সরকারের বিদেশি ঋণ নেয়া নিয়ে আপত্তি তুললো জামায়াত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেন, সরকারের ব্যাপক দুর্নীতি, ঘুষ ও লুটপাটের কারণে দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে পড়েছে। সরকারের বিদেশি ঋণ নেয়া নিয়ে আপত্তি তুলে তিনি আরও বলেন, সরকার দেশকে বিদেশী ঋণ নির্ভর দেশে পরিণত করেছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) দলটির কর্মপরিষদের এক বৈঠকে ডা. শফিকুর রহমান এসব কথা বলেন। ওই সভায় সভাপতিত্বও করেন দলটির আমির। ওই বৈঠকে সরকারের দুর্নীতি, ব্যাংক লুটপাট, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, বিদেশে অর্থ পাচারসহ নানা অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।
পরে দলটির কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগ থেকে মুজিবুল আলমের পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “বর্তমান সরকার বিগত ১৫ বছর যাবত নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়ে জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া অবৈধভাবে জগদ্দল পাথরের মত জাতির ঘাড়ে বসে আছে। জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা নেই। সরকার দলীয় লোকেরা যে যেভাবে পারে দেশের সবকিছু লুটপাট করে নিচ্ছে। এতে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে এবং ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ অভিমত ব্যক্ত করছে যে, সরকারের ব্যাপক দুর্নীতি, ঘুষ ও লুটপাটের কারণে দেশের অর্থনৈতিক মেরুদ- ভেঙে পড়েছে। সরকার দেশকে বিদেশী ঋণ নির্ভর দেশে পরিণত করেছে। গত ২০২৩-২৪ সালের বাজেটে এডিপির অর্ধেকও সরকার বাস্তবায়ন করতে পারেনি। দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য হু হু করে বাড়ছেই। অব্যাহতভাবে লোডশেডিং চলছে। ফলে কলকারখানার উৎপাদন ক্রমাগতভাবে কমে যাচ্ছে।
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, সারাদেশে চলছে সরকার দলীয় টেন্ডারবাজ ও চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা সত্ত্বেও সরকারের মন্ত্রী এবং দলীয় নেতারা দুর্নীতি ও অর্থ লুটপাট করে দেশে-বিদেশে নামে-বেনামে বহু প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। জনগণের কষ্টের টাকা লুটপাট করে কানাডায় বেগমপাড়া, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম, সিংগাপুর ও দুবাইয়ে বিলাশ বহুল বাড়ি ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হয়েছে। সুইস ব্যাংকসহ বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে হাজার হাজার কোটি টাকা জমা করা হয়েছে। বিভিন্ন অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় উঠে এসেছে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে ১১ লক্ষ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। প্রকৃত পরিমাণ এর চেয়ে অনেক বেশি।
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ গভীর উদ্বেগের সাথে আরও লক্ষ্য করছে যে, সরকারের সীমাহীন ঘুষ-দুর্নীতি, লুটপাট, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, বিদেশে অর্থপাচার দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। বিগত ১৫ বছরে বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হলেও কাজ আজও শেষ হয়নি। দফায় দফায় ব্যয়ের অঙ্ক বৃদ্ধি করে টাকা লুটপাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ডেস্টিনি, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, রিজার্ভ ফান্ডের টাকা চুরি এবং সর্বশেষ ইসলামী ব্যাংকের অর্থ লুটপাট দুর্নীতির এক কলঙ্কজনক নজির হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। আওয়ামী দলীয় নেতাকর্মীদের দুর্নীতির ফিরিস্তি লিখে শেষ করা যাবে না। ফরিদপুরে দুই ভাইয়ের ২ হাজার কোটি টাকার অর্থ আত্মসাৎ, পিকে হালদারের হাজার হাজার কোটি টাকার অর্থ কেলেঙ্কারিসহ অর্থ আত্মসাৎ ও লুটপাটের ঘটনায় দেশের আর্থিক কেলেঙ্কারির ভয়বহতা অনুমান করা যায়।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ এই মুহূর্তে লুটপাট বন্ধ এবং বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার এবং আসন্ন জাতীয় বাজেট ঘোষণার পূর্বে দেশের অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে বাস্তবসম্মত গণমুখী বাজেট প্রণয়ন করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে।”
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: