‘গণভবনে চিঠি রেখে এসেছিলাম’, শেখ হাসিনার আরেকটি ফোনালাপ ফাঁস!
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশে ছেড়ে পালিয়ে ভারত চলে যান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তখন তার এই পদত্যাগের খবর দেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান। সম্প্রতি তার সঙ্গে নেতা-কর্মীদের ফোনালাপের কিছু অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে। এতে দেশের আলোচনা নিয়েছে অন্য মোড়, সরগরম নেটদুনিয়া।
তবে শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ফাঁস হওয়া টেলিফোনের কথোপকথনে শেখ হাসিনা জানান, তিনি এখনও পদত্যাগ করেননি। তিনি আসার সময় গণভবনে চিঠি রেখে এসেছিলেন, যা কেউ দেখাতে পারেনি।
বেলজিয়ামে অবস্থানরত নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি থানার ছাত্রলীগের সাবেক সেক্রেটারির সঙ্গে টেলিফোনে এ কথা জানান শেখ হাসিনা।
পাঠকদের জন্য সেই কথোপকথন তুলে ধরা হলো...
শেখ হাসিনা: সে তো জবরদখল করছে। তার কোনো লিগালিটি নাই। উপদেষ্টা বলে আমাদের কোনো পদ নাই। মানুষ খুন করে মেরে, একটা সিচ্যুয়েশন তৈরি করে তারপর সে ক্ষমতায় গেল।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা: জি আপা, জি আপা। এগুলো আমরা ইউরোপীয় পার্লামেন্টকে জানাচ্ছি।
শেখ হাসিনা: আমি তো পদত্যাগ করি নাই। আমাদের কনস্টিটিউশনের আর্টিক্যাল ৫৭ অনুযায়ী যেভাবে পদত্যাগ, আমার কিন্তু সেভাবে পদত্যাগ করা হয়নি। সে কিন্তু ৬ তারিখের জায়গায় ৫ তারিখে (লং মার্চ) নিয়ে আসলো। ৫ তারিখে নিয়ে আসার ফলে এমনভাবে চারদিকে লোক ঘেরাও...আমি দেখলাম যে, এখন যদি ফায়ার ওপেন করে আমার এখানের সিকিউরিটি... তাহলে অনেক লাশ পড়বে। লাশ ফেলে আমি ক্ষমতায় থাকতে চাই না।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা: জি আপা, জি
শেখ হাসিনা: যখন এমন সিচ্যুয়েশন হয়ে গেল যে আমার সিকিউরিটি যারা ছিল তারা বাধ্য হয়ে..তখন আমাকে সরে যেতে হলো গণভবন থেকে। যার ফলে বঙ্গভবনে গিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা আমি দেইনি। কাজেই আমার কিন্তু পদত্যাগ হয়নি। আমি এখনও বাংলাদেশের কনস্টিটিউশনাল ইলেকটেড প্রাইম মিনিস্টার।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা: ইনশাআল্লাহ আপা, আপনি চলে আসবেন তো। আর বেশিদিন নাই।
শেখ হাসিনা: তারপর ফলস ছবি দেখালো আমি সই করছি। সেটা হলো আমার ভিজিটিং বুকের সই। ছবিটা ভালো করে দেখলে দেখা যাবে ওইটা একটা মোটা বই। ওরকম কোনো বইয়ে প্রাইম মিনিস্টার সই করে পদত্যাগ করেন না। আমার সেই চিঠিও কেউ দেখাতে পারছে না। গণভবনে রেখে আসছিলাম, গণভবন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে লুটপাট হয়েছে-ওগুলো সব চলে গেছে।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা: জি আপা
শেখ হাসিনা: যে কটা মার্ডার হইছে পুলিশের গুলিতে কিন্তু হয়নি। মুভমেন্টের ভেতরে কিলিং এজেন্ট ছিল। ওরা যে বুলেট ব্যবহার করছে..অ্যাডাইজার শওকত সাহেব আর্মির লোক..উনি নিজেই বলছেন এই বুলেট তো পুলিশের কাছে থাকে না। তারমানে সাধারণ লোকের কাছে ওই বুলেট ছিল। আজ পর্যন্ত এই বুলেট সম্পর্কে কোনো তদন্ত নেই এবং এই রাইফেল কে ব্যবহার করছে কোনো তদন্ত নেই। এমনকি কিছু পুরুষ মানুষ বোরকা পরে ইন্ডাস্ট্রিতে আগুন দেওয়া থেকে শুরু করে এগুলো করেছে।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা: জি আপা, যখন আপনি বাংলাদেশ ছেড়ে চলে গেছেন, আমরা খাইতেও পারিনি ঠিকমতো।
শেখ হাসিনা: আমি লাশের স্তূপ দেখতে চাইনি।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা: সেটাতো আমরা সবাই জানি।
শেখ হাসিনা: তারপরও কত মানুষ মারলো। পুলিশ মারলো। আনসারদের কোনো হদিস নাই। আওয়ামী লীগের অগণিত নেতা-কর্মী, হিন্দুদের পরিবার... মেরে লাশগুম করা এবং মেয়েগুলোকে তুলে নিয়ে যাওয়া। ইডেন কলেজের একটা মেয়েকে মেরে ঝুলিয়ে রেখে বলল আত্মহত্যা করছে।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা: জি, জি এই তো গত দুয়েকদিন আগে।
কথোপকথনের এই পর্যায়ের কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে এই কল রেকর্ডটি আগস্ট মাসের শেষ দিকে কিংবা সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকের। কারণ গত ২৯ আগস্ট রাজধানীর লালবাগের একটি সাবলেট বাসা থেকে শায়লা শিকদার (২২) নামে ইডেন মহিলা কলেজের এক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা: আপা আপনার অ্যাবসেন্সে দলের এখন দায়িত্বে কে বা দল কীভাবে দাঁড়াবে?
তবে এই প্রশ্নের উত্তর দেননি শেখ হাসিনা।
প্রসঙ্গত, দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর শেখ হাসিনার সঙ্গে অনেকেরই কথোপথনের অডিও ফাঁস হচ্ছে। সম্প্রতি ফাঁস হয়েছে মোহাম্মদ তানভীর কায়সার নামে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে কথোপকথনের অডিও।
বিভি/টিটি
মন্তব্য করুন: