মার্কিন রণতরীর গতিপথ বদলাতে বাধ্য করলো ইরান (ভিডিও)
মার্কিন সামরিক বাহিনীর একটি রণতরীকে বাধা দিয়ে, সতর্কতা সংকেত জারি করে এবং শেষ পর্যন্ত জাহাজটিকে তার গতিপথ পরিবর্তন করে দক্ষিণ দিকে যেতে বাধ্য করেছে ইরানের নৌবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার। ২৩ জুলাই ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম প্রেস টিভির এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
ইরানের সামরিক বাহিনীর এক বিবৃতি অনুসারে, ওমান সাগরে মার্কিন ডেস্ট্রয়ার ইউএসএস ফিটজেরাল্ড যুদ্ধজাহাজটি ইরানের নজরদারির আওতায় থাকা জলসীমার কাছাকাছি চলে আসে। যার ফলে ইরানি নৌবাহিনীর তৃতীয় নৌ অঞ্চল থেকে একটি দ্রুত-প্রতিক্রিয়াশীল হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়। হেলিকপ্টারটি ওই ডেস্ট্রয়ারের ওপর দিয়ে উড়তে থাকে এবং ইরানের নজরদারির আওতায় থাকা জলসীমা থেকে দূরে থাকার জন্য একটি স্পষ্ট রেডিও সতর্কতা জারি করে।
পরবর্তীতে ইউএসএস ফিটজেরাল্ডের ক্রুরাও হুমকি দেয় যে হেলিকপ্টারটি যদি কাছাকাছি থাকে, তবে তারা এটির সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হবে। এরপর ইরানের সেনাবাহিনী হেলিকপ্টারটিকে সম্পূর্ণ বিমান প্রতিরক্ষা সুরক্ষার অধীনে ঘোষণা করে এবং মার্কিন ডেস্ট্রয়ারকে তার পথ পরিবর্তন করার নির্দেশ দেয়। বিবৃতি অনুসারে, ওই নির্দেশনার পর ইউএসএস ফিটজেরাল্ড বিতর্কিত এলাকা থেকে দক্ষিণ দিকে চলে যেতে বাধ্য হয়। তবে ইরানের সামরিক বাহিনীর এই দাবির বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনও মন্তব্য করেনি মার্কিন নৌবাহিনী।
ইরান এর আগেও একাধিকবার মার্কিন নৌবাহিনীর সঙ্গে "show of force" বা শক্তিপরীক্ষামূলক ঘটনা ঘটিয়েছে। ২০১৬ সালে দুইটি মার্কিন নৌকা ইরানের জলসীমায় প্রবেশ করায় ১০ জন মার্কিন নৌসেনাকে আটক করে আইআরজিসি। পরের বছর পারস্য উপসাগরে মার্কিন জাহাজ USS Mahan-কে বিপজ্জনকভাবে ধাওয়া করে ইরানের ছোট দ্রুতগতির নৌকা। সেসময় মার্কিন যুদ্ধজাহাজ থেকে গুলি ছোড়ার ঘটনাও ঘটে। ২০২৩ সালে হরমুজ প্রণালী অতিক্রমের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর একটি সাবমেরিনকে পানির ওপরে উঠে আসতে বাধ্য করার দাবি করেছিল তেহরান।
ওমান সাগরের উত্তরাঞ্চল ও মাঝখানের এলাকা নিয়মিত সামরিক নজরদারির আওতায় রাখে ইরান। ইরান এখানে নিয়মিত ড্রোন, হেলিকপ্টার, ও নৌকা দিয়ে নজরদারি চালায়। এছাড়া পারস্য উপসাগর ও আরব সাগর আন্তর্জাতিক জলপথ হলেও সেখানে টহল চালায় ইরান। এসব এলাকায় মার্কিন ড্রোন, সাবমেরিন বা যুদ্ধজাহাজ এলে ইরান তথ্য চুরি, গুপ্তচরবৃত্তি ও আক্রমণের আশঙ্কায় থাকে। ফলে কৌশলগত কারণে মার্কিন জাহাজের উপস্থিতিকে ইরান নিজেদের প্রভাব খর্ব হওয়া মনে করে।
অন্যদিকে ইরান ও ওমানের মাঝে অবস্থিত সরু জলপথ, হরমুজ প্রণালি দিয়ে বিশ্বের ২০%-এর বেশি তেল রপ্তানি হয়। Chevron, ExxonMobil-এর মতো মার্কিন কোম্পানির জাহাজ এই পথেই চলাচল করে। ফলে ঝামেলা হবে জেনেও তেল রুট নিরাপদ রাখতে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে “নেভিগেশনের স্বাধীনতা” বজায় রাখতে চায়। এছাড়া সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও কুয়েত — সবাই মার্কিন মিত্র। মিত্রদের সুরক্ষা নিশ্চিতে নিজেদের সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখে মার্কিনীরা।
বিভি/এমএফআর
মন্তব্য করুন: