বিপ্লবী চে গেভারা, মহান কিংবদন্তীর প্রয়াণের দিন আজ

আর্জেন্টিনীয় মার্কসবাদী, বিপ্লবী, চিকিৎসক, লেখক, বুদ্ধিজীবী, গেরিলা নেতা, কূটনীতিবিদ, সামরিক তত্ত্ববিদ এবং কিউবার বিপ্লবের প্রধান ব্যক্তিত্ব এর্নেস্তো গেভারা দে লা সের্না (স্পেনীয়: Ernesto Guevara de la Serna)। তিনি বিশ্বজুড়ে ‘লা চে’ বা শুধু ‘চে গেভারা’ নামেই পরিচিত। এই কিংবদন্তী ১৯২৮ সালের ১৪ জুন জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৬৭ সালের এই দিনে (৯ অক্টোবর) মৃত্যুবরণ করেন।
চে গেভারা তরুণ বয়সেই লাতিন আমেরিকা ভ্রমণ করেন। এই অঞ্চলের একচেটিয়া পুঁজিবাদ, নব্য ঔপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। তার মূল লক্ষ্য ছিলে বিপ্লবের মাধ্যমে এসব অতিক্রম করে দরিদ্রপীড়িত মানুষের পাশে দাড়ানো। শুধুমাত্র বিপ্লবই এর সমাধান; এমন বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে চে রাষ্ট্রপতি জাকোবো আরবেনজ গুজমানের নেতৃত্বাধীন গুয়াতেমালার সামাজিক সংস্কার আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৫৪ সালে সিআইএ-এর ষড়যন্ত্রে গুজমানকে ক্ষমতাচ্যুত করা হলে চে-র বৈপ্লবিক আদর্শ সুসংগত হয়।
পরবর্তীকালে মেক্সিকো সিটিতে বসবাসের সময় তার সঙ্গে রাউল ও ফিদেল কাস্ত্রোর আলাপ হয়। চে তাদের সঙ্গেও আন্দোলনে যোগ দেন। মার্কিন-মদতপুষ্ট কিউবান একনায়ক ফুলগেনসিও বাতিস্তাকে উৎখাত করার জন্য গ্রানমায় চড়ে সমুদ্রপথে কিউবায় প্রবেশ করেন। অনতিবিলম্বেই চে বিপ্লবী সংঘের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড পদে তার পদোন্নতি হয় এবং বাতিস্তা সরকারকে উত্খাত করার লক্ষ্যে দুই বছর ধরে চলা গেরিলা সংগ্রামের সাফল্যের ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কিউবার বিপ্লবের পর চে নতুন সরকারে একাধিক ভূমিকা পালন করেছিলেন। এরপর, বৃহত্তর বিপ্লবে অংশ নেওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি ১৯৬৫ সালে কিউবা ত্যাগ করেন। প্রথমে কঙ্গো-কিনসহাসায় তার বিপ্লব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
এর আগে ১৯৬৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে গেভারা বিশ্বের বিপ্লবীদের কূটনীতিক হিসেবে পরিচিতি পান। তাই তিনি কিউবার প্রতিনিধি হয়ে জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদান করার জন্য নিউ ইয়র্ক শহরে যান। ১৯৬৫ সালে গেভারা আফ্রিকায় যাবার সিদ্ধান্ত নেন এবং কঙ্গোতে চলমান যুদ্ধে তার অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান কাজে লাগাবার প্রস্তাব দেন। ১৯৬৫ সালের ২৪ এপ্রিল তিনি, তার সেকেন্ড কমান্ড ভিক্টর বার্ক এবং ১২ জন সহচরী নিয়ে কঙ্গোয় পৌছান। তার কিছু দিনের মধ্যে প্রায় ১০০ জন আফ্রো-কিউবান তাদের সাথে যোগ দেন।
১৯৬৭ সালে হাভানায় আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে পদযাত্রায় এক মন্ত্রী বলেন যে, চে গেভারা লাতিন আমেরিকার কোন জায়গায় বিপ্লব চালিয়ে যাচ্ছেন। তার পর প্রমাণিত হয় যে, তিনি বলিভিয়ায় গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনা করছেন। বলিভিয়ার সেনাবাহিনীর ভাষ্যমতে তারা গুয়েভারাকে ৭ অক্টোবর গ্রেফতার করে এবং তার মৃত্যু হয় ৯ অক্টোবর ১৯৬৭ সাল বেলা ১.১০ টায়। মৃত্যুর এ সময়কাল এবং ধরন নিয়ে মতভেদ এবং রহস্য এখনো আছে।
বিভি/পিএইচ
মন্তব্য করুন: