ইউরোপে দমবন্ধ গরম, প্রতিশোধ নিচ্ছে প্রকৃতি?

ছবি: সংগৃহীত
সময়ের আগেই এবার ইউরোপ পুড়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহে। তুরস্ক ও ফ্রান্সের বনাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে দাবানলের লেলিহান শিখা। আগুনের করাল গ্রাসে নিজ ঘরবাড়ি ছেড়ে তুরস্কে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পাড়ি জমিয়েছে।
এদিকে ইউরোপের পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলজুড়ে তীব্র উত্তাপের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফ্রান্স, স্পেন, ইতালি, পর্তুগাল ও জার্মানিতে গরমের দাপটে যেন দমবন্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ফলে এমন অবস্থায় উচ্চ পর্যায়ের সতর্কতা জারি করেছে প্রশাসন।
এমনকি নরম, শান্ত আবহাওয়ার জন্য পরিচিত নেদারল্যান্ডসও এবার বাদ যায়নি; সেখানে প্রথমবারের মতো সতর্কতা জারি করতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। টানা কয়েক দিনের তাপপ্রবাহের এই আগ্রাসী ধারা চলতি সপ্তাহের মাঝামাঝি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের আবহাওয়া বিষয়ক সংস্থা কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস জানিয়েছে, চলতি বছরের জুন মাসে যে তাপপ্রবাহ দেখা গেছে তা একেবারেই অস্বাভাবিক। পশ্চিম ইউরোপের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেশি রেকর্ড করা হয়েছে, যা সাধারণত জুলাই কিংবা আগস্টে দেখা যায়। অথচ এবার আগে ভাগেই প্রকৃতি যেন আগুন ঝরাতে শুরু করেছে। এমন তাপপ্রবাহ ছিল জুন মাসে এক কথায় নজিরবিহীন।
এদিকে তুরস্কের পশ্চিমাঞ্চলে দাবানলের দাপটে টেকা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। তুরস্কের বন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রচণ্ড দমকা হাওয়ার কারণে আগুন দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। ছড়িয়ে পড়া আগুন যেন পাহাড়-জঙ্গল গিলে খেতে উদগ্রীব হয়ে উঠেছে। বন মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, তীব্র ঝোড়ো হাওয়া আগুনকে আরও বেশি উস্কে দিচ্ছে।
আগুনের ভয়াবহতার কারণে অন্তত ৫টি ভিন্ন এলাকা থেকে হাজারো মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ ধরনের চরম আবহাওয়াজনিত ঘটনা বেড়েই চলেছে। আগুন শুধু বনভূমি নয়, বরং প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করে জনজীবনে প্রভাব ফেলতে শুরু করে দিয়েছে।
এদিকে ভয়াবহ দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে ফ্রান্সের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলেও। ওই অঞ্চলের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও উপরে রেকর্ড করা হয়। আগুনে প্রায় ৪০০ হেক্টর বনাঞ্চল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ফ্রান্সের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ১০১টি অঞ্চলের ভেতর ৮৪টিতেই তারা কমলা সতর্কতা জারি করেছে। অঞ্চলগুলো যেন পরিণত হয়েছে এক আগুনের রাজ্যে। উন্মত্ত আগুন মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে গ্রাস করে নিয়েছে সবুজ বনভূমি। প্রাকৃতিক এসব দুর্যোগের কারণে হাঁপিয়ে উঠছে প্রকৃতি, দিশেহারা হচ্ছে মানুষ।
স্পেনের আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন মাসে দেশটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ফ্রান্সের সীমান্তবর্তী এল গ্রানাডো অঞ্চলে তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৩.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
ইতালির ১৬টি শহরে তীব্র গরমের কারণে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। কিছু এলাকায় দুপুরের প্রচণ্ড গরমে বাইরের খোলা জায়গায় কাজ করা সীমিত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, জার্মানির পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেছে। এ অবস্থায় নাগরিকদের পানির ব্যবহার নিয়ে সচেতন থাকার অনুরোধ জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর তাপপ্রবাহের কারণে প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজার মানুষ প্রাণ হারান। এই সংখ্যা বন্যা, ভূমিকম্প ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে মারা যাওয়ার মোট সংখ্যার চেয়েও বেশি।
বিভি/আইজে
মন্তব্য করুন: