• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

গোল্ডেন গার্ল ঋতুপর্ণার মা ক্যান্সারে আক্রান্ত, অর্থাভাবে হচ্ছে না চিকিৎসা

নন্দন দেবনাথ, রাঙামাটি

প্রকাশিত: ১৯:১৫, ৭ জুলাই ২০২৫

আপডেট: ১৯:১৫, ৭ জুলাই ২০২৫

ফন্ট সাইজ
গোল্ডেন গার্ল ঋতুপর্ণার মা ক্যান্সারে আক্রান্ত, অর্থাভাবে হচ্ছে না চিকিৎসা

পাহাড়ের কৃতি সন্তান বাংলাদেশের জাতীয় নারী ফুটবল দলের অন্যতম খেলোয়ার ঋতুপর্ণা চাকমা যখন দেশের নারী ফুটবল দলকে বিশ্বে অন্যতম উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখনই দেশের এই কৃতি ফুটবলার ঋতুপর্ণার মা ভূজোপতি চাকমা কঠিন রোগে আক্রান্ত।

তিনি ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন ঋতুপর্ণার বোন পাম্পী চাকমা। তার মা জানেন না তিনি ভয়াল একটি রোগে আক্রান্ত। অর্থের অভাবে আধুনিক উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত রত্নগর্ভা এই মা। দেশের এই কৃতি ফুটবলারের মায়ের চিকিৎসা সেবায় সরকার এবং দেশের মানুষের সহায়তা চেয়েছেন ঋতুপর্নার বোন। পাশাপাশি সরকারের দেয়া আশ্বাস অনুযায়ী চান তাদের বিধ্বস্ত ভাঙ্গা ঘরের পরিবর্তে নতুন ঘর, এলাকার রাস্তা ও পরিবারের বেকার বোনদের সরকারী চাকরী।

রাঙ্গামাটি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, ঋতুপর্নার মায়ের অসুস্থতার কথা আমরা জানতে পারিনি। তিনি বলেন, আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে ঋতুর মায়ের অসুস্থতার কথা জানতে পারলাম। আমরা যতটুকু সহযোগিতা করা দরকার ততটুকু করবো। এছাড়া ঋতুর জন্য নতুন বাড়ী তৈরী করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আশা করছি পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রনালয় থেকে ঋতুর বাড়ীর জন্য কাগজপত্র চলে আসলে দ্রুত সময়ের মধ্যে বাড়ী কাজ শুরু হবে। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমান টাকা রেডি রাখা হয়েছে। 

সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর পাহাড়ের কৃতি ফুটবলারদের নানা সংকট নিরসনে সরকারের দেয়া আশ্বাসই পূরণ হোক এটা চান পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ঋতুপর্ণাদের খুজে বের করে আনা ক্রীড়া সংগঠক ও মঘাছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তণ প্রধান শিক্ষক বীর সেন চাকমা। দারিদ্রের কষাঘাতে হারিয়ে না যাক পাহাড়ের এই রত্ন এমনটাই দাবী সকলের।

রাঙ্গামাটি শহর থেকে কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ী এলাকার মগাছড়িতে জন্ম পাহাড়ের রত্ন জাতীয় নারী ফুটবলার ঋতুপর্ণা চাকমার। মূল সড়ক থেকে প্রায় সাড়ে ৩-৪ কিলোমিটার পাহাড়ী এলাকা পায়ে হেটে যেতে হয় ঋতুপর্ণার বাড়ি। সরকারী আশ্বাস অনুযায়ী এখনো করা হয়নি দুর্গম এই এলাকার রাস্তা। কষ্ট করে এখনো পায়ে হেটে পাড়ি দিতে হয় এই পাহাড়ী এলাকা।  

ঋতুপর্ণার মেজবোন পাম্পী চাকমা বলেন, আমরা চার বোন। একমাত্র ভাই তিন বছর আগে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে। চার বোনের মধ্যে তিন বোনের বিয়ে হয়ে গেলেও সবারই রয়েছে আর্থিম সমস্যা। ঋতুর ফুটবল খেলা থেকে আয় করা অর্থ দিয়ে চলে আমাদের পরিবার। আমাদের মা দীর্ঘ সময় ধরে দুরারোগ্য ব্যাধি ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত। অর্থের অভাবে পরিবারের পক্ষে মাকে  চিকিৎসা করানো যাচ্ছেনা। মায়ের চিকিৎসা সহায়তাসহ কৃতি ফুটবলার ঋতুর পরিবারের সংকট নিরসনে দেশের মানুষসহ সরকারী সহায়তা চান ঋতুপর্ণার বোন পাম্পী চাকমা।

কথা হয় ঋতুপর্ণা চাকমার মা ভূজোপতি চাকমার সাথে। কোন রকম বিছানায় বসতে পারেন তিনি। মেয়ে ঋতুপর্ণা চাকমার খেলা দেখে খুশি তিনি। মেয়ের জন্য দোয়া চেয়েছেন, তার আশা মেয়ে ঋতু একদিন বিশ্ব জয় করবে। তবে তিনি যে একটি দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত তা তিনি জানেন না। ঋতুপর্ণা চাকমার মা ভূজোপতি চাকমা জানান, আমরা পরিবার নিয়ে খুবই কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। সাফ জয়ী হওয়ার পর আমাদের জমিসহ নতুন একটি ঘর এবং বেকার মেয়েদের কর্মসংস্থানের কথা বলা হলেও তা এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি। পাশাপাশি নির্মাণ করা হয়নি গ্রামের নতুন রাস্ত। সরকারী আশ্বাস অনুযায়ী সকল সমস্যা নিরসনের দাবি জানিয়েছেন ঋতুপর্ণা চাকমার মা ভূজোপতি চাকমা।

পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ঋতুপর্ণা চাকমা, মনিকা চাকমা, আনাই মঘিনি, আনু মঘিনি, রুপনা চাকমাসহ শত শত খেলোয়াড় যার হাত ধরে তৈরী হয়েছে তিনি হলেন রাঙ্গামাটি মঘাছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সাবেক প্রধান শিক্ষক ও রাঙ্গামাটির ক্রীড়া সংগঠক বীর সেন চাকমা। তিনি বলেন, সাফ জিতে আসার পর নিজের সাংসারিক অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি দেশের অন্যতম কৃতি ফুটবলার ঋতুর। ঋতুপর্ণা চাকমার মায়ের সুচিকিৎসাসহ ঋতুপর্ণার সকল সংকট নিরসনে বর্তমান সরকারকে  এগিয়ে আসার জন্য তিনি অনুরোধ জানান। তাছাড়া পাহাড়ে ছড়িয়ে থাকা আরো মেধাবী খেলোয়ার তৈরীতে সরকারকে  উদ্যোগ গ্রহন করার আহবান জানান এই ক্রীড়া সংগঠক।

২০১৫ সালে ক্যানসারের মারা যান ঋতুপর্ণার বাবা বরজ বাঁশি চাকমা। বাবার অণুপ্রেরণায় ফুটবলে এসেছেন ঋতুপর্ণা। পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছেন পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে পড়ছেন এই তারকা ফুটবলার। ২০২৪ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে জয়সূচক গোল করেছিলেন ঋতুপর্ণা চাকমা। তাঁর বাঁ পায়ের দুর্দান্ত গোলে স্বাগতিক নেপালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ।

এবার এএফসি উইমেন্স এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের দ্বিতীয় ম্যাচে তারা মিয়ানমারকে হারিয়েছে ২-১ গোলে। দুটি গোলই করেছেন ঋতুপর্ণা চাকমা। দেশের ফুটবলকে অন্যতম উচ্চতায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ঋতুপর্ণারা দারিদ্রতার কষাঘাতে হারিয়ে যাবে না এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: