বর্তমান সময়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা কল্পনাও করা যায় না: শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘দেশটা কেউ কেউ পাটগ্রাম বানিয়ে ফেলছে, যার কারণে বর্তমান সময়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা কল্পনাও করা যায় না। তবে, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কতগুলো মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন রয়েছে। সেই মৌলিক সংস্কারের কথা আমরা বলেছি। আমরা মৌলিক সংস্কার করে ছাড়বো এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ।’ শুক্রবার (৪ জুলাই) বিকালে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াতের আমীর বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কথা শুনতে পাচ্ছি। আমরা সবাইকে স্মরণ করে দিতে চাই। কেউ যদি আওয়ামী ফ্যাসিবাদের আমলের মতো স্বপ্ন দেখে থাকেন। তাহলে বলতে চাই, মহান আল্লাহর সাহায্যে আমরা সেই স্বপ্নকে দু:স্বপ্ন করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। এমন কিছু বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না। দেশে কোন মাস্তানতন্ত্র চলবে না, কালো টাকার খেলা চলবে না। প্রশাসনের ক্যু চলবে না। নির্বাচনের সময় কেউ যেন অপকর্ম করতে না পারে। এজন্য আমরা সজাগ রয়েছি। জনগণের ভোটে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনে যারাই জয়ী হবে তাদের স্বাগত জানাতে এখন থেকেই আমরা প্রস্তুত। আমরা আরো বলতে চাই, হাসিনার হাতে সব বাহিনী ছিলো। জনবিস্ফোরণের কারণে ক্ষমতা আটকাতে পারেনি তারা, পালিয়ে গেছে। ফ্যাসিবাদের নিশ্চিহ্ণ না করা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
তিনি আরো বলেন, সংখ্যালঘুদের নিয়ে যারা মায়া কান্না করেছে, তারাই সংখ্যালঘুদের সম্পদ লুট করেছে। আমরা দেশের মধ্যে সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগরিষ্ঠতা মানি না। এ দেশের মাটিতে যারাই জন্ম গ্রহণ করবে, তারাই এদেশের সম্মানিত নাগরিক। আমরা কথা দিচ্ছি, সংবিধান অনুযায়ী আমরা মানুষের পাশে দাঁড়াবো। ওরা মালিক হয়েছিলো জনগণের, আমরা জনগণের সেবক হবো ইনশাআল্লাহ।
ডা. শফিকুর রহমানে বলেন, মদিনার ছায়ার আলো এই বাংলাদেশে আমরা দেখতে চাই। শরিয়ার কথা শুনলে অনেকে গায়ের লোম খাঁড়া হয়ে যায়। কেননা, তারা ঘুষ দুনীতি করতে পারবে না, যা ইচ্ছে তা করতে পারবে না, পর নারীর ইজ্জত লুট করলে তাদের জীবন থাকবে না, চুরি করলে তার হাত থাকবে না। এমন মদিনার ছায়া আমরা এ দেশে দেখতে চাই।
মব প্রসঙ্গে জামায়াতের আমির বলেন, দেশে মব কালচার নতুন না। ৭২ সাল থেকেই দেশে মব চলছে। ৭২ সালে মায়ের স্তন কেটে উল্লাস করেছে, এমন কুলাঙ্গার বাংলাদেশে আছে। সে নারী যেই হউক, সে আমার মা, সে নারী আমার বোন, আমার মেয়ে। তার স্তন কাটার অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি। খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মানুষ মারা হয়েছে। সেগুলো কি মব ছিলো না? সেগুলো মব ছিলো। তবে, মবকে সমর্থন করার সুযোগ নেই আমাদের। কোন নাগরিক নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার অধিকার রাখে না। দেশের সরকার ও বিচার বিভাগ বিচার করবে। সেই আইন দেশের সংবিধানে রয়েছে।
ডা. শফিকুর রহমান আরো বলেন, আবু সাঈদ বিশাল আন্দোলনের আইকনিক পার্সন ছিলেন। তিনি রংপুরের গর্ব। ২৪ জুলাইয়ে যারা নিহত হয়েছে, যারা আহত হয়েছে। আহতদের এখনও সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। এসবের সাথে যারা জড়িত ছিলো, এদেশের মানুষে তাদের বিচার দেখতে চায়। তাদের বিচার হলে, তাহলে ভবিষ্যতে কোন দলকে কেউ দূষিত করতে পারবে না। যদি বিচার না হয়, তাহলে ন্যায় বিচারের সংস্কৃতির অভাবে বাংলাদেশ জঙ্গলে পরিণত হবে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন জায়গায় যা দেখতে পাচ্ছি, বিভিন্ন স্থানে আক্রমণ হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশ্যে বলি, অতিতে যারা অপরাধ করেছেন, তাদের বিষয়টা রাষ্ট্র দেখবে। এখন আপনারা যারা দায়িত্বে রয়েছেন, আপনারা দায়িত্ব পালন করুন। আপনারা ন্যায়ের পক্ষে থাকবেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন। জনগণ আপনাদের পাশে দাঁড়িয়ে আপনাদের শক্তি যোগাবে ইনশাআল্লাহ। আমরাও আপনাদের পাশে থাকবো। কিন্তু, অন্যায় দেখলে আমরা সবার আগে প্রতিবাদ করবো। অতএব অন্যায়কারীর পক্ষ নিবেন না। জনগণের বিপক্ষে যাবেন না। জনগণের বিপক্ষে গেলে কি পরিণতি হয় সেটা ২০২৪ সালে দেখেছেন।
দীর্ঘ ১৭ পর রংপুরে অনুষ্ঠিত এই জনসভায় প্রধান বক্তা ছিলেন সদ্য কারামুক্ত কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য এটিএম আজহারুল ইসলাম। এতে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, মাওলানা আব্দুল হালিম, ঢাকা দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, শহিদ আবু সাঈদের বাবা ও বড় ভাই রমজান আলীসহ জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা। সভাপতিত্ব করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রংপুর মহানগরের আমীর এটিএম আজম খান।
এর আগে সকাল থেকেই জনসভাস্থলে নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেন। দূর-দূরান্ত থেকে রিকশা, অটোরিকশা, ভ্যান, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানে জনসভায় জড়ো হন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। মাঠেই দুটি জামাতের মাধ্যমে জুমার নামাজ আদায় করেন তারা। এছাড়াও রংপুর নগরীর বিভিন্ন মসজিদে নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে জনসভা মাঠে প্রবেশ করেন তারা। জনসমাবেশস্থল ছাড়াও ডিসির মোড়, কাচারী বাজার, আরডিআরএস মোড়সহ বিভিন্ন সড়কে নেতাকর্মীদের উপচেপড়া উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
উল্লেখ্যে, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সব খুনির বিচার, প্রয়োজনীয় সব সংস্কারের পর নির্বাচনসহ চার দফা দাবিতে জনসভার আয়োজন করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রংপুর মহানগর ও জেলা শাখা। জনসভা থেকে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনে জামায়াতের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।
বিভি/পিএইচ
মন্তব্য করুন: