• NEWS PORTAL

  • মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

‘রাশিয়ার প্রস্তাব বিবেচনা করা বাংলাদেশের জন্য এখন কঠিন’

ডয়চে ভেলে

প্রকাশিত: ১৩:৪২, ১৯ মার্চ ২০২৩

ফন্ট সাইজ
‘রাশিয়ার প্রস্তাব বিবেচনা করা বাংলাদেশের জন্য এখন কঠিন’

রাশিয়া-বাংলাদেশ আন্তঃসরকার কমিশনে বৈঠকে রাশিয়ার দেওয়া প্রস্তাব এই মুহূর্তে বাংলাদেশের পক্ষে বিবেচনা করা কঠিন বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সরকারি তরফে এই প্রস্তাব বিবেচনা করা হচ্ছে কি না সেটা কেউ নিশ্চিত করেননি। পরিকল্পনা মন্ত্রী আব্দুল মান্নান বলেছেন, "এগুলো নিয়ে আরও আলোচনা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে করণীয় ঠিক করবে।”

 

আন্তঃসরকার কমিশনের বৈঠকে বাংলাদেশে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) স্বল্পমেয়াদি রপ্তানি করতে চেয়েছে রাশিয়া। দেশটি বাংলাদেশে যৌথভাবে এলএনজি টার্মিনালও স্থাপন করতে আগ্রহী। দীর্ঘদিন থেকে ওমান ও কাতার থেকে এলএনজি আমদানি করে আসছে বাংলাদেশ।

মস্কোর সঙ্গে আলোচনা এগোলে রাশিয়া হবে এলএনজি আমদানির জন্য বাংলাদেশের তৃতীয় উৎসস্থল। এলএনজির পাশাপাশি তরলীকৃত পেট্টোলিয়াম গ্যাসও (এলপিজি) বাংলাদেশে রপ্তানি করতে চায় রাশিয়া। পাশাপাশি রুবলে বা তৃতীয় কোনো দেশের মুদ্রাও লেনদেনের প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া। তৃতীয় দেশ হিসেবে চীনের ইয়েনকে গুরুত্ব দিয়েছে তারা।

গত ১৩ মার্চ শুরু হয়ে তিন দিনব্যাপী কমিশনের অধিবেশন চলে ১৫ মার্চ পর্যন্ত। বাণিজ্য, অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতাসংক্রান্ত বিষয় অধিবেশনে আলোচনা হয়েছে। তবে কোনো প্রোটোকল সই হয়নি। অধিবেশনের একটি পর্যায়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প নিয়েও আলোচনা হয়। এ প্রকল্পের নির্মাণকাজে রাশিয়ার ঠিকাদার দেরি করলে জরিমানা দিতে হয় বাংলাদেশকে। দেশটির সঙ্গে হওয়া চুক্তিতে এমন একটি ধারা রয়েছে। এ কারণে রাশিয়াকে ইতিমধ্যে প্রায় ৭৮ কোটি টাকা জরিমানা দিয়েছে বাংলাদেশ। চুক্তির এ ধারা সংশোধন নিয়ে আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলেই বৈঠক সূত্র জানিয়েছে।

ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত এ অধিবেশনে রাশিয়ার পক্ষে নেতৃত্ব দেন আন্তঃসরকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও রাশিয়া ফেডারেশনের ফেডারেল এজেন্সি ফর ফিশারিজের প্রধান ইলিয়া ভি শেসতাকভ। আর বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শরিফা খান। এই বৈঠক নিয়ে শরিফা খান কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে ইআরডি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, উভয় দেশের আর্থিক, বাণিজ্য, শিল্প, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, আণবিক শক্তি, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণী, ভূতত্ত্ব গবেষণা, তথ্যপ্রযুক্তি, পরিবহন ও শিক্ষা খাতের সহযোগিতা নিয়ে অধিবেশনে আলোচনা হয়েছে।

প্রথম অধিবেশনে বাংলাদেশের হয়ে নেতৃত্ব দেন সাবেক ইআরডি সচিব কাজী শফিকুল আজম। তিনি বলেন, "রুবলে লেনদেনের যে প্রস্তাব এসেছে সেটা বৈশ্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশের পক্ষে এখনই বিবেচনা করা কঠিন। কারণ আমাদের পররাষ্ট্রনীতি হল, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। এটা করতে হলে আমাদের অনেক ঝুঁকি নিয়ে করতে হবে। সেটা বাংলাদেশের পক্ষে আসবে না। আন্তর্জাতিক চাপ বাড়বে। আমার ধারণা বাংলাদেশ এখন সেই ঝুঁকি নেওয়ার পর্যায়ে নেই। যে কারণে আমরা তাদের জাহাজ ভিড়তে দেয়নি। এখন আমাদের যেটা করা উচিত আমাদের ট্রেড বাড়ানো এবং ইনভেস্টমেন্ট। ইনভেস্টমেন্টকেই আমাদের প্রাধান্য দিতে হবে।”

বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া তার মুদ্রা রুবলের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেন করার আগ্রহ দেখিয়েছে সে ব্যাপারে বাংলাদেশ কোনো মন্তব্য করেনি। তবে যৌথভাবে সার কারখানা, জ্বালানি পরিশোধন কারখানা এবং চামড়া ও চামড়াজাত কারখানা স্থাপন করতে চায় দেশটি। কৃষি ও প্রাণিসম্পদ এবং কৃষি খাতের জন্য গবেষণাগার তৈরিও তাদের আগ্রহের বিষয়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ স্থাপনে বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার ব্যাপারেও রাশিয়া ইতিবাচক। এগুলো বাংলাদেশ বিবেচনা করবে বলেই এক ধরনের ইঙ্গিত দিয়েছে।

কমিশনের কার্যক্রম বাস্তবায়নে পরে বাংলাদেশে গঠিত হয় কমনওয়েলথ অব ইন্ডিপেন্ডেন্টস স্টেট (সিআইএস)-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিসিসিআই)। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর ১৯৯১-৯৩ সময়ে যে ১১টি দেশ হয়, এগুলোকেই একসঙ্গে বলা হয় সিআইএস।

সিআইএস-বিসিসিআই সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমরা তো তাদের সঙ্গে এ নিয়ে চার দফা বৈঠক করলাম। কিন্তু কোন অগ্রগতি তো দেখা যাচ্ছে না। আমরা দীর্ঘদিন থেকে রাশিয়ার সঙ্গে ব্যাংকিং লেনদেন চালুর দাবি জানিয়ে আসছিলাম। তাই এ ব্যাপারে ইতিবাচক কিছু শুনতে চেয়েছিলাম। এটা হলে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য বাড়বে এবং নিশ্চিতভাবে রাশিয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়বে। ভারতের অ্যাক্সিস ব্যাংকের সঙ্গে তাদের এভাবে লেনদেন হয়।

 

রাশিয়ার ‘স্পুৎনিক' নামের বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন হওয়ার বিষয়ে পাঁচ বছর ধরেই কথা হচ্ছে। তবে আলোচনায় তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে প্রোটোকল সই হয়নি। যদি বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে এখনই এগুলো বিবেচনার করার ঝুঁকিও আছে। সেটা আমরা বুঝি। তারপরও বানিজ্য বাড়াতে এটা প্রয়োজন।”

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিষয়গুলো নিয়ে হওয়া আলোচনাকে সিদ্ধান্তের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার কোনো ফোরাম এটি নয়। এ কারণেই বাংলাদেশ চায় সিদ্ধান্তের পর্যায়ে নিয়ে যেতে রাশিয়ার উচ্চপর্যায়ের কোনো দল ঢাকায় আসুক। অধিবেশনে অংশ নেওয়া রাশিয়ার দলটিও এতে সম্মতি জানিয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে রাশিয়ার উচ্চপর্যায়ের দলটিকে ঢাকায় চায় বাংলাদেশ। তবে কবে নাগাদ আসতে পারে সে ব্যাপারে রাশিয়া কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।

কনজুমার এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, "আমরা তো কূটনীতি বুঝি না, আমরা চাই টেকসই জ্বালানি ব্যবস্থা। ফলে তারা যে এলএনজি, এলপিজি পাঠাতে চায় সেটা আমাদের ইতিবাচক হিসেবেই দেখা উচিত। কারণ জ্বালানির ক্ষেত্রে আমরা খুবই অরক্ষিত অবস্থার মধ্যে আছি। এটা চলতে থাকলে আমরা খুবই সংকটে পড়তে পারি বলেই আমার মনে হয়।'

'রুবলে লেনদেন বিবেচনা করা কঠিন'

রুবলে লেনদেনের প্রস্তাবের বিষয়ে বাংলাদেশের করণীয় কী? জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গর্ভনর আবুল কাশেম বলেন, "আমি যতদূর জানি, আগে দু'একবার এমন উদ্যোগ হয়েছে। কোন দেশের সঙ্গে যদি আমরা এমন লেনদেন করে

থাকি, তাহলে রাশিয়ার সঙ্গেও করতে পারি। অন্য দেশ তো সেটা করছে।” রাশিয়া তো তৃতীয় কোন দেশের মূদ্রার মাধ্যমে লেনদেনের প্রস্তাব দিয়েছে? সেটা কী বিবেচনা করা উচিত? তৃতীয় কোন দেশের মূদ্রায় যদি পারি, তাহলে রুবলে কেন নয়? নিশ্চয় বাংলাদেশ ব্যাংক এগুলো বিবেচনা করবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ১ মার্চ গঠিত হয় বাংলাদেশ-রাশিয়া আন্তঃসরকার কমিশন। আন্তঃসরকার কমিশনের প্রথম অধিবেশন মস্কোতে অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের অক্টোবরে।

মন্তব্য করুন: