রমজানে মৃত্যু হলে শাস্তি মাফ হয়, কী বলছে ইসলাম?

সমাজে বহুল প্রচলিত কথা- রমজান মাসে মারা গেলে কবরের আজাব মাফ হয়ে যায়। কিন্তু এ সম্পর্কিত সুস্পষ্ট কোনো হাদিস প্রসিদ্ধ হাদিসগ্রন্থসমূহে পাওয়া যায় না।
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, যখন রমজান মাস আসে তখন জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় আর জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়।’ (সহিহ বুখারি: ৩২৭৭)
তবে এই হাদিসে কবরের শাস্তি মাফ হওয়ার বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। এর ব্যাখ্যায় 'ফাতহুল বারি'তে বলা হয়েছে, জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়ার মর্ম হচ্ছে- এই মাসে আল্লাহতায়ালা বান্দাকে নেক কাজের তাওফিক দেন, যেমন রোজা, কিয়ামুল লাইল ও অন্যান্য কাজ; পাশাপাশি নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দেন।
কেননা এই নেক কাজগুলো করা আর নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকা-ই তো জান্নাতে প্রবেশ করা এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ।
হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রমজান মাসে মৃত ব্যক্তি থেকে কবরের আজাব উঠিয়ে নেয়া হয়। কিন্তু এর সনদ নিতান্তই দুর্বল। এটি ইমাম রজব হাম্বলি তার ‘আহলুল কুবুর ওয়া আহওয়ালু আহলিহা ইলান নুশুর’ গ্রন্থে (পৃ. ১০৫) উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এর কোনো সনদ কিংবা হাদিসগ্রন্থের নাম তিনি উল্লেখ করেননি। তাই এটি জাল না জয়িফ কিছুই নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে না।
কেউ কেউ আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.)-এর হাদিসটি দলিল হিসেবে পেশ করে বলেন- ‘রমজান সমাপ্তির সময়ে যার মৃত্যু সংঘটিত হয় সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’। (হিলইয়াতুল আওলিয়া: ৫/২৩)
কিন্তু এটি দলিল হিসেবে সঠিক নয়। কারণ প্রথমত এর সনদ নিতান্তই দুর্বল। দ্বিতীয়ত এখানে জান্নাতে প্রবেশের কথা বলা হয়েছে— কবরের আজাব সংক্রান্ত কিছুই বলা হয়নি। অর্থাৎ এটি সহিহ বুখারির প্রথমোক্ত হাদিসটির মতোই।
কেউ হয়তো বলতে পারেন, হাদিস দুর্বল হলে সমস্যা কী, দুর্বল হাদিস তো ফজিলত বর্ণনার ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য। না, এটি আকিদা; ফাজায়েলের বিষয় নয়। আর আকিদার ক্ষেত্রে দুর্বল হাদিস কখনই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
সারকথা, রমজান মাসে মৃত্যুবরণ করলে কবরের আজাব মাফ হয়ে যায়, এটি সরাসরি কুরআন-হাদিস দ্বারা প্রমাণিত কথা নয়। সুতরাং এমন কথা প্রচার না করাই কাম্য। একজন মানুষের জান্নাতে যাওয়া না যাওয়া, কবরের আজাব হওয়া না হওয়া— এসব নির্ভর করে তার ব্যক্তিগত আমলের ওপর।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: