• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

বরাত-কদরের তফাৎ: লক্ষী-সরস্বতীর ফের

মোস্তফা কামাল

প্রকাশিত: ১৪:৫১, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ফন্ট সাইজ
বরাত-কদরের তফাৎ: লক্ষী-সরস্বতীর ফের

শবে বরাত ও শবে কদর মুসলিমদের কাছে পবিত্র এবং পূণ্যময় দুই উপলক্ষ। ফার্সিতে শবে কদর, আরবিতে লাইলাতুল কদর। এর অর্থ ‘অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত। তবে, বাংলায় সৌভাগ্যরজনী হিসেবে বেশি প্রচারিত। ফার্সি ভাষায় শব ও আরবি ভাষায় লাইলাতুল’ অর্থ হলো রাত্রি বা রজনী। অন্যদিকে ‘কদর’ শব্দের অর্থ মহাসম্মান। 

ইসলাম ধর্ম অনুসারে, এ রাতে ইসলাম ধর্মের ধর্মপ্রচারক মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ)-এর অনুসারীদের সম্মান বৃদ্ধি করা হয়। কোরআনের বর্ণনা অনুসারে, আল্লাহ এই রাত্রিকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন । 

বলা হয়ে থাকে, এই একটি মাত্র রজনীর ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও অধিক সওয়াবের। সুনির্দষ্টভাবে এ রাতটি বেশি গুরুত্ববহ পবিত্র কোআন নাজিল হওয়ার কারনে। ৬১০ সালে শবে কদরে মক্কার নূর পর্বতের হেরা গুহায় ধ্যানরত মহানবী হযরত মুহাম্মদের কাছে সর্বপ্রথম কুরআন নাজিল হয়। সর্বপ্রথম তার কাছে নাজিল হয় সূরা আলাক্বের প্রথম পাঁচটি আয়াত। 

এদিকে শবে বরাতের শাব্দিক অর্থ নিসফে শাবান। মানে মধ্যশাবান, অর্ধশাবান।  হিজরী শাবান মাসের ১৪ ও ১৫ তারিখের মধ্যবর্তী রাতে পালিত মুসলিমদের গুরুত্বপূর্ণ রাত। উপমহাদেশে এই রাতকে শবে বরাত বলা হয়। ইসলামী বিশ্বাস মতে, এই রাতে আল্লাহ তার বান্দাদেরকে বিশেষভাবে ক্ষমা করেন এবং অনেক কিছু বরাদ্দ দেন। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের অনেক মুসলমান নফল ইবাদাতের মাধ্যমে শবে বরাত পালন করেন।  শিয়া মুসলিমরা, এই তারিখে মুহাম্মদ আল-মাহদির জন্মদিন উদ্যাপন করে। তবে সালাফিরা এর বিরোধিতা করে থাকেন।

শবে বরাত ফার্সি শব্দ। এই শব্দের ব্যবহার আরবিতে নেই। তবে শাবান মাসের গুরুত্ব রয়েছে। শাবান মাসের মধ্য তারিখের গুরুত্ব রয়েছে। সিহাহ সিত্তাহ বা বিশুদ্ধ ছয়টি হাদিসগ্রন্থের কোনো কোনোটিতে এ রাতের বিশেষত্ব নির্দেশক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। 

এছাড়াও অন্যান্য হাদিস গ্রন্থেও এই রাতের বিশেষত্বের উল্লেখ পাওয়া যায়। আবার দ্বিমত-মতভেদও রয়েছে। শবে কদর নিয়ে তা নেই। সেই মতভেদের আলোচনায় না গিয়ে এতোটুকু নির্দিধায় বলা যায় যে, ওজনে-গুরুত্বে- ফজিলতে শবে কদরের জায়গা শবে বরাতের অনেক ওপরে। কিন্তু, প্রয়োগে-পালনে শবে বরাতের দিকে ঝোক বেশি। 

এ রাতে অনেক প্রাপ্তির প্রত্যাশা বান্দাকুলের। বিশেষ করে বাংলাদেশে। রাতটিতে রুটি, গোশত, হালুয়া, মিঠাই-মিস্টান্ন খেলেও অনেক সওয়াব। ইবাদত না করে শুধু জেগে জেগে মসজিদে-মহল্লায় ঘোরাফেলা করলেও আল্লাহ সন্তুষ্ট হন। সেই সন্তুষ্টিতে গেল বছরের সব পাপ মুছে দেন, সেইসঙ্গে আগামী এক বছরের জন্য এই ভাগ্যরজনীতে ঐশ্বরিক অনেক বরাদ্দ লেখা হয়ে যায়। এ ধরনের কিছু বানী, হাদিস, চালু আছে। এর পক্ষে ব্যাপক সমর্থন তথা ফতুয়া সামনে নিয়ে আসা হয়। বিষয়টি ধর্মীয় বলে এ নিয়ে বুঝবানরা বিতর্কে গিয়ে ঝামেলায় পড়তে চান না। অথচ পবিত্র কোরআন নাজিলের শবে কদরের মতো ব্যাপক গুরুত্ব ও ফজিলতের রাতটি কোন দিকে  আসে, আর কোনদিক দিয়ে যায় সেই খেয়ালও থাকে না। 

এ ধরনের কিছু ছাপ দেখা যায় সনাতন ধর্মীয়দের মধ্যেও। বিশেষ করে লক্ষী ও শরস্বতী পুজা নিয়ে। বাংলায় শারদীয়া দুর্গোৎসবের পর আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের শেষে পূর্ণিমা তিথিতে কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার আরাধনা করা হয়। বাঙালি হিন্দুর ঘরে ঘরে এক চিরন্তন প্রার্থনা।প্রায় প্রতি ঘরেই ব্যাপক আয়োজনে দেবী লক্ষ্মীর পূজা হয়।

লক্ষ্মী হলেন ধন সম্পত্তির দেবী। ধন-সম্পদের আশায় কেউ কেউ অনেকেই সারা বছর প্রতি বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীর পূজা করে থাকেন। এছাড়া শস্য সম্পদের দেবী বলে ভাদ্র সংক্রান্তি, পৌষ সংক্রান্তি ও চৈত্র সংক্রান্তিতে এবং আশ্বিন পূর্ণিমা ও দীপাবলীতে লক্ষ্মীর পূজা হয়। লক্ষ্মীর পাঁচালি পাঠ করে তাঁর আরাধনা করা হয়। উপচারে ফল মিষ্টি ছাড়াও থাকে মোয়া, নাড়ু ইত্যাদি। লক্ষ্মীর আচার অনুষ্ঠানেও দেখা যায় নানা ধরনের তাৎপর্য। 

কোনও কোনও পরিবারে পূজায় মোট ১৪টি পাত্রে উপচার রাখা হয়। কলাপাতায় টাকা, স্বর্ণ মুদ্রা, ধান, পান, কড়ি, হলুদ ও হরিতকী দিয়ে সাজানো হয় পূজা স্থানটিকে। কিছু কিছু জায়গায় লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে মেলা, নৌকাবাইচও হয়। 'কোজাগরী' শব্দটির উৎপত্তি 'কো জাগতী' অর্থাৎ 'কে জেগে আছ' কথাটি থেকে। বলা হয়, 'যার কিছু (সম্পত্তি) নেই সে পাওয়ার আশায় জাগে, আর 'যার আছে (সম্পত্তি) যে না হারানোর আশায় জাগে'। আর সারারাত জেগে লক্ষ্মীর আরাধনা করাই এই পূজার বিশেষ আচার। কথিত আছে কোজাগরী লক্ষ্মী পূর্ণিমার দিন দেবী রাত্রে খোঁজ নেন - কে জেগে আছেন? যে জেগে অক্ষক্রীড়া করে, লক্ষ্মী তাকে ধন সম্পদ দান করেন । অথচ গুরুত্বে বিশাল হলেও সরশ্বতীতে আয়োজন লক্ষীর তুলনায় অনেক কম।  

শুদ্ধ-বিশুদ্ধকরণের প্রতীক সরশ্বতীর কাছে ধন-সম্পদের বিষয়আসয় নেই। হিন্দুধর্মে জ্ঞান, সঙ্গীত, শিল্পকলা, বাক্য, প্রজ্ঞা ও বিদ্যার্জনের দেবী হচ্ছেন সরস্বতী। লক্ষ্মী ও পার্বতী হিন্দুধর্মে "ত্রিদেবী" নামে পরিচিত। দেবী রূপে সরস্বতীর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ঋগ্বেদে। বৈদিক যুগ থেকে শুরু করে আধুনিক যুগ পর্যন্ত হিন্দুধর্মে তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ দেবীর আসনে। সরস্বতী সাধারণত দ্বিভুজা বা চতুর্ভুজা মূর্তিতে পূজিতা হন। 

দ্বিভুজা মূর্তিতে তাঁর হাতে থাকে বীণা ও পুস্তক অথবা  কলম ও পুস্তক।  চতুর্ভুজা মূর্তিতে থাকে পুস্তক, অক্ষমালা, সুধাকলস ও বীণা অথবা বীণা, সুধাকলস ও পুস্তক; অথবা অক্ষমালা, দুটি শ্বেত পদ্ম ও পুস্তক; অথবা পাশ, অঙ্কুশ , বিদ্যা বা পুস্তক ও অক্ষমালা। এই প্রত্যেকটি বস্তুই শিক্ষার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক। হিন্দুদের একাংশ সরস্বতীর পূজা করেন শ্রীপঞ্চমী বা বসন্তপঞ্চমীর (মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথি, এই দিনটি ভারতের বিভিন্ন অংশে সরস্বতী পূজা বা সরস্বতী জয়ন্তী নামেও পরিচিত) দিন। 

এই দিনটিতে শিশুদের হাতেখড়ি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পশ্চিম ও মধ্য ভারতে জৈন ধর্মাবলম্বীরাও সরস্বতীর পূজা করেন। এছাড়া বৌদ্ধদের কোনও কোনও সম্প্রদায়েও সরস্বতী পূজা প্রচলিত। সেই বৈদিক যুগ থেকে জ্ঞান-বিদ্যা অর্জনের দেবী হিসাবে তাৎপর্য থাকলেও আয়োজনে লক্ষীর চেয়ে পেছনে সরশ্বতী পুজা। 

লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন

(বাংলাভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, বাংলাভিশন কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার বাংলাভিশন নিবে না।)

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: