• NEWS PORTAL

  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

বন্যার বিভীষিকা ও আমাদের কথা বলার বিষয় আশয়!

মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকী তালুকদার

প্রকাশিত: ১৪:১৯, ২৭ জুন ২০২২

ফন্ট সাইজ
বন্যার বিভীষিকা ও আমাদের কথা বলার বিষয় আশয়!

মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকী তালুকদার

বৃহত্তর সিলেট, তৎপার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোসহ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের লক্ষ লক্ষ মানুষ আজ এক ভয়ঙ্কর-বিভীষিকা অতিক্রম করেছেন। বন্যার পানি এবং ভারতীয় ঢলে ভাসছে দেশ। বানভাসি মানুষের আর্তনাদে আকাশ বাতাস ভারী হচ্ছে। 

বিশ্লেষকেরা বলছেন, সোয়া'শো বছরের ইতিহাসে এমন বন্যার নজির নেই। আজ ধনী দরিদ্র সব হারিয়ে সবাই একাকার। অথচ, এই করুণ দৃশ্য বহুজনেরই হৃদয়ে স্থান পাচ্ছে না। আপনার মুখ বা কলম থেকে কী কথা আসার ছিলো আর আপনি পড়ে আছেন কীসব অনর্থকতা নিয়ে। দেশের মেইনস্ট্রিম মিডিয়াগুলোর মুখে কুলূপ। সবাই ব্যস্ত নাট-বল্টু নিয়ে।

আপনি মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন পানিবন্দী মানুষজন ও কর্তৃপক্ষের চরম ঔদাসিন্য-অবহেলার শিকার জনগণের জন্য সাহসের সাথে কথা বলুন। কথা বলুন বানভাসি মানুষ নিয়ে। আপনার পাশে থাকবে আল্লাহর সাহায্য। 

আপনি এক কাপড়ে ওঠে আসা বানভাসি মা ও বোনদের নিয়ে কথা বলুন। দুধের শিশু এবং জীর্ণ কিশোরী, শীর্ণ কিশোরদের নিয়ে কথা বলুন। বাসস্থান, অন্ন ও বস্ত্রহারা আবাল বৃদ্ধ বণিতার গগনবিদারী আর্তনাদ নিয়ে কথা বলুন। বানভাসি মানুষের দুর্দশা নিয়ে কথা বলুন। ভেসে যাওয়া স্বজন নিয়ে কথা বলুন। ভাসমান লাশ নিয়ে কথা বলুন। কাফনপরা ভেসে আসা লাশের সাথে পাওয়া চিরকুট নিয়ে কথা বলুন। দাফনের জায়গা না থাকায় বানের পানিতে বিসর্জিত মৃতদেহ নিয়ে কথা বলুন। জানাযাবিহীন লাশের কথা আলোচনা করুন। পিতৃহারা এতিম সন্তান নিয়ে কথা বলুন। স্বামীহারা বিধবাদের নিয়ে কথা বলুন। কলিজার টুকরো সন্তানহারা মা-বাবা নিয়ে কথা বলুন।

মাঠভরা ধানের ফসল ও গোলাভরা সংরক্ষিত ধান হারানো সর্বস্বান্ত কৃষকের চোখের জল নিয়ে কথা বলুন। সারাজীবনের আহরিত সম্পদ হারানোর উপাখ্যান নিয়ে কথা বলুন। লাখে লাখে পালিত হাঁস মোরগ বানের পানিতে ভেসে যাওয়ার বেদনায় বিলাপ করা মানুষের কথা বলুন। গরু মহিষ, ভেড়া বকরিসহ গবাবাদি পশু পালেপালে ভেসে যাওয়ার করুণ কাহিনী নিয়ে কথা বলুন। খামারিদের নিঃস্বতা নিয়ে কথা বলুন। সর্বহারা ফিশারি ও ঘেরমালিক মৎসজীবীদের নিয়ে কথা বলুন। কর্মহীন ক্ষুধার্ত মানুষ নিয়ে কথা বলুন। ক্ষতিগ্রস্থ মসজিদ মাদরাসা নিয়ে কথা বলুন। মাদরাসার দিশেহারা স্বেচ্ছাশ্রমী শিক্ষকগণকে নিয়ে কথা বলুন। অসুস্থ মানুষ নিয়ে কথা বলুন। 

এমন ভয়ানক পরিস্থিতিতে বিপদগ্রস্ত জনতাকে সাথে সাথে উদ্ধার করা, সেবা ও দেখাশোনা করা, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসার বন্দবস্ত করা, প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা ও বাস্তবায়ন করা ইত্যাদি আসলে কার দায়িত্ব? এসব নিয়ে কথা বলুন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ জনগণের পুনর্বাসন, পরিচর্যার জন্য মূলত দায়বদ্ধতা কাদের? এসব নিয়ে কথা বলুন। মানুষ মানুষের জন্য-- একথা ঠিক কিন্তু কার দায়িত্ব কারা পালন করছেন? তা নিয়ে কথা বলুন। সকল দুর্যোগে কিংবা আপতকালে যদি সামাজিকভাবে আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতা একমাত্র ভরসা হয় তাহলে রাস্ট্রব্যবস্থা আদৌ প্রয়োজন কি না? সে বিষয়েও কথা বলুন।

যেকোনো বিপদ ও মসিবতে জনপ্রতিনিধিদের আত্মগোপন নিয়ে কথা বলুন। জনগণের ব্যাপারে সরকারের উদাসীনতা ও অনাগ্রহ নিয়ে কথা বলুন। দেশের বড়ো বড়ো ধনকুবের এবং বিরাট বিরাট পয়সাওয়ালা কোম্পানি ও এজেন্সিগুলোর নিরবে বসে তামাশা দেখা নিয়ে কথা বলুন। প্রবাসী মানবিক সত্ত্বাগুলোর ত্যাগ ও দয়াদাক্ষিণ্য নিয়ে কথা বলুন। অভিভাবকহীন এই জাতির জন্য বর্তমান উপলব্ধি করে তা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের পথচলা মসৃণ করতে সুপারামর্শ ও দিকনির্দেশনা বিষয়ে সবিস্তারে কথা বলুন। অনর্থক আবেগি বিষয় এবং মুখরোচক ভাইরাল অনুষঙ্গ সতর্ক চোখে এড়িয়ে চলুন।

রাস্ট্র, জনগণ, সমাজ, সমাজের আমজনতা ও ধর্মীয় শত্রুদের আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় ষড়যন্ত্রের শিকারে পরিণত না হয়ে এসো আমরা বুকে বুক মিলিয়ে গণভ্রাতৃত্বের মজবুত প্রাচীর তৈরি করি। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমিন।

লেখক: ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক, বাংলা পোস্ট

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন:

Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2