• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪

দুবাইয়ে স্বর্ণের শোরুম দেওয়া আরাভ খানের গ্রামে হইচই

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি 

প্রকাশিত: ২৩:২১, ১৬ মার্চ ২০২৩

আপডেট: ২৩:২৫, ১৬ মার্চ ২০২৩

ফন্ট সাইজ
দুবাইয়ে স্বর্ণের শোরুম দেওয়া আরাভ খানের গ্রামে হইচই

দুবাইতে স্বর্ণের দোকান উদ্বোধনের খবরে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় আলোচনার ঝড় বইছে। কিন্তু কেন এই ঝড়?  দুবাইয়ের হিন্দ প্লাজায় আরাভ জুয়েলারি নামে এই দোকানটির মালিক কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ ইউনিয়নের আশুতিয়া গ্রামের আরাভ খান। তবে তার প্রকৃত নাম নিয়ে রয়েছে রহস্য। সোহাগ মোল্লা, রবিউল ইসলাম, শেখ হৃদি ও আরাভ খান বলে এলাকায় পরিচিত তিনি

সোহাগ মোল্লা বা আরাভ খান আশুতিয়া গ্রামের দিনমজুর মতিয়ার রহমান মোল্লার ছেলে। মতিয়ার রহমান মোল্লা এক সময় বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলায় ফেরি করে সিলভারের হাড়ি পাতিল বিক্রি করতেন। এখানেই ১৯৮৮ সালে সোহাগ মোল্লার জন্ম হয়। ২০০৫ সালে চিতলমারি সদরের একটি বিদ্যালয় থেকে সোহাগ মোল্লা এসএসসি পাশ করে। দারিদ্রতার কারণে এরপরে আর তার লেখাপড়া হয়নি। 

আরও পড়ুন: অভিযোগ নিয়ে মুখ খুললেন সাকিবদের দাওয়াত দেওয়া আরাভ খান (ভিডিও)

চিতলমারি থেকে ২০০৮সালে ভাগ্যের অন্বেষণে সে ঢাকা চলে যায়। ঢাকা গিয়ে নাম পরিবর্তন করে হয়ে যায় মোল্লা আপন। জড়িয়ে পরে অপরাধ জগতে। ঢাকায় পুলিশ হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডের কারণে ঢাকার বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে প্রায় ডজন খানেক মামলা হয়। এরপর পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে সোহাগ মোল্লা ওরফে মোল্লা আপন, ওরফে রবিউল ইসলাম রবি, ওরফে শেখ হৃদি, ওরফে আরাভ খান ভারতে কোলকাতয়া পালিয়ে যায়। সেখান থেকে আরাভ খান চলে যায় দুবাইয়ে। 

এদিকে আরাভ খানের দুবাইয়ে এই স্বর্ণের দোকান উদ্বোধনের খবর জানাজানি হলে এলাকায় আলোচনায় ঝড় ওঠে। সকলের মুখে মুখে একই প্রশ্ন সোহাগ মোল্লা কিভাবে রাতারাতি এতো টাকার মালিক বনে গেলেন। 

আরও পড়ুন: বিতর্কের মাঝে দুবাইয়ে একসঙ্গে শো-রুম উদ্বোধন সাকিব ও দীঘির (ভিডিও)

সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় সোহাগ মোল্লা ওরফে আরাভ খানের চাচাতো ভাই ফেরদৌস মোল্লার সাথে। তিনিও সোহাগ মোল্লা ওরফে আরাভ খান অল্প দিনে এতো টাকার মালিক হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। গত কয়েকদিন আগে সোহাগ মোল্লা ওরফে আরাভ খান তার দুই বোন ও মা বাবাকে দুবাই নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন তার চাচাতো ভাই ফেরদৌস মোল্লা।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিগত ৪ বছর আগে সে গ্রামে এসেছিল। ৪টি গরু জবাই করে কোরবানী করেছিল। গ্রামের মানুষকে দাওয়াত করে খাইয়েছিলো। সে গ্রামে আসলেই সব শ্রেণি পেশার মানুষকে মোটা অংকের সহযোগিতা করেছে। গ্রামের এমন কোন সেক্টর নেই, যেখানে সে টাকা খরচ করেনি। তাই তার বিরুদ্ধে গ্রামের কেউ নেগেটিভ কোন কথা বলতে চায় না।  তিনি গ্রামের খেলার মাঠেও অঢেল টাকা ঢেলেছেন। 

হিরণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাজাহারুল আলম পান্না বলেন, সোহাগ মোল্লা ওরফে আরাভ খান একই ব্যক্তি। আমার গ্রামেই তার বাড়ি। সে একটি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। গত পাঁচ সাত বছর ধরে সে এলাকায় আসেনা। হঠাৎ করে সে কিভাবে এতো টাকার মালিক হলো এটা আমাদের বোধগম্য নহে। ওই ইউপি চেয়ারম্যান আরো বলেন, ২ মাস আগে আমি হজ করতে  সৌদি আরব গিয়েছিলাম। সেখানে সোহাগ মোল্লার সাথে আমার দেখা হয়েছিল। সে আমাকে দুবাই যাওয়ার অনুরোধ করে। সে আমাকে  যাতায়াত খরচ বিমান টিকেট ও স্বর্ণ গিফট করতে অফার করে। আমি তার অফার প্রত্যাক্ষাণ করি।

সাকিব-হিরো আলমকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে ডিবি

কোটালীপাড়া থানার ওসি মোঃ জিল্লুর রহমান বলেন, সোহাগ মোল্লা ওরফে মোল্লা আপন, ওরফে রবিউল ইসলাম রবি, ওরফে শেখ হৃদি, ওরফে আরাভ খানের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৯টি ওয়ারেন্ট আমায় থানায় এসেছে। আমি ওয়ারেন্টগুলো তামিল করার জন্য চেষ্টা করেছি। কিন্তু তার কোন হদিস আমরা পাইনি।

এদিকে খুনের মামলার আসামির দোকান উদ্বোধনে যাওয়ায় ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও ইউটিউবার হিরো আলমকে তদন্তের প্রয়োজনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের এই তথ্য জানিয়েছেন।

এদিকে বিষয়টি ভিন্ন কথা বলেছেন জুয়েলার্সের মালিক আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফেসবুক লাইভে আসেন তিনি। খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি সঠিক নয় বলে দাবি করেন আরাভ খান। এবং তিনি পালিয়ে যাননি বলেও উল্লেখ করে বলেন, আমার আমেরিকান গ্রিন কার্ড আছে। কানাডিয়ান পাসপোর্ট আছে। কই আমি তো চলে যাইনি। তিনি বলেন, আমি খুনের সঙ্গে জড়িত নয়, গুমের সঙ্গে জড়িত।

আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খান ওরফে সোহাগ মোল্লা ওরফে রবিউল ইসলাম রবি লাইভে এসে এ ঘোষণা দেন, আমি একজন দিনমজুরের ছেলে। আমি ঢাকায় এসে অনেক কষ্ট করেছি। হোটেলে কাজ করেছি। অনেক কষ্ট করে আমি আজ এ অবস্থানে এসেছি। আল্লাহ যদি আমাকে সুস্থ রাখে তাহলে খুব শীঘ্রই দেশের ৬৪টি জেলায় ৬৪টি মসজিদ নির্মাণ করবো। 

তবে সবকিছু ছাপিয়ে গ্রামজুড়ে আলোচনা চলছে- এতো অল্প সময়ে বিশাল টাকার মালিক আরাভ কিভাবে হলেন? তিনি কোন জাদুর কাঠি পেয়ে আজ বিলাসী জীবনযাপন করছেন? উত্তর যেন কোনোভাবেই মেলাতে পারছেন না তার পরিচিতজনরা।

বিভি/এমএস/এজেড

মন্তব্য করুন: