ইরানি শীর্ষ কর্মকর্তার পরিবারের সঙ্গে যুক্ত শিপিং নেটওয়ার্কে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

ছবি: সংগৃহীত
এবার ইরানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১০০’রও বেশি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও জাহাজের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ। ট্রেজারি বিভাগ এটিকে ২০১৮ সালের পর ইরানকে ঘিরে নেওয়া সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
আল-জাজিরার তথ্য অনুযায়ী, ৩০ জুলাই যে নিষেধাজ্ঞাগুলো ঘোষণা করা হয়েছে, সেগুলোর লক্ষ্য ছিল ৫০টিরও বেশি জাহাজ। মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের মতে, এসব জাহাজ একটি বড় শিপিং নেটওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত, যা মোহাম্মদ হোসেইন শামখানির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টার ছেলে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই নেটওয়ার্ক ইরান ও রাশিয়া থেকে তেল ও পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য পরিবহন করে এবং সেগুলো বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করে। এর মাধ্যমে তারা প্রতি বছর বিপুল অর্থ অর্থাৎ হাজার হাজার কোটি ডলার আয় করে থাকে।
এদিকে ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট তার অভিযোগে বলেন, শামখানি পরিবারের মালিকানাধীন শিপিং ব্যবসা ইঙ্গিত করে যে কীভাবে ইরানের শাসকগোষ্ঠীর প্রভাবশালী সদস্যরা তাদের ক্ষমতা ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণে সম্পদ সংগ্রহ করছে এবং সেই অর্থ ইরানি সরকারের ঝুঁকিপূর্ণ কর্মকাণ্ডে ব্যয় করছে।
এই নিষেধাজ্ঞার তালিকায় ১১৫ জন ব্যক্তি, সংস্থা ও জাহাজ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সময় চালু হওয়া ‘ম্যাক্সিমাম প্রেশার’ কৌশলের পর এটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় পদক্ষেপগুলোর একটি। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র এসব নিষেধাজ্ঞাকে ইরানি জনগণের বিরুদ্ধে মার্কিন শত্রুতার স্পষ্ট নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, শামখানি পরিবার ইরানের অপরিশোধিত তেল রপ্তানির একটি উল্লেখযোগ্য অংশের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে। যদিও হোসেইন শামখানির পিতা এবং ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনির উপদেষ্টাকে ২০২০ সালেই নিষেধাজ্ঞার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তবুও তাদের পরিবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিলাসবহুল সম্পদের মালিক। তারা একাধিক দেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে থাকে, যা তাদেরকে আড়ালে থেকে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ করে দেয়।
একজন মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই নতুন উদ্যোগ ইরানের পক্ষে তেল রপ্তানি করা আরও জটিল করে তুলবে। তবে তাদের মতে, এর ফলে বৈশ্বিক বাজারে দীর্ঘমেয়াদি তেলের ঘাটতির আশঙ্কা নেই। বর্তমানে চীন ইরান থেকে তেল আমদানির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক ক্রেতা।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি নিষেধাজ্ঞার আগে সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন যে, যদি ইরানের বিরুদ্ধে নতুন কোনো আগ্রাসন ঘটে, তেহরান তা কঠোরভাবে প্রতিহত করবে। এক্স-এ দেওয়া তার পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, ইরান ৭,০০০ বছরের পুরনো সভ্যতা এবং সংস্কৃতির অধিকারী একটি জাতি, যারা কখনোই হুমকির ভাষা মেনে নেয়নি। ইরানিরা কখনো বিদেশিদের সামনে মাথা নত করে না। আরাঘচি আরও বলেন, শুধু বিদেশি চাপে পড়ে কেউ সুস্থ মস্তিষ্কে নিজের স্বনির্ভর, শান্তিপূর্ণ প্রযুক্তিতে করা বিপুল বিনিয়োগ ত্যাগ করবে না।
বিভি/আইজে
মন্তব্য করুন: