• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

বিশ্বমঞ্চের সেলিব্রিটি কি পারবেন দেশকে সংকট থেকে উত্তরণ ঘটাতে?

বদরুল আলম নাবিল

প্রকাশিত: ১৬:৩৩, ৭ আগস্ট ২০২৪

আপডেট: ১৮:১৯, ৭ আগস্ট ২০২৪

ফন্ট সাইজ

বিশ্বমঞ্চে শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি সেলিব্রেটি ড. মুহাম্মদ ইউনূস- নোবেল, ম্যাগসেসেসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রায় ১৪৫টি পুরস্কার অর্জন করে। এই গ্রহের প্রায় সকল মর্যাদার্পূণ পুরস্কারই হয়তো ওনার নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে স্ব স্ব ঐজ্জল্য বাড়িয়েছে। মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করে। তিনিই প্রথম এবং একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে এই পুরস্কার পান। এছাড়া ড. ইউনুস পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৬২টি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন। 

ক্ষুদ্রঋণ নামক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার এই জনকের বক্তব্য শোনার জন্য বিশ্বের তাবৎ শিক্ষাবিদ-গভেষকরা রীতিমতো টিকেট কেটে হুমরি খেয়ে পড়েন। বিশ্বের ক্ষতধর দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানরাও যেন ধন্য হন ওনার সানিধ্যে। 

আকর্ষনীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারি মুহাম্মদ ইউনুস ২৮ জুন, ১৯৪০ সালে চট্টগ্রামের  জোবরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রথম বিদ্যালয় মহাজন ফকিরের স্কুল। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় তিনি বয়েজ স্কাউটসে যোগ দেন এবং  স্কাউটসের পক্ষ থেকে মাত্র ১৫ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ এশিয়া এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন।

চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় মুহাম্মদ ইউনূস মেধা তালিকায় ১৬তম স্থান অধিকার করেন এবং চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে নিজেকে যুক্ত করেন। কলেজে তিনি নাটকে অভিনয় করে প্রথম পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও তিনি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা এবং আজাদী পত্রিকায় কলাম লেখার কাজে যুক্ত ছিলেন।

১৯৫৭ সালে মুহাম্মদ ইউনূস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি হন এবং সেখান থেকেই বিএ এবং এমএ সম্পন্ন করেন। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি.এইচ.ডি করেন। এরপর তিনি ব্যুরো অব ইকোনমিক্স -এ গবেষণা সহকারী হিসাবে যোগদান করেন। ১৯৬২ সালে চট্টগ্রাম কলেজে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং ভেন্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯ সালে অর্থনীতিতে পিএইচডি লাভ করেন। 

দেশে ফিরে আসার আগে ১৯৬৯ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত মিডল টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেন। ১৯৭১ সালে  স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের পক্ষে বিদেশে জনমত গড়ে তোলার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। পরের দেশে ফিরে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি অধ্যাপক পদে উন্নীত হন এবং ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত এ পদে কর্মরত ছিলেন।

ইউনুস দারিদ্রের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করেন ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত দুর্ভিক্ষের সময়। তিনি বুঝতে পারেন স্বল্প পরিমাণে ঋণ দরিদ্র মানুষের জীবন মান উন্নয়নে কার্যকরী হতে পারে। সে বছরই তিনি তেভাগা খামার প্রতিষ্ঠা করেন যা সরকার প্যাকেজ প্রোগ্রামের আওতায় অধিগ্রহণ করে।

মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৭৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকে গ্রামীণ ব্যাংক ৫.৩ মিলিয়ন ঋণগ্রহীতার মধ্যে ৫.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ প্রদান করে। ক্ষুদ্রঋণের সাথে পরে যোগ হয় গৃহঋণ, মৎস খামার এবং সেচ ঋণসহ অন্যান্য ব্যাংকিং ব্যবস্থা। গরিবের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তার এই সাফল্যে, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য শিল্পোন্নত দেশসমূহ গ্রামীণ ব্যাংকের মডেল ব্যবহারে উদ্ভুদ্ধ হয়।

২০০৭ সালে সেনা সমর্থীত তত্ত্ববাধায়ক সরকারের সময় একটি রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দেন ড. ইউনুস। সেই থেকেই দেশের অন্যতম বড় দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার বিরোধ তৈরি হয়। একটানা প্রায় ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকা সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা দায়ের হয়। এর মধ্যে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি আদালত তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করে। আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে এক মাসের মধ্যে আপিল করার শর্তে তার আইনজীবীরা জামিন চাইলে আদালত তা মঞ্জুর করেছে। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, যে দোষ আমরা করি নাই, সেই দোষের জন্য শাস্তি পেলাম। 

প্রবল গণআন্দোলন ও বিপুল রক্তপাতের মূখে শেখ হাসিনা ক্ষমতা ও দেশ ছাড়ার পর আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষাথীরাসহ অনেকেই ড. ইউনূসকে অন্তবর্তীকালিন সরকারের প্রধান হবার অনুরোধ জানান। 

ড. ইউনূস প্রথমে সম্মত না হলেও, দেশের মানুষের বিপুল ত্যাগ বিবেচনায় এই জটিল মূহুর্তে দায়িত্ব নিতে জানি হন।  এরই মধ্যে প্যারিস থেকে দেশের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কাল দেশে ফিরলেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়ার কথা রয়েছে তার। 

এর আগে, মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৯৬ সালে সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তখন তিনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যোগ্যতা এবং গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কারো মনে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু গত ১৬ বছরের স্বৈরশাসনে ভেঙ্গেপড়েছে রাষ্ট্রের সকল কাঠামো। হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়ায় প্রায় শূন্য রাষ্ট্রীয় কোষাগার। ওনার সঙ্গে সুশীল সমাজের যারা দেশ পরিচালনায় আসছেন তাদের বেশিরভাগেরই নাই পূর্ব অভিজ্ঞতা। রাজনৈতির মানুষ নয় বলে ইউনূসের নেই অন্ধ চাটুকার বাহিনী। উপরন্তু রাজনৈতিক দলগুলোও কিছু দিনের মধ্যেই ক্ষমতা পাওয়ার আশায় অর্ন্তবর্তী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করতে পারে।

তাই যতোদিনই ক্ষমতায় থাকবেন বয়োজ্যেষ্ঠ ইউনূস এবং তার টিমকে মোকাবেলা করতে হবে কঠিন পরিস্থিতি। তবে আশার কথা তার সময়ে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির নাগাল টানতে পারলে সাধারণের ভালোবাসা পাবে অরাজনৈতিক এই সরকার।

বিভি/এমআর

মন্তব্য করুন: