‘রেডি অপরচুনিটি’ খ্যাত ‘ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট’ কী? (ভিডিও)
আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ‘ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট’-এ যোগদানের আমন্ত্রন পেয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটি সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তবে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস বলছে, ‘ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট’ নামে কোনো অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত নয়। ফলে প্রশ্ন উঠছে কি এই ‘ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট’ অনুষ্ঠান? এর আয়োজক কারা এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এর গুরুত্বই বা কতটুকু?
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট অনুষ্ঠানটি আগামী ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত হবে। যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ততার কথা নাকচ করলেও ৭০ বছরের পুরোনো এই ঐতিহ্যের সাথে জড়িয়ে আছে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্টদের নাম। এমনকি মার্কিন এই বার্ষিক অনুষ্ঠানটি প্রথমে ‘প্রেসিডেন্সিয়াল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট’ নামেই পরিচিত ছিল। পরে ১৯৭০ সালে এর নামকরণ হয় ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট। এই বার্ষিক ইভেন্টে প্রার্থনা, রাজনীতি এবং ব্যবসাসহ সম সাময়িক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসে। তাই এতে যোগদান মার্কিন প্রেসিডেন্টদের জন্য একটি প্রধান বিষয় হয়ে উঠেছে।
বাইবেলের জন ২১ অধ্যায়ের বিবরণ অনুযায়ী, যিশু তার কয়েকজন বন্ধুদের তিবেরিয়াস সাগরের তীরে সকালের খাবারের আমন্ত্রণ জানান। সেই ব্রেকফাস্টে তিনি ঐশ্বরিক শক্তিতে প্রচুর মাছ ধরেন। মানুষের একত্র হওয়া, একসঙ্গে খাবার খাওয়া, বন্ধুত্ব গড়া ও প্রার্থনার গুরুত্বের কথা মনে করিয়ে দেন তিনি। সেই ঘটনা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে ১৯৩৫ সালের এপ্রিল মাসে ওয়াশিংটনের সিয়াটলে ১৯ জন ব্যবসায়ী এক সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবিলায় একত্র হন। এরপর ধীরে ধীরে আরও অনেক ব্রেকফাস্ট দল গড়ে ওঠে। পরে মার্কিন কংগ্রেসের সিনেট এবং হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভেও এমন ব্রেকফাস্ট দল গঠন করা হয়। ১৯৫৩ সালে প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডুইট ডি. আইজেনহাওয়ার একটি ব্রেকফাস্ট সভায় অংশগ্রহণ করেন। এবং পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্টরাও তার পদাংক অনুসরণ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট দলের রাজনীতিবিদদের মধ্যে ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট নিয়ে বেশ অনীহা লক্ষ্য করা যায়। ২০১০ সালে ততকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানায় কংগ্রেস নেতাদের একাংশ। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর এই আয়োজন আবারও প্রাণ ফিরে পায়। এরপর ২০২৩ সালে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে এই আয়জনের প্রথা ভেঙ্গে দেয়ার আহ্বান জানায় সমকামীদের গ্রুপ সহ বিভিন্ন গোষ্ঠী। আগামী মেয়াদে ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও ক্ষমতা গ্রহণের সাথে ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট-এর তাতপর্য ও গভীরভাবে জড়িত বলে মনে করছেন অনেকে।
এই অনুষ্ঠানে ধর্মীয় নেতাদের পাশাপাশি উচ্চপদস্থ মার্কিন কর্মকর্তা ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিক ও জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব্দের অনেকেই এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন। এর আগে এই আয়োজনে এসেছিলেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভূট্টো, তিব্বতের ধর্মীয় নেতা দালাই লামা, যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ও মাদার তেরেসা সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।
২০১৭ সালের ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট অনুষ্ঠানে ১৪০ টি দেশের প্রায় চার হাজার আমন্ত্রিত অতিথি উপস্থিত ছিলেন। যাদের মধ্যে সাড়ে তিন হাজার অংশগ্রহণকারীই ছিলেন বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। ফলে এই আয়োজনকে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য 'রেডি অপরচুনিটি' হিসেবেও উল্লেখ করেন অনেকে।
বিভি/এমএফআর
মন্তব্য করুন: