বন্ধুহীন ফিলিস্তিন, নিজ স্বার্থ নিয়েই ব্যস্ত আরব নেতারা (ভিডিও)
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ ছাড়িয়ে গেছে নৃশংসতার সর্বোচ্চ মাত্রা। নির্বিচারে গুলি ও বোমাবর্ষণের পর এবার হাসপাতাল ও স্কুলসহ বিভিন্ন স্থান আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গাজাকে খালি করতে ইসরাইলি সেনারা বুলডোজার এবং খননকারী যন্ত্রের পাশাপাশি মাইন এবং বিস্ফোরক ব্যবহার করে হাজার হাজার ভবন গুড়িয়ে দিচ্ছে। ধ্বংস করা হচ্ছে কৃষি ও শিল্প এলাকা।
ইতিহাসের জঘন্যতম এই বর্বরতার বিরুদ্ধ প্রতিবাদ জানাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সচেতন নাগরিকেরা। নিপীড়িত গাজাবাসীর সমর্থনে ৭ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী পালিত হয়েছে 'নো ওয়ার্ক, নো স্কুল' কর্মসুচি। তবে গাজার জনগণের এই আর্তনাদ যেন থোরাই কেয়ার করছেন আরব বিশ্বের প্রভাবশালী নেতারা। সামরিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী এই আরব দেশগুলো ফিলিস্তিন নিয়ে পুরোপুরি নির্বিকার। ফিলিস্তিনিরা যে আরব নেতাদের দিকে তাকিয়ে ছিলেন, বিপদের সময় মুখ ফিরে তাকালেননা তাদের কেউই।
ইসরাইল বাহিনী যখন গাজায় গণহত্যামূলক বোমাবর্ষণ এবং দখলদারিত্ব চালাচ্ছে, ঠিক সেই সময়েই ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আতিথেয়তা দিয়ে বরণ করে নিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। রোববার আবুধাবিতে ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সা’আরকে স্বাগত জানান আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। যেখানে তাদের আলোচনার মূল বিষয় ছিলো ইসরাইল ও আমিরাতের মধ্যে ‘দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক’ জোরদার করা। এই আমিরাতেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক ঘাঁটি। দেশটি থেকে কোটি কোটি ডলার খরচ করে অস্ত্রশস্ত্রও কেনে আমিরাত।
আমিরাতের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত সৌদি আরব। ইসলাম ধর্মের প্রাণকেন্দ্র সৌদি আরবে শাসনক্ষমতা দেখাভাল করেন এমবিএস খ্যাত বাদশাহ সালমান। যুবরাজ ঘোষিত হওয়ার পর এমবিএস ইসরায়েলের সঙ্গে খাতির বাড়িয়ে দেন। যার ফলে সৌদি আরবের সঙ্গে গত কয়েক বছরে গোপন সম্পর্ক গড়ে তুলেছে ইসরাইল। ২০১৭ সালে তিনি গোপনে ইসরাইল সফর করেন। যুক্তরাষ্ট্রের কট্টরপন্থী ইহুদিদের মতামতকে তোষামোদি করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা নিয়ে তিনি অবজ্ঞাসূচক মন্তব্য করে সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছিলেন। ফিলিস্তিনের জন্য লড়াই তো দূরে থাক, যুদ্ধ চলাকালীন সৌদি আরবে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে কোনো বিক্ষোভের অনুমতিই দেওয়া হয়নি।
ফিলস্তিনের প্রতিবেশী আরেক মুসলিম রাষ্ট্র মিশর। দুই দেশের মাঝে রয়েছে দীর্ঘ সীমান্ত এলাকা। তবে এই সীমান্তের বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে বসানো হয়েছে ৭ লেয়ারের তার ও শক্ত দেয়াল। বাস্তুচ্যুত ফিলস্তিনিরা যাতে কোনভাবেই মিশরে প্রবেশ না করতে পারে সেজন্য নেওয়া হয়েছে এই ব্যবস্থা। শুধু তাই নয়, কেউ সীমানা পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে সরাসরি গুলির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জটিল সমীকরণে চলে মধ্যস্থতাকারীর তকমা লাগিয়েছে কাতার। এই দেশেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি সামরিক ঘাঁটি। আবার ইসরাইলের সঙ্গেও দেশটির ভালো সম্পর্ক রয়েছে। ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের প্রতি সহমর্মী হলেও কাতার সব সময়ই দ্বৈত ভূমিকা পালন করে এসেছে।
কে হবে মুসলিম বিশ্বের নেতা, গত কয়েক দশক ধরে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন বিশ্বের কোটি কোটি মুসলিম। বিশ্লেষকদের মতে, যে দেশ গাজা সংকটের সমাধান করতে পারবে, তারাই মুসলিম বিশ্বের নেতা হবে। তবে চোখের সামনে হওয়া এই ধংসযজ্ঞ বন্ধে কোন দেশই অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। অভিভাবকহীন হয়ে পড়া এই মুসলিম উম্মাহর হাল কে ধরবে, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।
বিভি/এমএফআর
মন্তব্য করুন: