শিমলা চুক্তি: বাংলাদেশের রক্তে কেনা স্বাধীনতাকে পুঁজি করে নিজ স্বার্থ হাসিল ভারতের!

ছবি: সংগৃহীত
জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের উপর বন্দুকধারীদের হামলার পর পাকিস্তানকে এর জন্য দায়ী করেছে ভারত। এরপরই ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর জবাবে, ২৪ এপ্রিল পাকিস্তানও ভারতের বিরুদ্ধে ৮টি পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এর একটি হলো ঐতিহাসিক শিমলা চুক্তি বাতিল করা, যা পাকিস্তান সরকার ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে নিয়েছে। খবরটি জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডন।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর (পিএমও) থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, দেশটি ১৯৭২ সালের ঐতিহাসিক শিমলা চুক্তির কার্যকারিতা আপাতত স্থগিত রেখেছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যদি ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাস ছড়ানো, সীমান্ত অতিক্রম করে হত্যাকাণ্ড চালানো ও কাশ্মীর ইস্যুতে আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের প্রস্তাবনা লঙ্ঘনের মতো কার্যক্রম বন্ধ না করে, তাহলে পাকিস্তান ভারতের সাথে বিদ্যমান সব দ্বিপাক্ষিক চুক্তি, যার ভেতর শিমলা চুক্তিও রয়েছে, তা স্থগিত করতে বাধ্য হবে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয় ও স্বাধীনতা অর্জনের পর ভারত ও পাকিস্তানের ভেতর একটি শান্তিচুক্তি হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের পর ঢাকায় পাক-সেনা সদস্যরা আটক হয়। তবে, ভারত নিজেদের স্বার্থে প্রায় ৯৩ হাজার পাক-সেনা সদস্যদের মুক্তি দেওয়ার কথা বলে পাকিস্তানের সাথে সওদা করে।
১৯৭২ সালের ২ জুলাই ভারতের হিমাচল প্রদেশের শিমলা শহরে পাকিস্তানের সাথে একটি শান্তিচুক্তিতে সই করে ভারত। এটি শিমলা চুক্তি নামে পরিচিত। চুক্তিতে সই করেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জুলফিকার আলি ভুট্টো। এই চুক্তির ফলে ভারত ও পাকিস্তানের পারস্পরিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করা হয় ও সকল বিরোধ শান্তিপূর্ণ উপায়ে ও সংলাপ দ্বারা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। এই চুক্তির মূল উদ্দেশ্যই ছিল ভারত ও পাকিস্তানের যাবতীয় সংঘাত শেষ করা, সীমান্তে শান্তি স্থাপন করা ও দুই দেশের ভেতরকার পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও সম্প্রীতির সম্পর্ক গড়ে তোলা।
এছাড়া, এই চুক্তির আওতায় ভারত ও পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) নির্ধারণ করা। ভারত ও পাকিস্তান কাশ্মীর অঞ্চলে একটি নতুন ‘লাইন অব কন্ট্রোল’ বা নিয়ন্ত্রণ রেখা নির্ধারণ করে। এর শর্তাবলি কার্যকর হয় সেই বছরের ৪ আগস্ট থেকে।
শিমলা চুক্তির শর্তে বলা হয়, ভারত ও পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক সীমান্ত এলাকা থেকে তাদের সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করতে হবে। জম্মু ও কাশ্মীরে যে নিয়ন্ত্রণরেখা নির্ধারিত হয়েছে, উভয় দেশকেই সেটি মেনে চলতে হবে ও কোনও পক্ষ একতরফাভাবে এর পরিবর্তনের চেষ্টা করতে পারবে না, এমনকি মতবিরোধ থাকলেও না। এই সীমারেখা অতিক্রম করে হুমকি দেওয়া কিংবা বলপ্রয়োগ করার মতো পদক্ষেপ থেকেও দুই দেশকে বিরত থাকতে হবে। চুক্তি কার্যকর হওয়ার ৩০ দিনের ভেতর সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি সম্পন্ন করতে হবে।
তবে, এই চুক্তি স্থগিতের পরিণতি এখন এতটাই ভয়াবহ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যে ভারত হয়তো এটি কল্পনাও করতে পারছেনা। ভারতের তথাকথিত পানি অবরোধে হয়তো পাকিস্তানকে সম্পূর্ণভাবে শুকিয়ে ফেলবেনা, তবে পাকিস্তান যদি পাল্টা শিমলা চুক্তি স্থগিত করে, তাহলে এর সবচেয়ে বড় ধাক্কা ভারতকেই সামলাতে হতে পারে।
বিভি/আইজে
মন্তব্য করুন: