গোপনে ইসরাইলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আল-শারা! (ভিডিও)
সিরিয়ার দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল-আসাদের উৎখাতের পর, পশ্চিমাদের সাথে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু করে আল-শারার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন। পশ্চিমাদের মিত্রদেশগুলোর সাথে একের পর এক বৈঠকে বসে আলোচনার জন্ম দেন দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ হুসাইন আল-শারা।
চলতি বছরের মে মাসে সৌদি আরব সফরে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আকস্মিকভাবে সিরিয়ার ইসলামপন্থী নেতৃত্বাধীন সরকারের ওপর থেকে আরোপিত সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেন। এমনকি সৌদি সফরের এক ফাঁকে আল-শারার সাথে বৈঠকেও মিলিত হন ট্রাম্প।
ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন আল-শারা। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি আজারবাইজান সফরে যান তিনি। আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে বৈঠকে বসেন দুই দেশের নেতারা। তবে শুধু আজারবাইজান নয়, এই সফরের ফাঁকেই গোপনে ইসরাইলের কর্মকর্তাদের সাথেও বৈঠকে বসেছেন আল শারা।
ইসরাইলি কর্মকর্তাদের সাথে আল শারার বৈঠকের এই খবরটি প্রকাশ করেছে ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম আই২৪ নিউজ। সিরিয়ার কূটনৈতিক সূত্রের বরাতে প্রকাশিত সেই খবরে দাবি করা হয়, গত ১২ জুলাই বাকুতে দুই পক্ষের এই গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অন্য একটি সূত্রের দাবি তুর্কি কর্মকর্তারাও এই বৈঠকে জড়িত ছিলেন। যদিও সিরিয়ার সংবাদমাধ্যম এই বৈঠকের বিষয়টি অস্বীকার করছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী দুই দেশের কর্মকর্তার বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে, তবে সেখানে আল শারা উপস্থিত ছিলেন কিনা সেটি পরিষ্কার নয়।
জানা গেছে এই আলোচনায় সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসআদ আল-শিবানী এবং কূটনীতিক আহমেদ আল-দালাতি উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে ইসরাইলের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের বিশেষ দূত এবং ঊর্ধ্বতন সামরিক-গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ছিলেন। বৈঠকে ইসরাইল-সিরিয়ার সম্ভাব্য নিরাপত্তা চুক্তি, ইরানের প্রভাব, হিজবুল্লাহর অস্ত্রভাণ্ডার, লেবানন থেকে পরিচালিত ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোর ভবিষ্যৎ এবং গাজা থেকে বিতাড়িত ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসনের মতো স্পর্শকাতর ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া সিরিয়ার রাজধানীতে ইসরাইলের একটি সমন্বয় অফিস খোলার বিষয়েও কথা হয়েছে।
এই বৈঠককে সিরিয়ার দীর্ঘদিনের বৈরী প্রতিবেশী ইসরাইল ও তাদের মিত্রদেশ যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইসরাইল আল-শারাকে শুরুতে ‘জিহাদপন্থী’ আখ্যা দেয়। শারার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের হাতে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সম্পদ ঠেকাতে সিরিয়ায় শত শত বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। তবে পরবর্তীতে শারার প্রশাসনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরিতে আগ্রহী হয়ে ওঠে নেতানিয়াহুর সরকার।
এখানেই শেষ নয়, আই২৪ নিউজের আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা আগামী সেপ্টেম্বরে ওয়াশিংটনে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিইয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে একটি বৈঠকে মিলিত হতে পারেন। ধারনা করা হচ্ছে সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদেও উপস্থিত থাকতে পারেন আল-শারা। ফলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ইসরাইল এবং সিরিয়ার শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সরাসরি এই গোপন আলোচনা, মধ্যপ্রাচ্যের রাজনিতিতে নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বিভি/এমএফআর
মন্তব্য করুন: