগারে বন্দি নিষিদ্ধ ঘোষিত কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি পিকে্কের শীর্ষ নেতা আবদুল্লাহ ওচালান ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি এরদোয়ান সরকারের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে পিকেকে বিদ্রোহীদের অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান জানাতে পারেন। বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৮ ডিসেম্বর কুর্দিপন্থী পিপলস ইকুয়ালিটি অ্যান্ড ডেমোক্রেসি পার্টির দুই এমপি কারাগারে আবদুল্লাহ ওচালানের সাথে এই বিষয়ে আলোচনা করেছেন। প্রায় এক দশকের মধ্যে এটি প্রথম আলোচনা।
চলতি মাসে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সরকারের পতনের পর তুর্কিপন্থি যোদ্ধা ও মিলিশিয়া গোষ্ঠীর মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। যার প্রেক্ষিতে এরদোয়ান বলেন, সিরিয়ায় থাকা কুর্দি যোদ্ধাদের হয় অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। যদি তারা তা না করে তাহলে তাদের জীবন্ত কবরস্ত করা হবে। শুধু তুরস্কের অভ্যন্তরেই নয়, আশপাশের অন্য কোনো রাষ্ট্রেও কুর্দিরা যাতে কোনোভাবেই স্বাধীনতার স্বাদ না পায়, সে ব্যাপারে সদা সতর্ক তুর্কি সরকার। কারণ, এমনটি ঘটলে তার ঢেউ তুরস্কের কুর্দি অধ্যুষিত অঞ্চলেও আছড়ে পড়তে পারে। এতে করে কৌশলগত প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ তুরস্কের কুর্দি অধ্যুষিত এলাকা হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর এ কারণেই তুর্কি সীমান্তবর্তী সিরিয়ার কুর্দিদের নিয়ে তুরস্কের এত ভয়।
ইতিহাসের এক ভাগ্য বিড়ম্বিত জাতি এই কুর্দি। ইরান, ইরাক, সিরিয়া ও তুরস্কজুড়ে তাদের বিচরণ। ১৯২৩ সাল থেকে স্বাধীন কুর্দি প্রতিষ্ঠার দাবিতে কুর্দিরা বেশ কয়েকটি বিদ্রোহ করে। কিন্তু তুর্কি শাসকরা তা কঠোর হাতে দমন করে। ১৯৭৮ সালে কুর্দি নেতা আবদুল্লাহ ওকালান কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি গঠন করে তুরস্কের অভ্যন্তরেই এক স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ে তোলার লক্ষ্যে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করেন।
তুরস্কে আশ্রিত সিরীয় শরণার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩৬ লাখ। এরদোয়ানের আশঙ্কা ছিল, সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে স্বাধীন কুর্দি রাষ্ট্রের অভ্যুদয় তুরস্কের সীমান্তবর্তী এলাকার কুর্দি বাসিন্দাদের মাঝে স্বাধীনতার স্পৃহা পুনরায় জাগ্রত করতে পারে। শরণার্থীদের সিরিয়ায় ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কোনো উদ্যোগ না দেখে এবং যুক্তরাষ্ট্রের অভিসন্ধি আঁচ করতে পেরে এরদোয়ান ২০১৭, ১৮ এবং ১৯ সালে পরপর তিনটি সামরিক অভিযান পরিচালনা করে কুর্দিদের নিজ সীমান্ত থেকে বিতাড়িত করেন।
তুরস্ক ও তার পশ্চিমা মিত্ররা পিকেকেকে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে। এখন পর্যন্ত দীর্ঘ এই সংঘাতে ৪০ হাজারের বেশি লোক নিহত হয়েছে। এ অঞ্চলের কুর্দিদের ভবিষ্যৎ কী? আগামীতে কি ঘটবে তাদের ভাগ্যে? এসব প্রশ্নের আপাতত কোনো উত্তর নেই। তবে বিশ্লেষকের মতে, দৈবিক কিছু না ঘটলে কুর্দিদের স্বাধীনতা লাভের আশা একেবারে নেই বললেই চলে।
বিভি/এমএফআর
মন্তব্য করুন: