শেষ ১০ রোজায় যেসব আমল করবেন

পবিত্র রমজানের দুই-তৃতীয়াংশ শেষ। বিদায়ের পথে গুনাহ মাফ ও তাকওয়া অর্জনের মাস। রহমতের পর আর এক রোজা বাদেই বিদায় নেবে মাগফেরাতও। একজন মুমিন বান্দার জন্য রমজান অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। এ অল্প আমলেই আছে অনেক বেশি ফজিলত রয়েছে। তাই রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত অনেক মূল্যবান।
বিশেষত রমজানের তৃতীয় ভাগ বা শেষ দশকের তাৎপর্য অপরিসীম। খোদ রাসুল (সা.) এই সময়কে অধিক গুরুত্ব দিতেন। রমজানের অন্যান্য দিনে যে আমলগুলো করতেন, শেষ দশকে এসে তার পরিমাণ অনেক বেড়ে যেত।
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, যখন রমজানের শেষ দশক আসতো তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার লুঙ্গি কষে নিতেন (বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাতে জেগে থাকতেন ও পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৮৯৭)
রমজানের শেষ দশক এত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার মূল কারণ হলো-এ মাসে আছে একটি রাত যেটি হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। আরবি শব্দ লাইলাতুল কদরের অর্থ অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত। পবিত্র এই রাতকে ভাগ্যের রাতও বলা হয়। এই রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।
পবিত্র কুরআনে মহান রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি এটি (পবিত্র কুরআন) নাযিল করেছি লাইলাতুল কদরে। তুমি কি জানো কদরের রাত কী? কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও অধিক উত্তম। এ রাতে ফেরেশতা আর রূহ তাদের রবের অনুমতিক্রমে প্রত্যেক কাজে অবতীর্ণ হয়। (এ রাতে বিরাজ করে) শান্তি আর শান্তি- ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত। (সুরা কদর, আয়াত: ১-৫)
পবিত্র রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোর যেকোনো একটি রাত মূলত শবে কদরের রাত। বিভিন্ন হাদিস ও আলেমদের মতে, রমজানের ২৭ তারিখে শবে কদর, যা মূলত ২৬তম রোজার দিন রাতে। তাই শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোয় বেশি বেশি ইবাদত করা উত্তম।
এ ছাড়াও রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করার বিধান রয়েছে। এর মাধ্যমে কদরের রাত পাওয়া নিশ্চিত হয়। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন- তোমরা শেষ দশকে লাইলাতুল কদর তালাশ কর। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৮৯৩)
এ ক্ষেত্রে ইতিকাফের জন্য বিশেষ সওয়াবও রয়েছে। ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রসুলুল্লাহ (সা.) ইতিকাফকারী সম্পর্কে বলেন- সে নিজেকে গুনাহ থেকে বিরত রাখে এবং নেককারদের সব নেকী তার জন্য লেখা হয়। (ইবনু মাজাহ, হাদিস: ১৭৮১)
এছাড়াও রমজানের শেষ দশকে ফিতর বেশি বেশি দান-সদকা করা উচিত। যাদের ওপর জাকাত ফরজ হয়েছে, তাদের তা আদায় করে দেয়া উচিত এবং যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী অধিক পরিমাণে দান-সদকা করা উচিত।
অন্যদিকে শেষ দশকের অন্যতম আমল সাদ্কাতুল ফিতর আদায় করা ইবনু উমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, প্রত্যেক গোলাম, আজাদ, পুরুষ, নারী, প্রাপ্ত বয়স্ক, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিমের ওপর রাসুলুল্লাহ (সা.) সাদ্কাতুল ফিতর হিসাবে খেজুর হোক অথবা যব হোক এক সা’ পরিমাণ আদায় করা ফরজ করেছেন এবং লোকজনের ঈদের সালাতে বের হওয়ার আগেই তা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৫০৩)
ইব্ন আব্বাস (রা.) বর্ণিত অপর হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) সাদ্কাতুল ফিতর রোজাকে বেহুদা ও অশ্লীল কথাবার্তা ও আচরণ থেকে পবিত্র করার উদ্দেশ্যে এবং মিস্কিনদের খাদ্যের ব্যবস্থার জন্য ফরজ করেছেন। যে ব্যক্তি তা (ঈদুল ফিতরের) নামাজের পরে পরিশোধ করে তা অন্যান্য সাধারণ দান-খয়রাতের অনুরূপ হিসাবে গণ্য। (আবূ দাউদ, হাদিস: ১৬০৯)
বিভি/টিটি
মন্তব্য করুন: