কোরবানির ৩ দিনে স্ত্রী সহবাসে ইসলাম কি বলে?

প্রতীকী ছবি
ঈদের রাত কিংবা ঈদের দিনে স্বামী-স্ত্রী সহবাসের কোনো বিধান আছে কি না? এধরনের তথ্য অনেকেই খুঁজে বেড়ান। কেউ কেউ বলেন যে, ঈদের তিনদিন সহবাস জায়েয নেই। তাদের জন্যই আজকের এই আলোচনা।
ঈদের তিনদিন স্ত্রী সহবাস করা জায়েজ নেই যারা বলছেন, তাদের তথ্য সঠিক নয়। বরং ঈদের রাতে ও দিনে স্ত্রী-সহবাস করা বৈধ। শুধুমাত্র রমজান মাসে দিনের বেলায় স্ত্রী-সহবাস করা হারাম।
আরও পড়ুন: এই লোডশেডিংয়ে ফ্রিজ ছাড়াই মাংস সংরক্ষণ করবেন যেভাবে
রমজানে রোজা রেখে ছাড়া আরও তিনটি কারণে স্ত্রী সহবাস করা হারাম। তা হলো-হজ কিংবা উমরার ইহরাম অবস্থায় হারাম। কোনো নারীর হায়েজ (মাসিক/ঋতু/পিরিয়ড) অবস্থায় আর নিফাস (সন্তান জন্মদানের পর) অবস্থায় থাকলে সহবাস হারাম।
ইহরাম: অর্থ হলো কোনো জিনিসকে নিজের ওপর হারাম বা নিষিদ্ধ করে নেয়া। আর এ ইহরামই হজ ও ওমরার প্রথম ফরজ কাজ। পুরুষদের জন্য সেলাইবিহীন দুই টুকরো সাদা কাপড় আর নারীদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যময় শালীন পোশাক পরিধান করাই হলো ইহরাম।
হজ ও ওমরা পালনকারী ব্যক্তি ইহরামের মাধ্যমে নিজের ওপর স্ত্রী সহবাস, মাথার চুল, হাতের নখ, গোঁফ, বগল ও নাভির নিচের ক্ষৌর কর্যাদি, সুগন্ধি ব্যবহার, সেলাই করা পোশাক পরিধান এবং শিকার করাসহ কিছু বিষয়কে হারাম করে নেয়। অর্থাৎ এই সময়ে স্ত্রী সহবাস করা হারাম।
আরও পড়ুন: জবাইয়ের সময় কোরবানিদাতার নাম না নিলে কী কোরবানি হবে?
হায়েজ: হওয়ার বয়স কমপক্ষে নয় বছর। নয় বছরের আগে যদি কোনো বালিকার রক্তস্রাব হয় তাহলে তা হায়েজ বলে গণ্য হবে না। সাধারণত পঞ্চান্ন বছর পর্যন্ত নারীদের হায়েজ হয়ে থাকে। পঞ্চান্ন বছরের পর রক্তস্রাব হলে একে হায়েজ বলে গণ্য করা হবে না। তবে এ বয়সে রক্তের রং যদি গাঢ় লাল হয় অথবা কালচে কাল হয় তাহলে তা হায়েজ বলে গণ্য হবে। [ফতওয়ায়ে আলমগীরী, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৩৬]
হায়েজের মেয়াদ বা সময়কাল কমপক্ষে তিন দিন তিন রাত এবং ঊর্ধ্বে দশ দিন দশ রাত। তিন দিন তিন রাতের কম রক্তস্রাব হলে তা হায়েজ বলে গণ্য হবে না। তেমনি দশ দিন দশ রাতের বেশি রক্তস্রাব হলে তা হায়েজ বলে গণ্য হবে না। একে বলা হবে ‘ইস্তিহাজা’ বলা হয়।
আরও পড়ুন: কোরবানির গোশত ভাগ করতে যে যে নিয়ম মানতে হবে
যদি কোনো নারীর অভ্যাস অনির্দিষ্ট থাকে- কখনো চার দিন, কখনো সাত দিন, কখনো দশ দিন রক্তস্রাব হয় তাহলে এসব হায়েজ বলে গণ্য হবে। তার যদি দশ দিনের বেশি রক্ত আসে, তাহলে দেখতে হবে গত মাসে কত দিন এসেছিল, ততদিন হায়েজ ধরা হবে আর বাকীদিনগুলো ইস্তিহাজা হিসেবে বিবেচিত হবে। [শরহে বেকায়া, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১১০-১১২]
নিফাস: সন্তান প্রসবের পর স্ত্রীলোকের জরায়ু থেকে যে রক্ত বের হয় তাকে ইসলামী শরীআতের পরিভাষায় ‘নেফাস’ বলা হয়। [হিদায়া, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৬৯]
আরও পড়ুন: কোরবানি গরুর সাথে সেলফি; জেনে নিন ইসলাম কি বলে! (ভিডিও)
নিফাসের সময়কাল উর্ধ্বে চল্লিশ দিন। আর কমের নির্দিষ্ট সীমা নেই। সন্তান প্রসবের পর যদি কোনো স্ত্রীলোকের রক্তস্রাব না হয় তবুও তার গোসল কারা ওয়াজিব। [ফতওয়ায়ে আলমগীরী, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৩৭] গর্ভপাত হওয়া অবস্থায় সন্তানের অঙ্গ গঠন হয়ে থাকলে, যে রক্তস্রাব আসে তা নিফাসের রক্ত বলে গণ্য হবে। চল্লিশ দিনের বেশি রক্তস্রাব হলে প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে চল্লিশ দিন নিফাসের সময় গণ্য হবে এবং বাকীদিনগুলো ইস্তিহাজা হিসেবে বিবেচিত হবে। আর যদি প্রথম সন্তান না হয় এবং নির্দিষ্ট অভ্যাস থাকে তাহলে তার অভ্যাসের দিনগুলো নিফাসের দিন হিসেবে ধরা হবে। বাকী দিনগুলো ইস্তিহাজার। [ফতওয়ায়ে আলমগীরী, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৩৭]
এর বাইরে সব সময়ই স্ত্রী সহবাস করা যাবে। এতে কোনো বিধি নিষেধ নেই। তবে স্ত্রীর প্রতি জুলুম করে সহবাসে ইসলাম অনুৎসাহিত করে। অন্যদিকে স্ত্রীকে স্বামীর আকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দেয়ার কথাও বলা হয়েছে।
মন্তব্য করুন: