সাধারণ বীমায় এখনো বহাল তবিয়তে স্বৈরাচারের দোসর এমডি হারুন

সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হারুন অর রশিদ (ফাইল ছবি)
সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে অনিয়মের নানা অভিযোগ উঠেছে। আর্থিক কেলেঙ্কারি শুধু নয়, আওয়ামী লীগের একচেটিয়ে এজেন্ডা বাস্তবায়নেও সিদ্ধহস্ত এই কর্মকর্তা। দায়িত্ব পালনে সরকারের গুরুদায়িত্বের চেয়েও বেশি ব্যস্ত থাকতেন শেখ পরিবারের নানা দিবস আয়োজনে। স্বৈরাচারের চিহ্নিত দোসর হওয়া সত্ত্বেও এখনো স্বপদে বহাল তবিয়তে আছেন হারুন অর রশিদ।
জুলাইয়ে গণঅভ্যুত্থানের সময় গোটা দেশ যখন ক্ষোভে উত্তাল তখনও তিনি ব্যস্ত ছিলেন শেখ কামালের ৭৫তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন ও বাস্তবায়নের কাজে। সাধারণ বীমা কর্পোরেশন থেকে নানা অজুহাতে আর্থিক অপচয়ের তথ্য-প্রমাণও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আগস্টের শুরুতে শেখ হাসিনার পদচ্যুতির শেষ মুহূর্তে ৪ তারিখে শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী উদযাপনের জন্য এক লাখ ৬৭ হাজার টাকা খরচের অনুমোদন দেন তিনি। এর অংশ হিসেবে দেড় লাখ টাকার অগ্রিম চেকও অনুমোদন করেন তার বিভাগের জুনিয়র অফিসার ও জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা আরিফুর রহমানের নামে।
সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের নানা অনিয়মের আরেক সাক্ষী, তারই সহযোগী শাহ আলম। জেনারেল ম্যানেজার পদমর্যাদার এই কর্মকর্তাকে দিয়েও নানা অনিয়ম নির্বিঘ্নে করিয়ে থাকেন হারুন অর রশিদ। শেখ হাসিনার পরিবারের জন্য অন্তপ্রাণ এই কর্মকর্তা শেখ মুজিবের ৪৯তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসের জন্যও লক্ষাধিক টাকার বিল করেন। ডিজিটাল ব্যানার, স্ট্যান্ড ব্যানার, ড্রপ ডাউন ব্যানারসহ আনুষঙ্গিক কাজের জন্য এক লাখ ১৫ হাজার টাকা খরচ করেন তিনি। ভ্রমণ ভাতা, চিকিৎসা ভাতা ও বিবিধ খাত দেখিয়ে কয়েকজনের যোগসাজসে আত্মসাত করেন সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের অর্থ।
শেখ হাসিনার পলায়নের কারণে শেখ কামালের ৭৫তম জন্মবার্ষিকীর দিবসটি শেষ পর্যন্ত পালন করা না হলেও সেই অর্থ কী কাজে খরচ হয়েছে তারও হদিস নেই। এরপর অগ্রিম তোলা সেই অর্থও সমন্বয় করা হয়েছে সুকৌশলে। শেখ হাসিনা যেদিন দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান সেদিন বিকেলে ধানমন্ডির আবাহনী ক্লাব মাঠে শেখ কামালের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তক অপর্ণসহ তার জীবনী নিয়ে আলোচনার পরিকল্পনার গুরু ছিলেন হারুন।
অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হারুন পেশাগত কাজে তেমন বিচক্ষণ না হলেও পদ-পদবী বাগিয়ে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছানোর কাজে বেশ পাকা। স্বৈরাচারের দোসদের সঙ্গে যোগসাজসে এর আগেও তিনি সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২৩ সালের ১৭ মে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন হারুন। আইডিআরএ-তে দায়িত্ব পালনের সময় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখতে ব্যর্থ এ কর্মকর্তা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বাগিয়ে নেন সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ।
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ-আইডিআরএ এর নির্বাহীর দায়িত্ব পালনের সুবাদে সখ্যতা হয় তখনকার আইডিআরএ এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারীর সঙ্গে। সেই জয়নুল বারী এখন সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান। তার সঙ্গে আগে থেকে ভালো জানা-শোনার সুযোগে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনে একচেটিয়া দাপট চালিয়ে যাচ্ছেন হারুন অর রশিদ। স্বৈরাচারের দোসর হওয়ার পরও অন্তর্বর্তী সরকার সেদিকে নজর দেয়নি। তিনিও বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে নিজের পরিচয় আড়াল করতে সমর্থ হয়েছেন। নিজের তাগিদ থেকে নয়, মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকারি দিবস উদযাপনে বাধ্য হয়েছেন বলে নিজ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারির কাছে তুলে ধরেন। আর এখন নিজেকে বিএনপিপন্থী কর্মকর্তা হিসেবে জাহির করতে ব্যস্ত। সেই সুবাদে সচিব পদে পদোন্নতির অপেক্ষায় তিনি। হারুন-অর রশিদ শিগগিরই সচিব পদে পদোন্নতি পাচ্ছেন এমন গুঞ্জনও রয়েছে। এ অবস্থায় স্বৈরাচারের চিহ্নিত দোসর হারুন অর রশিদ কীভাবে সচিব পদে পদোন্নতি পেতে যাচ্ছেন তা নিয়েও বিস্মিত খোদ তার কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বিভি/পিএইচ
মন্তব্য করুন: