• NEWS PORTAL

  • সোমবার, ০৬ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

প্রধানমন্ত্রীর ম্যাজিক লন্ঠন: শতভাগ বিদ্যুতের বাংলাদেশ

রিশান নাসরুল্লাহ

প্রকাশিত: ১৩:১৩, ২৪ মার্চ ২০২২

আপডেট: ১৮:১৬, ২৯ নভেম্বর ২০২২

ফন্ট সাইজ
প্রধানমন্ত্রীর ম্যাজিক লন্ঠন: শতভাগ বিদ্যুতের বাংলাদেশ

সরকারের তথ্য বলছে, দেশে ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ মোট বিদ্যুৎ উত্পাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াট। অর্থাৎ বর্তমান সরকারের নানা পদক্ষেপে গেল এক যুগে ২০ হাজার ৫৭২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উত্পাদন ক্ষমতা বেড়েছে। ১৩ হাজার ২১৩ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন এবং ৬ লাখ ২১ হাজার কিলোমিটারের বিতরণ লাইন স্থাপিত হয়েছে দেশজুড়ে। বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য বলছে, দেশে বর্তমানে ৪ কোটি ২১ লাখের বেশি বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। প্রতি পরিবারে সদস্য সংখ্যা গড়ে চারজন হলে শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে।  

পরিসংখ্যান বলছে, দেশের বিদ্যুৎ উত্পাদন ক্ষমতা গত ১২ বছরে পাঁচ গুণ বেড়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা ২৭টি থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৮টিতে। আরো ১৩ হাজার ২১৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন আছে। ভারত থেকে বর্তমানে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। দেশের যেসব স্থানে গ্রিডের বিদ্যুৎ সরাসরি পৌঁছানো যায়নি সেখানে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে এবং সোলার মিনিগ্রিডের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব ও নির্দেশনায় গেল এক যুগে অভাবনীয় সাফল্য এসেছে বিদ্যুৎ খাতে। যার ইতিবাচক প্রভাব লক্ষণীয় অর্থনীতি ও জীবযাত্রায়।

পরিসংখ্যান দিয়ে শতভাগ বিদ্যুতায়নের হিসাবটি পরিস্কার করা প্রায় অসম্ভব। দেশের উপকূল, দুর্গম পাহাড় ও বিচ্ছিন্ন দ্বীপ বিদ্যুতের পরশে এখন আলোকিত জনপদে পরিনত হয়েছে। সন্দ্বীপ, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালি, ভোলার মনপুরা, যমুনা ও তিস্তার অনেক দুর্গম চরাঞ্চলেও বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে সরকার। যা স্থানীয় নাগরিকদের কাছে অবিশ্বাস্য ও স্বপ্নের মতো।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভ্রমণের সুযোগ হয়েছিল উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর প্রায় বিচ্ছিন্ন জনপদ রাঙাবালি, চর মোন্তাজ এবং বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে থাকা জাহাজ মারা সৈকতে। ভ্রমণের পথটি সহজ নয়। পটুয়াখালী শহর হয়ে গলাচিপার পানপট্টি ঘাট থেকে রাঙাবালি যেতে মোটর সাইকেল ও ট্রলার মিলিয়ে পৌঁছাতে সময় লেগেছিল আড়াই ঘণ্টারও বেশি। চারদিকে পানি বেষ্টিত এসব দ্বীপ সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগের মাধ্যমে বিদ্যুতের আওতায় এনেছে সরকার। বিদ্যুতের আলোয় জেগে উঠেছে ঘুমন্ত জনপদ। অল্প কিছুদিন আগেও গ্রামীণ এই জনপদ সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যেত। কিন্তু এখন মধ্যরাতেও চলমান জীবযাত্রা। রাত দশটার পরেও অনেক দোকানে টেলিভিশনে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেট খেলা দেখছিলেন স্থানীয়রা। গ্রামীণ বাজারগুলোতে ছিল শহুরে ছোঁয়া। বিচ্ছিন্ন জনপদের বাসিন্দারা বিদ্যুৎকে চেনেন কারেন্ট হিসেবে। বলেন, লাইট দেখেছি সেই পটুয়াখালী শহরে। নিজের বাসায় আর দোকানে লাইট জ্বলবে, কখনো স্বপ্নেও ভাবেননি তারা। কারেন্ট পাওয়ায় বঙ্গবন্ধু কন্যা ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম শতভাগ মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে। পাশের দেশ ভারত এখনো শতভাগ জনগণকে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে পারেনি, পাকিস্তান আরো পিছিয়ে। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতির সফল বাস্তবায়নে দেশের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছেছে মুজিববর্ষেই। শতভাগ বিদ্যুতায়নের দীর্ঘ এই পথটি বাংলাদেশ পাড়ি দিয়েছে একেবারেই শূন্য থেকে। ১৯৭১ সালে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বলতে তেমন কিছুই ছিল না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সক্ষমতা নিয়ে স্বাধীন দেশে উৎপাদন কার্যক্রমের সূচনা করেন। তার দেখানো পথ ধরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এখন ৪০ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতায় পৌছানোর সাহস ও স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ।

তবে, এত সফলতার পরও বিদ্যুৎ খাত নিয়ে সমলোচনার সুযোগ রয়েছে। এর বড় দায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য থাকা বিশেষ আইন। যেটি নিয়ে নতুন করে ভাবতে পারে সরকার। অন্যদিকে, বিপুলসংখ্যক জনগণকে সংযুক্ত করার সফলতা সরকারের ঝুলিতে রয়েছে ঠিকই, কিন্তু আগামীতে প্রাথমিক জ্বালানির উৎস অনুসন্ধান, টেকসই, নিরবচ্ছিন্ন এবং সাশ্রয়ী বিদ্যুৎসেবা নিশ্চিত হতে পারে সরকারের সবচে বড় চ্যালেঞ্জ।

রিশান নাসরুল্লাহ, বিশেষ প্রতিনিধি, বাংলাভিশন

মন্তব্য করুন: