আল্লাহর বাণী বুকে ধারণ করে জন্ম নেওয়া এক প্রজন্ম
ছবি: সম্মাননা অনুষ্ঠানে আগত হাফেজ শিক্ষার্থীরা
আকাশে তখন যুদ্ধবিমান, মাটিতে ধ্বংসস্তূপ। বিদ্যুৎ নেই, পানির সংকট, নিরাপদ আশ্রয়ও অনিশ্চিত। ঠিক সেই সময়ই গাজার বুকে নীরবে বেড়ে উঠছিলো কুরআনের হাফেজদের একটি নতুন প্রজন্ম।
দখলদার ইসরাইলি আগ্রাসনের মধ্যেই গাজা উপত্যকায় ৫০০ ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী পবিত্র কুরআন মুখস্ত সম্পন্ন করেছেন। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) গাজা সিটির আল-শাতি শরণার্থী শিবিরে আয়োজিত এক আবেগঘন অনুষ্ঠানে তাদের সম্মাননা জানানো হয়।
স্থানীয় ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হাফেজদের পরিবার, আলেম, শিক্ষক এবং শিবিরের বাসিন্দারা। অনেকেই এসেছেন বারবার বাস্তুচ্যুত হওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে—কারও ঘর নেই, কারও স্বজন নেই, তবুও চোখে ছিল গর্বের অশ্রু।
অনুষ্ঠানজুড়ে কুরআন তেলাওয়াত, দোয়া ও বক্তব্যের মাঝেও উঠে আসে যুদ্ধের অটুট বিশ্বাস আর ধৈর্যের গল্প। অব্যাহত বোমাবর্ষণ, দীর্ঘ অবরোধ ও মানবিক বিপর্যয়ের মাঝেও কীভাবে আল্লাহর বাণী হৃদয়ে ধারণ করা যায়—তার জীবন্ত সাক্ষ্য এই ৫০০ হাফেজ।
আয়োজকরা জানান, অনেক শিক্ষার্থী আশ্রয়কেন্দ্রের ভিড়ে, ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের ধ্বংসাবশেষে কিংবা অস্থায়ী শ্রেণিকক্ষে মোমবাতির ক্ষীণ আলোতে কুরআন মুখস্ত করেছেন। বিদ্যুৎ নেই, নিরাপত্তা নেই—তবুও থামেনি তাদের সাধনা। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, যুদ্ধকালীন সময়ে কুরআন হিফজ কেবল ধর্মীয় অর্জন নয়; এটি ফিলিস্তিনি জাতির অস্তিত্ব, সংস্কৃতি ও পরিচয় রক্ষার এক নীরব কিন্তু শক্তিশালী প্রতিরোধ।
একজন আয়োজকের কণ্ঠে উঠে আসে আবেগী উচ্চারণ— ‘যখন আমাদের জীবন, ইতিহাস আর ভবিষ্যৎ মুছে দেওয়ার চেষ্টা চলছে, তখন এই হাফেজরা আল্লাহর বাণী নিজেদের হৃদয়ে সংরক্ষণ করে রেখেছে।’
ধর্মীয় আলেমরা জানান, অবরোধ ও একের পর এক সামরিক অভিযানের মধ্যেও গাজায় কুরআন শিক্ষার ঐতিহ্য কখনো থেমে যায়নি। বহু হিফজ কেন্দ্র ধ্বংস হলেও স্বেচ্ছাসেবী উদ্যোগ ও পারিবারিক প্রচেষ্টায় অনানুষ্ঠানিকভাবে সেই শিক্ষা জারি ছিলো।
বিভি/এমআর




মন্তব্য করুন: