আমরা ডাকসু নির্বাচনের ঘোষণাকে স্বাগত জানাচ্ছি: নাছির উদ্দিন

ছবি: নাছির উদ্দিন নাছির
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির বলেন, জুলাই আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রলীগ এবং আওয়ামীলীগের দোসর হিসেবে কাজ করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত না করে এবং গঠনতন্ত্র সংশোধনের ন্যূনতম সুপারিশ আমলে না নিয়ে ডাকসু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। এই ঘোষণাকে আমরা শিক্ষার্থীদের স্বার্থে স্বাগত জানাচ্ছি।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বিকালে ঢাকা কলেজের জুলাই চত্বরে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক পিয়াল হাসানের সভাপতিত্বে ও মিল্লাত হোসেনের সঞ্চালনায় ছাত্রজনতার জাগরণের জুলাই অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
নাছির ডাকসু নির্বাচনের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর ৪০টি সুপারিশ এবং ৩৭৭টি সংস্কারের লিখিত প্রস্তাবনা দিয়েছিলাম। তার মধ্যে ৪টি সুপারিশ এবং সংস্কারের মাত্র ১ শতাংশ প্রস্তাবনা আমলে নেওয়া হয়েছে। জুলাই আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে কাজ করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত না করে এবং গঠনতন্ত্র সংশোধনের ন্যূনতম সুপারিশ আমলে না নিয়ে ডাকসু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। এই ঘোষণাকে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে দাবি উঠেছিলো, ডাকসুর যিনি সভাপতি হবে, তিনি অন্তত নির্বাচিত হবেন। অর্থাৎ যিনি সভাপতি থাকেন মাননীয় উপাচার্য, তিনি চাইলেই ডাকসুকে বিলুপ্তি ঘোষণা এবং ভিপি, জিএস ও এ জিএসকে বহিষ্কার করতে পারেন। এরকম ৩৭৭টি সংস্কারের দাবি তুলেছিলাম। তারপরও আমরা মনে করি সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্র সংসদ নির্বাচন করবে। তার পূর্বে অবশ্যই আওয়ামী লীগের দোসরদের বিচার করবে বলে প্রত্যাশা করি।
তিনি ছাত্রলীগের বর্বরতার বিষয়ে বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কোনো শিক্ষার্থী হলে থাকতে পারেনি। এমনকি জনাব তারেক রহমানের ফেইসবুক পোস্টে লাইক দেওয়ার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সমর্থকদের মেরে রক্তাক্ত করার ঘটনাও ঘটেছে। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সাথে আমাদের পারস্পরিক যোগাযোগ করা থেকে দূরে রেখেছে সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ। কিন্তু অন্য অনেক ছাত্র সংগঠন গুপ্ত ভাবে থেকে তাদের এবং ছাত্রলীগের কাজ করেছে। তারা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের মতো এরকম বঞ্চিত হয়নি। আমরা মনে করি মৌলিক কোনো সংস্কার বিষয়ে হাতই দেয়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
নাছির উদ্দিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলের কর্মীরা যেভাবে একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে ঠিক সেভাবেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো প্রশাসন বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দল দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। যারা জামায়াত ইসলামীর সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত তারাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন পরিচালনা করছে। এমনকি শিবিরের অনুমতি ব্যতীত কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। ইতিবাচক ও গ্ৰহণযোগ্য সিদ্ধান্ত আসার কথা ছিলো তার পরিবর্তে একটি রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য কোনো সংস্কার না করে তড়িঘড়ি করে রাকসু নির্বাচনের যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।আমার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১০টি ছাত্র সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে আলাপ হয়েছে। তারা বলেন এবিষয়ে তাদের কোনো মতামত নেওয়া হয়নি। শুধু একটি সংগঠনের মতামত নেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের আরও স্বাধীনচেতা এবং শিক্ষার্থীদের স্পিরিটকে ধারণ করে প্রতিটি সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
এনসিপির কার্যক্রমের বিষয়ে বলেন, গণঅভ্যুত্থানের একক মালিকানা চুরি করে যে নতুন রাজনৈতিক দল গঠিত হয়েছে সেই দল বিভিন্ন জেলায় পদযাত্রা ও সমাবেশ করছে। সেখানে তারা রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে সমাবেশ করছে। টাঙ্গাইলে নতুন এক দলের একটি প্রোগ্রাম ছিলো যেখানে নিরাপত্তার জন্য ৯ শত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিযুক্ত করা হয়েছিলো প্রোগ্রাম সফল করার জন্য। তাদের গাজীপুরে একটি প্রোগ্রাম রয়েছে সেখানে তাদের নিরাপত্তার জন্য নাকি ৮-৯ হাজার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োজিত থাকবে। শুধু একটি দলকে কীভাবে গঠন করে দেওয়া যায় তার জন্য এই সরকার সকল প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ৩ জন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ২ জন চাঁদাবাজির দায়ে বহিষ্কার করা হয়েছে। তারা যে চাঁদাবাজি করছে তা সুস্পষ্ট প্রমাণিত। অথচ বহিষ্কারের কোনো দায় না নিয়ে জনাব নাহিদ গণমাধ্যমে বলেছেন বিএনপির চাঁদাবাজির কারণে তাদেরকে বিষোদগার করছে। এরকম দুঃখজনক বক্তব্য কীভাবে দেয় নাহিদ।
তিনি আরও বলেন, আমরা যতগুলো সাংগঠনিক কাঠামো গঠন করেছি তার মধ্যে ঢাকা কলেজ অন্যতম। ঢাকা কলেজ ছাত্রদল সুশৃঙ্খল একটি ইউনিট। নেতৃত্ব মেনে সাংগঠনিক কাঠামোর একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যা তাদের মধ্যে প্রতীয়মান।
বিভি/এআই
মন্তব্য করুন: