দালাই লামার উত্তরসূরির নির্বাচন ঘিরে চরমে চীন-ভারত সংঘাত (ভিডিও)
সারা বিশ্বের বৌদ্ধ পণ্ডিত ও ভিক্ষুরা ভারতের ধর্মশালা শহরে জড়ো হয়েছেন দালাই লামার ৯০তম জন্মদিন উদযাপনের জন্য। এই শহরটিই বর্তমানে নির্বাসিত তিব্বতি বৌদ্ধদের প্রধান কেন্দ্র। এই অনুষ্ঠানে দেওয়া এক বক্তব্যে দালাইলামা ১৩০ বছরেরও বেশি বাঁচার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। মৃত্যুর পর তিনি পুনর্জন্ম নিয়ে তিব্বতি বৌদ্ধধর্মের প্রধান হিসাবে আবার ফিরে আসবেন বলেও ভক্তদের আশ্বাস দিয়েছেন।
বর্তমান (১৪তম) দালাই লামার নাম তেনজিন গ্যাতসো। তিনি এরইমধ্যে নিশ্চিত করেছেন, তার মৃত্যুর পরেও একজন উত্তরসূরি থাকবেন, যিনি তিব্বতি বৌদ্ধদের আধ্যাত্মিক নেতৃত্বের দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন। তিব্বতি বৌদ্ধদের ঐতিহ্য অনুযায়ী, বর্তমান দালাই লামার মৃত্যুর পর বহু অনুসন্ধান ও দীর্ঘ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নতুন দালাই লামাকে খুঁজে বের করা হয়। কিন্তু এবার যদি ১৪তম দালাই লামা জীবিত অবস্থায় তার উত্তরসূরির নির্বাচন পদ্ধতি বা সম্ভাব্য ব্যক্তির বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানান, তাহলে তা হবে শত বছরের প্রচলিত রীতির এক বড় ধরনের পরিবর্তন।
দালাই লামাকে কেন্দ্র করে ভারত ও চীনের মধ্যে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দ্বন্দ্ব রয়েছে। চীন ১৯৫০ সালে সামরিক অভিযান চালিয়ে তিব্বত দখল করে। ১৯৫৯ সালে তিব্বতে চীনা শাসনের বিরুদ্ধে ব্যর্থ বিদ্রোহের পর দালাই লামা ভারতে আশ্রয় নেন এবং ধর্মশালায় নির্বাসিত তিব্বত সরকারের সদর দফতর প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর শান্তিতে নোবেল পুরস্কারও লাভ করেন তিনি।
চীনের মতে, দালাই লামা তিব্বতের স্বাধীনতা চেয়ে চীনের একত্ববাদ নষ্ট করছেন। চীন দালাই লামাকে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে দেখে এবং তার রাজনৈতিক ও ধর্মীয় প্রভাবকে হুমকি মনে করে। চীন বারবার বলছে, পরবর্তী দালাই লামার জন্ম অবশ্যই চীনের ভেতর হতে হবে। দালাই লামার পরবর্তী জন্ম অনুমোদনের অধিকার শুধু চীনা সরকারের। তাদের মতে, এটি তাদের দেশের আইন ও ধর্মীয় নিয়মের অংশ।
অন্যদিকে, ভারত দীর্ঘদিন ধরে দালাই লামা ও হাজার হাজার তিব্বতিকে আশ্রয় দিয়ে আসছে। ধর্মশালায় তিব্বতি সরকার মূলত ভারতের মাটিতে থেকে তিব্বতের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করছে। ভারত দালাই লামাকে 'আধ্যাত্মিক নেতা' হিসেবে তুলে ধরলেও, বাস্তবে তাকে কৌশলগত অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।
সাধারণত দালাই লামার মৃত্যুর পর শোকের সময় শেষে তার উত্তরসূরি খোঁজার কাজ শুরু হয়। উচ্চপদস্থ লামারা মিলে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেন। প্রাচীন বিশ্বাস অনুযায়ী, মৃত দালাই লামার দাহক্রিয়ার সময় ধোঁয়া কোন দিকে উড়ল, মৃত্যুর আগে তিনি কোন দিকে তাকিয়ে ছিলেন এবং পবিত্র লামো লাতসো হ্রদের তীর্থ দর্শনে কী বার্তা এলো—এমন সব আধ্যাত্মিক সংকেতের ওপর ভিত্তি করে তারা উত্তরসূরির সন্ধান করেন। তিব্বতি বৌদ্ধদের এই আধ্যাত্মিক নেতার পরবর্তী নির্বাচনে ধর্মীয় প্রথা কতটা মানা হবে, আর রাজনৈতিক প্রভাব কতটা কাজ করবে—তা নিয়েই এখন চলছে নানা হিসাব-নিকাশ।
বিভি/এমএফআর
মন্তব্য করুন: