বিশ্বজুড়ে উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক মিশন পাঠাচ্ছে পাকিস্তান (ভিডিও)
পেহেলগাম হামলাকে কেন্দ্র করে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই কোনো প্রমাণ ছাড়াই পাকিস্তানকে দায়ি করে ভারত। এর জেরে গত ৬মে রাতে মধ্যে পাঞ্জাব ও আজাদ কাশ্মীরে বিমান হামলা চালায় ভারত। এতে উত্তেজনা রূপ নেয় সর্বাত্নক সংঘাতে, ঘটে বেসামরিক প্রাণহানি। যার জবাবে পাঁচটি ভারতীয় জেট ভূপাতিত করে পাকিস্তান। পাল্টাপাল্টি হামলার পর গত ১০ মে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে উভয় দেশ অস্ত্রবিরতি ঘোষণা করে।
তবে এই পুরো সময়জুড়ে মিথ্যা তথ্যের পসরা খুলে বসে ভারতীয় বিভিন্ন মিডিয়া। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর প্রকাশিত সংবাদের বিরাট একটি অংশ জুড়ে ছিল নিজেদের সামরিক বাহিনীর বন্দনা। দেশটির প্রথম সারির ও ‘বিশ্বস্ত’ কিছু গণমাধ্যমও তথ্য যাচাই না করে বানোয়াট প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে উঠে আসলো ভারতীয় মিডিয়ার এসব অপপ্রচারের ফিরিস্তি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মিথ্যা তথ্যগুলো পরিবেশনের সময় ভারতীয় মিডিয়া বেশ সুনির্দিষ্ট আঙ্গিকে প্রচার করে, যেন এটি আসলেই ঘটেছে। তবে এগুলোর কোনোটিই সত্য ছিল না। সীমান্তের উভয় পাশেই মিথ্যা ও অর্ধসত্য খবর, বিভ্রান্তিকর ভিডিও ফুটেজ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে ব্যবহৃত বক্তৃতার কারণে মিথ্যা থেকে সত্য আলাদা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
একপর্যায়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম পাকিস্তানের একটি পারমাণবিক ঘাঁটিতে কথিত হামলার খবর প্রকাশ করে। এর পাশাপাশি বলা হয়, সৃষ্ট এ হামলার ফলে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছে, যা আসলে সত্য ছিল না। এসব অপথ্যের জেরে গোটা দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলজুড়ে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়।
এমন পরিস্থিতিতে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ভারতের প্রচারণার জবাব দিতে উচ্চপর্যায়ের একটি কূটনৈতিক প্রতিনিধি দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রোববার রাতে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম ‘রেডিও পাকিস্তান’-এর বরাত দিয়ে এই খবর জানিয়েছে ডন। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ একটি টেলিফোন আলাপে পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারিকে এই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিতে দায়িত্ব দিয়েছেন। গতকাল বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ এক পোস্টে বলেন, "আমি গর্বের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর অর্পিত দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। এই সংকটময় সময়ে দেশের সেবা করতে আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।"
এই দলে আরও আছেন—পাকিস্তানের জ্বালানি মন্ত্রী ড. মুসাদিক মালিক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার, প্রকৌশলী খুররম দস্তগীর, সিনেটর শেরি রেহমান, ফয়সাল সুবজওয়ারি, তহমিনা জানজুয়া এবং অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক জলিল আব্বাস জিলানি। প্রতিনিধিদলটি লন্ডন, ওয়াশিংটন, প্যারিস ও ব্রাসেলস সফর করবে এবং ভারতের মিথ্যা প্রচারণা ও দক্ষিণ এশিয়ায় অস্থিরতা সৃষ্টির প্রচেষ্টাগুলোর বিরুদ্ধে পাকিস্তানের অবস্থান তুলে ধরবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ঐতিহাসিক শত্রুতার কারণে দর্শকরা যেকোনো চমকপ্রদ মিথ্যাকে গ্রহণ করতে এবং ছড়িয়ে দিতে পছন্দ করে। ফলে মিথ্যা প্রতিবেদন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে যা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এসব অপতথ্য বা মিথ্যা তথ্যের রেশ অনেক বড় পরিসরে বর্তায় যা ভেঙে ফেলছে তথ্য বাস্তুতন্ত্রকে।
বিভি/এমএফআর
মন্তব্য করুন: