• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ০৮ আগস্ট ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

‘রমজানের আগে নির্বাচনের ঘোষণা জাতিকে আশার আলো দেখিয়েছে’

প্রকাশিত: ০৯:৪৪, ৭ আগস্ট ২০২৫

ফন্ট সাইজ
‘রমজানের আগে নির্বাচনের ঘোষণা জাতিকে আশার আলো দেখিয়েছে’

বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, রমজানের আগে নির্বাচনের ঘোষণা হতাশ জাতিকে আশার আলো দেখিয়েছে। গণতন্ত্রের মূলভিত্তি হচ্ছে নির্বাচন। নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র হয় না। আবার, গণতন্ত্র ছাড়া নির্বাচন প্রায় অর্থহীন বা আত্মাহীন দেহের মতো। তাই, আমরা একটি মানবিক রাষ্ট গঠনের প্রত্যয় নিয়ে নির্বাচনী ট্রেনের যাত্রী হওয়ার জন্য সবাইকে আহ্বান জানাই। যারা নির্বাচনের বিপক্ষে অবস্থান নেবে জাতির কাছে তারা গণতন্ত্রের দুশমন হিসেবে চিহ্নিত হবেন।

বুধবার (৬ আগস্ট) বিকালে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের বছরপূর্তি উপলক্ষে পেশাজীবীদের র‍্যালিপূর্ব সমাবেশে তিনি এসব বলেন। পেশাজীবীরা পরে মিছিল নিয়ে বিএনপি আয়োজিত বিজয় র‍্যালিতে যোগ দেন। 

বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহবায়ক প্রফেসর ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেনের তত্ত্বাবধানে সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরীর নেতৃত্বে র‍্যালিতে প্রফেসর ড. মোর্শেদ হাসান খান, প্রফেসর ড. শামসুল আলম সেলিম, ইঞ্জিনিয়ার আফজাল হোসেন সবুজ, ইঞ্জিয়ার আবদুল হালিম ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুল আলম, ইঞ্জিনিয়ার উমাইশা উমায়ন মনি, শিক্ষক নেতা জাকির হোসেন, সাংস্কৃতিক জোটের রফিকুল ইসলাম, জাহানারা সিদ্দিকী, ডা. রাকিব, ইঞ্জিনিয়ার ফখরুল আলম, কৃষিবিদ সানোয়ার হোসেন, সাংবাদিক এরফানুল হক নাহিদ, অপর্না রায়, কৃষিবিদ ড. শফিক, সাংবাদিক রাশিদুল হক, ইঞ্জিনিয়ার মুসলিম উদ্দিন, সাংবাদিক আল আমিন, রিয়েল রোমান, ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল ইসলাম, হাফিজুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সরকারের নৈতিক ভিত্তি শক্তিশালী থাকে। গত ১৭টি বছর এদেশের মানুষ ছিল ভোটাধিকারহীন। মানুষ এখন ভোট দিতে চায়। তাদের অধিকার ফিরিয়ে পেতে চায়।

তিনি আরও বলেন, চব্বিশের জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ থেকে মুক্তি পেয়েছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। বিগত ১৬ বছর শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনে সোনার বাংলাকে পরিণত করা হয়েছিল মৃত্যু উপত্যকায়। দেশের মানুষ ছিল অধিকার হারা। দেশে গণতন্ত্র ছিল না। মানবাধিকার ছিল না। আইনের শাসন ছিল না। ভোটাধিকার ছিল না। বাক স্বাধীনতা ছিল না। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ছিল না। ‘ন্যায় বিচারের ব্যাংক’ হয়ে পড়েছিল দেউলিয়া। মানবতার কোষাগার শূন্য হয়ে পড়েছিল। ছিল না স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি। পেশাজীবী ও বুদ্ধিজীবীরাও রেহাই পাননি শেখ হাসিনার নিষ্ঠুর শাসন থেকে। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক আফতাব আহমদ, সাংবাদিক ফরহাদ খাঁ দম্পতি, এডভোকেট এইউ আহমদ, ব্যাংকার বিএম সাকের হোসাইনসহ অসংখ্য পেশাজীবীকে হত্যা করা হয়েছিল। শেখ হাসিনার ১৬ বছরে জীবন দিতে হয়েছিল ৬৭ জন সাংবাদিককে। পিলখানায় হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ৫৭ জন দেশপ্রেমিক সেনাকর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়। শাপলা চত্বরে ব্রাশফায়ারে অনেক আলেমকে হত্যা করা হয়। গুম-খুন ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, কৃষিবিদ, শিক্ষক, ব্যাংকার থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিককর্মী কেউ রেহাই পায়নি নিষ্ঠুরতা থেকে।

পেশাজীবীদের এ নেতা বলেন, চাকরি, পদোন্নতি হতো দলীয় বিবেচনায়। ভিন্নমতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শাস্তিমূলক বদলি, পদোন্নতি বঞ্চিত ও চাকরিচ্যূতি ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই এবং র‍্যাব গোপন টর্চার সেল আয়নাঘর তৈরি করে সেখানে ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর চালানো হতো বর্বর নির্যাতন। আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে মিথ্যা মামলায় শুধু জেলেই নেওয়া হয়নি, আদালত চত্বরে রক্তাক্ত করা হয়। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় আমার দেশ পত্রিকার অফিস। দৈনিক সংগ্রামের বর্ষিয়ান সম্পাদক আবুল আসাদকে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা নিজ অফিস থেকে পিটিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। যায়যায়দিন সম্পাদক শফিক রেহমান, দ্য নিউ নেশন সম্পাদক ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন, সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম, বিএফইউজে সভাপতি ও আমাদের পেশাজীবী নেতা রুহুল আমিন গাজী, ডা: এ জে এম জাহিদ হোসেন, ডা: ফরহাদ হালিম ডোনার, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ড. শহিদুল আলম, ফটোসাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খান, বিএফইউজের সাবেক সহ-সভাপতি রাশিদুল ইসলাম, কনক সারোয়ার, অলিউল্ল্যাহ নোমানসহ বহু সাংবাদিককে গ্রেফতার করে নিষ্ঠুর নির্যাতন চালানো হয়।

তিনি বলেন, ভোটাধিকার হরণ, ভিন্নমত দমন, বিনাবিচারে মানুষ হত্যা, গুম, খুন, ক্রসফায়ার-নির্যাতন-নিপীড়ন, গায়েবি মামলা, দুর্নীতি, লুটপাট, বিদেশে পাচার, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, ব্যাংকের ভল্টে সোনা জালিয়াতি, বিমানবন্দরের ভল্ট থেকে সোনা চুরি, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, ব্যাংক লুট, শোষণ-বঞ্চনা এমনভাবে বেড়েছিল যে, দেশ মনুষ্য বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে। এমনি পরিস্থিতিতে বিরোধী রাজনৈতিক জোটের পক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক দফার ডাক দেন। এরই মধ্যে বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্ররা তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। ছাত্রদের পক্ষে এসে দাঁড়ায় পেশাজীবীরা। রাজপথে নেমে আসে অভিভাবক ও রাজনৈতিক কর্মীরাও। হাসিনার নির্দেশে গুলি চালানোর নির্দেশ আসলো। পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবি নির্বিচারে গুলি চালালো ছাত্রদের বুকে। সারি সারি লাশ পড়ে থাকলো রাস্তায়। ছাত্ররা থামলো না। বিমান থেকেও চালানো হলো গুলি। একজন নয়, দু'জন নয়- চৌদ্দশ’ ছাত্রকে হত্যা করা হলো। থামলো না ছাত্ররা। দাসত্বের শৃঙ্খল ভাঙার এক অভাবনীয় গণঅভ্যুত্থান দেখলো বাংলাদেশ। দেড় যুগ ধরে নিপীড়িত মানুষের ক্ষোভের বারুদ বিস্ফোরিত হলো চব্বিশের জুলাই-আগস্টে। পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। উল্লাসে ঢাকার রাজপথে নেমে আসে কোটি জনতা।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জিত হয়েছিল। ৫৩ বছর পর স্বাধীন ভূখণ্ডে দাঁড়িয়ে বুকে মাথায় লাল সবুজের গর্বিত পতাকা নিয়ে ৫ আগস্ট আরও এক বিজয় অর্জন করলো তেজোদীপ্ত তারুণ্য। তাদের দৃঢ় প্রত্যয়ে পাশে এসে দাঁড়ানো পেশাজীবীসহ স্বতস্ফূর্ত জনতার অকুণ্ঠ সমর্থন জন্ম দিলো এক উজ্জ্বল ‘চব্বিশ’ এর। জনগণ যার নাম দিয়েছে ‘দ্বিতীয় বিজয়’। তিনি বলেন, এই দ্বিতীয় বিজয় হতাশ জাতির মাঝে আশার আলো জাগিয়েছে। মানুষ নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। বেড়েছে জনপ্রত্যাশাও।

উপস্থিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যাশার কথা যদি বলি, আমরা চাই এমন একটি দেশ যেখানে দুর্নীতি, হানাহানি, গুম, খুন, রাহাজানি, ক্রসফায়ার, ধর্ষণ, নাগরিক নির্যাতনের জন্য থাকবে না আয়নাঘর। থাকবে না বৈষম্য, দারিদ্র, বেকারত্ব, বাজার সিন্ডিকেট, ক্ষমতার অপব্যবহার। আমরা একটা কল্যাণমূলক রাষ্ট্র চাই, যে রাষ্ট্র সকল নাগরিকের কল্যাণে কাজ করবে। আমরা সেই রাষ্ট্র চাই যেখানে সকল নাগরিক সমঅধিকার ভোগ করবেন। কোনো বৈষম্য থাকবে না। চাকরির ক্ষেত্রে দলীয় বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ পদোন্নতি হবে। আমরা এমন একটা রাষ্ট্র চাই যার মালিক হবেন দেশের জনগণ। আমরা নীতিভিত্তিক রাষ্ট্র চাই, নেতাভিত্তিক নয়। যে রাজনৈতিক দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন তাদের জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থাকতে হবে। এক ব্যক্তির ইচ্ছায় নয়, জনগণের ইচ্ছায় দেশ পরিচালিত হবে। আমরা চাই, জনগণই ভোট দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। দিনের ভোট রাতে হবে না। হবে না ডামি নির্বাচন। নতুন বাংলাদেশকে আমরা স্বাবলম্বী দেখতে চাই। সমাজ ও রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়া দুর্নীতির অবসান চাই। একটা শোষণমুক্ত সমাজ চাই। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত প্রশাসন চাই। আমরা সর্বত্র ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন চাই। আমরা আর কোনো বিচারপতির মুখে শুনতে চাই না ‘টুথ ইজ নো ডিফেন্স’।

কাদের গনি চৌধুরী আরও বলেন, আমরা এমন এক দেশ চাই, যেখানে নারী-পুরুষ-শিশু-বৃদ্ধ, জাতি-ধর্ম, বর্ণ, গোত্র বিভিন্ন মতাদর্শ নির্বিশেষে সবাই নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের কাছে সর্বোচ্চ মর্যাদা পাবে। সাংবিধানিকভাবে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের স্বীকৃতি ও অধিকার সুরক্ষা পাবে। সরকারি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানুষকে সম্মান করবে সর্বোচ্চ সেবা দেবেন। মোদ্দা কথা, আমরা দুর্নীতিমুক্ত, জবাবদিহিমূলক এবং ন্যায় বিচারের বাংলাদেশ দেখতে চাই যে বাংলাদেশ হবে মানবিক। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতে সংস্কার চাই। এ বাহিনী যেন রাজনৈতিক দলের আজ্ঞাবহ বা দলীয় ঠেঙ্গাতে বাহিনীতে পরিণত না হয়।

তিনি বলেন, আমরা আশা করি, সুশৃঙ্খল ও সমৃদ্ধতায় আমাদের এই দেশ হবে এমন এক আইডল, যা দেখে পিছিয়ে পড়া অন্যদেশগুলো শিক্ষা নেবে। বাংলাদেশের দিকে অবাক বিস্ময়ে তাকাবে। আমাদের এই মাতৃভূমিতে একজন লোকও না খেয়ে থাকবে না। রাস্তায় ধুলোয় মলিন দিন কাটাবে না কোনো শিশু, কেউ কাউকে ধোঁকা দেবে না, দেশের টাকা বিদেশে পাচার করবে না। অন্যের ক্ষতি করবে না। অন্যের দুঃখে ব্যথিত হবে, পাশে দাঁড়াবে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে।

সাংবাদিকদের এই নেতা বলেন, নারীদের জন্য চাই মায়ার চাদরে ঘেরা অকৃত্রিম প্রেমের বাংলাদেশ। যেখানে আর লজ্জিত ও লাঞ্ছিত হবে না একজন মা-বোন। বৃদ্ধ বাবা মায়ের জন্য চাই বিশুদ্ধ মায়া ও শ্রদ্ধার বাংলাদেশ। যেখানে কেউ আর নিজেদের বৃদ্ধ বাবা-মাকে বোঝা মনে করবে না। সর্বশেষ তারুণ্যনির্ভর বাংলাদেশ চাই। তরুণদের জন্য অপার সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ। তরুণরাই যেন আমাদের টেনে নিয়ে যায় স্বপ্নের দেশে।

বিভি/পিএইচ

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2