নতুন গ্রাহকের সন্ধানে ভারতে পা রাখলো টেসলা

ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে বিক্রি কমে যাওয়ায় নতুন গ্রাহকের সন্ধানে মার্কিন বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলা ভারতে নিজেদের প্রথম শোরুম উদ্বোধন করেছে।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) এই শোরুম উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বিশ্বের জনবহুল দেশটিতে কোম্পানিটি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করলো।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ে টেসলার শোরুম উদ্বোধন করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবিশ। উদ্বোধনের পর নির্দিষ্ট কিছু অতিথির জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় এই শোরুম।
ভারতের ক্রমবর্ধমান বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার ধরার লক্ষ্যে এই শোরুম চালু করেছে টেসলা। বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের ইলন মাস্কের মালিকানাধীন এই কোম্পানি বলেছে, বর্তমানে ভারতের বাজারে টেসলার মডেল-ওয়াই গাড়ি আনা হয়েছে। চলতি প্রান্তিকে এই গাড়ির সস্তা মূল্যের সংস্করণের সরবরাহ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
টেসলার জ্যেষ্ঠ আঞ্চলিক পরিচালক ইসাবেল ফ্যান বলেছেন, ভারতে এটাই টেসলার প্রথম শোরুম উদ্বোধন। এটা টেসলার জন্য বিশাল বৈশ্বিক মাইলফলক। মুম্বাই ও রাজধানী দিল্লিতে শিগগিরই চার্জিং স্টেশন স্থাপন করা হবেও বলে জানিয়েছেন তিনি।
শোরুমটি সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য বুধবার থেকে খুলে দেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু তার আগেই উদ্বোধনের পরপরই ভারী বৃষ্টি উপেক্ষা করে অনেক কৌতূহলী দর্শক ও টেসলা-ভক্ত পছন্দের গাড়ি এক ঝলক দেখার জন্য শোরুমের সামনের জড়ো হন।
গত কয়েক বছর ধরে ভারতে ব্যবসা শুরুর আগ্রহ দেখালেও দেশটির উচ্চ আমদানি শুল্কের কারণে পিছিয়ে যায় টেসলা। ভারতকে অতীতে ‘যেকোনও বড় দেশের চেয়ে বেশি সম্ভাবনাময়’ বলে বর্ণনা করা ইলন মাস্ক দেশটির আমদানি শুল্ককে ‘বিশ্বের সর্বোচ্চ’ বলে সমালোচনাও করেছিলেন।
তবে বৈশ্বিক গাড়ি নির্মাতারা যদি ভারতে শত শত মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে স্থানীয়ভাবে গাড়ি উৎপাদন করে, তাহলে ইলেক্ট্রিক গাড়ি আমদানির ওপর কর ছাড় দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে নয়া দিল্লি। টেসলা এখন পর্যন্ত ভারতে কোনও কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনার ঘোষণা দেয়নি।
দেশটির স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন এই কোম্পানি চীন থেকে গাড়ি আমদানি করেই ভারতের বাজারে বিক্রি করবে। ফলে ভারতে টেসলার মডেল ওয়াই গাড়ির অন-রোড মূল্য প্রায় ৭০ হাজার মার্কিন ডলার পড়বে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে একই গাড়ির দাম মাত্র ৩৭ হাজার ৪৯০ ডলার। যুক্তরাষ্ট্রে সাড়ে ৭ হাজার ডলার কর ছাড়ের পর ওই দামে বিক্রি হয় গাড়িটি।
বিশ্বজুড়ে যখন টেসলার গাড়ির চাহিদা কমে যাচ্ছে, তখন ভারতে কোম্পানিটির প্রবেশকে গুরুত্বপূর্ণ এক মুহূর্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। বৈদ্যুতিক গাড়ির ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতায় টেসলা পিছিয়ে পড়ায় কোম্পানিটির সাম্প্রতিক বিক্রি হ্রাস পেয়েছে। বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারে এক সময় টেসলা আধিপত্য করলেও বর্তমানে বিওয়াইডি-সহ কম দামের চীনা বিভিন্ন ব্র্যান্ড টেসলার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে।
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম গাড়ির বাজার ভারতে টেসলা প্রবেশ করলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশটির বৈদ্যুতিক গাড়ি খাত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া টেসলার গাড়ির উচ্চ মূল্য বিবেচনায় স্বল্পমেয়াদে কোম্পানিটির বড় বিক্রির সম্ভাবনা দেখছেন না তারা।
ভারতে বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার দ্রুত সম্প্রসারিত হলেও তা এখনও অনেক ছোট। ২০২৪ সালে ভারতে প্রায় এক লাখ গাড়ি বিক্রি হয়েছে; যা দেশটিতে মোট গাড়ি বিক্রির তিন শতাংশেরও কম।
কাউন্টারপয়েন্টের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক সৌমেন মণ্ডল বলেন, উচ্চ মূল্যের কারণে বেশিরভাগ ভারতীয় গ্রাহকের নাগালের বাইরে টেসলার গাড়ি। মূলত এটি বিলাসবহুল গাড়ি নির্মাতাদের সঙ্গেই প্রতিযোগিতা করবে।
তিনি বলেন, টেসলা শুরুতেই ব্যাপক বিক্রয়ের কৌশল নেবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি না। আমরা আশা করছি প্রথমদিকে ৫০০-৭০০ গাড়ি বিক্রি হবে। পরে তা ২০০-৩০০টিতে নেমে আসবে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে ভারত। উভয় দেশ এই চুক্তিতে পৌঁছালে গাড়ির ওপর শুল্ক হ্রাস পেতে পারে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ওয়াশিংটনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ইলন মাস্কের মাঝে একান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। -সূত্র: এএফপি।
বিভি/এআই
মন্তব্য করুন: