কুঁসিকাটায় জীবন পাল্টেছে লিজার, হয়েছেন আত্মনির্ভর
আফরোজা আক্তার লিজা। যিনি নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে নিয়েছেনে আর্থিক সক্ষমতায় তেমনি অর্ধশত অসচ্ছল নারীকেও স্বাবলম্বী হতে টেনে তুলছেন। নেত্রকোণা সদরের প্রত্যন্ত গ্রাম পঁচাশিপাড়া গ্রামে এক রক্ষণশীল পরিবারে জন্ম। বিয়ের পর টানাপোড়েনে স্বামীর সংসারেও টিকতে পারেননি। এক সন্তানকে নিয়ে একদিকে রক্ষণশীল পরিবার আরেকদিকে সংসার ভেঙ্গে যায়। এমন পরিস্থিতির পরতে পরতে থাকা বাঁধা ডিঙ্গিয়ে আজ সফল নারী উদ্যোক্তা। নিজে হয়েছেন আত্মনির্ভর।
২০০৩ সালে এসএসসি পাশ করার পর পারিবারিক অনীহায় ইচ্ছে থাকার পরও আর কলেজ জীবনে প্রবেশ করতে পারেননি। ২০০৭ সালে বিয়ে দিয়ে দেয় পরিবার। তখনও আশা ছিল স্বামী,সন্তান নিয়ে সুখের এক জীবন অতিবাহিত করবেন। কিন্তু সংসারে স্বামীর অবহেলা, লাঞ্ছনা,নিপীড়ন হয়ে দাঁড়ায় নিত্যদিনের। দিনের পর দিন এভাবেই এক সন্তানকে নিয়ে ৮ বছর কাটানোর পর আর হয়ে উঠেনি সংসারে থাকা। টিকতে না পেরে সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়ি ফিরে নেমে পড়েন জীবনের অসম যুদ্ধে।
বাবার পঁচাশীপাড়ার গ্রামের বাড়ি থেকে নেত্রকোণা শহরের মালনীরোডর পাটপট্রি এলাকার বাবার বাসায় উঠেন। শৈশবের রপ্ত থাকা সুঁই-সুতাকেই জীবনের পরবর্তী গল্পের আঁধার বানিয়ে এগোতে শুরু করেন। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরসহ অন্যান্য অধিদপ্তর থেকে ব্আফরোজা আক্তার লিজা। যিনি নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে নিয়েছেনে আর্থিক সক্ষমতায় তেমনি অন্তত অর্ধশত জন অসচ্ছল নারীকেও স্বাবলম্বী হতে টেনে তুলছেন। নেত্রকোণা সদরের প্রত্যন্ত গ্রাম পঁচাশিপাড়া গ্রামে এক রক্ষণশীল পরিবারে জন্ম। বিয়ের পর টানাপোড়েনে স্বামীর সংসারেও টিকতে পারেননি। এক সন্তানকে নিয়ে একদিকে রক্ষণশীল পরিবার আরেকদিকে সংসার ভেঙ্গে যায়। এমন পরিস্তিতির পরতে পরতে থাকা বাঁধা ডিঙ্গিয়ে আজ সফল নারী উদ্যোক্তা। নিজে হয়েছেন আত্মনির্ভর।
২০০৩ সালে এসএসসি পাশ করার পর পারিবারিক অনীহায় ইচ্ছে থাকার পরও আর কলেজ জীবনে প্রবেশ করতে পারেননি। ২০০৭ সালে বিয়ে দিয়ে দেয় পরিবার। তখনও আশা ছিল স্বামী,সন্তান নিয়ে সুখের এক জীবন অতিবাহিত করবেন। কিন্তু সংসারে স্বামীর অবহেলা, লাঞ্ছনা,নিপীড়ন হয়ে দাঁড়ায় নিত্যদিনের। দিনের পর দিন এভাবেই এক সন্তানকে নিয়ে ৮ বছর কাটানোর পর আর হয়ে উঠেনি সংসারে থাকা। টিকতে না পেরে সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়ি ফিরে নেমে পড়েন জীবনের অসম যুদ্ধে। নিজেকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলেন। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে বাটিক, বিউটিফিকেশন,সেলাইসহ বিভিন্ন কাজে নেন প্রশিক্ষণ। এছাড়াও যুব উন্নয়ন ও বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) থেকে উদ্যোক্তার প্রশিক্ষণ নেন। উদ্যোক্তা হিসেবে বিসিকের নিবন্ধিত হন।
পাঁচ হাজার টাকায় শুরু করেন, কুশি-কাটা দিয়ে শিশুদের জামা থেকে অন্য আরো পন্য। দোকানে দোকানে পন্য সরবরাহ করে কিছু আয় হতে থাকে। অদম্য নারী লিজা এই আয়কে সম্বল করে স্বপ্ন বুনেন আত্মনির্ভরের। ধীরে ধীরে সুঁই -সুতার কাজের পরিধি বাড়াতে থাকেন। আত্মকর্মসংস্থানহীন নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদেরকেও নিজের কাজে সম্পৃক্ত করতে থাকেন। ওইসব নারীরা বাড়িতে থেকেই কাজ করে পন্য সরবারহ করেন লিজার কাছে। দিন যায়,সময় এগোতে থাকে । পাল্লা দিয়ে লিজাও এগিয়ে যেতে থাকেন। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে ৬০ হাজার টাকা ঋণ নেন। ২০২৩ সালে নিজের পন্য নিয়ে শহরের নাগড়ার শিববাড়ি এলাকায় যাত্রা শুরু করেন, “লিজা বুটিকস হাউজ” নামের সেলস সেন্টার। লিজার পন্য এখন দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে আমেরিকা, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে। লিজা বুটিকস হাউজের পন্য তৈরীতে বর্তমানে ৫০ জনেরও বেশি নারী যুক্ত রয়েছেন। মাসে গড়ে অন্তত ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় হয়। লিজা এখন স্বপ্ন দেখেন, শহরের প্রাণকেন্দ্রে বড় আকারে একটি শোরুম করার।
একটি কারখানা গড়ে তোলার। তার কাজে আরো অনেক নারীকে সম্পৃক্ত করার। লিজা শুধুই আর্থিক সক্ষমতার নয় নিজেকে সামাজিক কাজেও সম্পৃক্ত করেছেন। বিশেষ করে তার সাথে কাজ করা নারীদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানো, সন্তানদের শিক্ষা জীবনসহ নানা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিও করে চলেছেন। একইভাবে সরকারি দপ্তরের সাথে সমন্বয় করে কৃষি বিপণন ব্যবস্থা থেকে শুরু করে বাল্য বিয়ের কুফল, শিশুদের সুরক্ষাসহ সমাজের প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্যে কাজ করছেন।
লিজার বুটিকস হাউজের পণ্য তৈরীতে যুক্ত নারী শহরের নাগড়া এলাকার কামরুন্নাহার বাবলী বলেন,“ আমার সংসারে অভাব-অনটন লাইগ্যাই আছিল। বছর দেড়েক আগে লিজা আপার সাথে দেখা অইছিল। এর পর থেইক্যা আমার জীবনডা বদলে গেছে। তার সাথে কাজে যোগ দেই। প্রশিক্ষণ নেই লিজা আপার কাছে। অহন সেখান থেইক্যা মাসে বেশ কিছু টাকা আয় হয়। সংসারে এই টাকা লাগাতে পারতাছি। ছেলে- মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাইতে পারতাছি। ”
একই এলাকার আরেক নারী মিনা বেগম বলেন, “অভাবের সংসারে আমার দু:খের দিন ঘুচিয়েছে লিজা আপা। তার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে লিজা বুটিকস হাউজের পন্য তৈরী করি। অহন আমার জীবন অনেকটাই সহজ অইয়া গেছেগা। মাসে মাসে এইহান থেইক্যা যে ট্যাহা পাই এই দিয়া পোলাপান নিয়া ভালাই আছি।”
বাবলী আর মিনার মতো নেত্রকোনঅ শহর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার চৈতি সরকার, শিল্পী রায়,রুণা সরকার, ডলি দেবনাথ,কাঞ্চন দে,তন্নী সাহা,শিউলী সাহাসহ অর্ধশতাধিক নারী লিজা বুটিকস হাউজে কাজ করে চলেছেন।
ডলি দেবনাথ দুই সন্তান আর স্বামীর সংসারে তিনিও ছিলেন অসচ্ছল। তিনি বলেন, স্বামীর আয়ে সংসার চলছিল না। লিজা আপাই আমারে ডাইক্যা কইলো কাজ করতে। সেলাইয়ের কাজও শিখাইছে। অহন তার হাউজেই কাম করি। ট্যাহা পাই । আয় আইতাছে। সংসারেও অহন আর আগের মতো টানাটানি নাই।আমার মতন লিজা আপার কাছে ৫০ জনেরও বেশি মহিলা কাজ করেন।
আফরোজা আক্তার লিজা বলেন, আমি আমার জীবনের শুরুতেই ধাক্কা লাগে। সংসার জীবনে স্বামী মাদকাসক্ত ছিল। তার সাথে মানিয়ে চলার অনেক চেষ্টা করি। কিন্তু তা হয়ে উঠেনি। তখন আমি সিদ্ধান্ত নেই কিছু করার। ছোট বেলায় শেখা হাতের কাজ কুশি-কাটার সেলাই নিয়ে শুরু করি। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে প্রশিক্ষণ নেই। কুশি-কাটার পন্য তৈরী করে বিক্রি করতে থাকি। অন্য নারীদের সাথে নিয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আমার কাজে যুক্ত করতে থাকি। তারাও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে থাকে। আমার পন্যও দিন দিন বিক্রি বাড়তে থাকে। অনলাইনে,অফলাইনে বিক্রি হয়। দেশের বাইরেও আমার পন্য যেতে থাকে। মাত্র ৫হাজার টাকা নিয়ে যাত্রা শুরু করার পর এখন লিজা বুটিকস হাউজ নামে সেলস সেন্টার ওপেন করি। এই সেলস সেন্টার থেকেই এখন পন্য বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন মেলাতেও আমার পন্য নিয়ে অংশ নেই।আমার সাথে যুক্ত থাকা নারীরাও আর্থিকভাবে অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্যে চলছেন।এখন চেষ্টা করছি শহরে একটি বড় আকারে শোরুম দেয়ার। আমার কু্শিরা -কাটার পন্যের একটা ব্র্যান্ড করতে চাই। একটা বড় আকারে করাখানা করতে চাই। সরকারের সহযোগীতা দরকার। স্বল্প ও সহজ পদ্ধতিতে ঋণ পেলে স্বপ্নের পথে এগিয়ে যেতে পারবো।
অন্য নারীদের বিষয়ে লিজা বলেন, সমাজের সব নারী শুধু ঘরে বসে না থেকে স্বাবলম্বী হতে কোন কিছু একটা কিছু কাজ যেন করেন। এভাবে সব নারীই যেন নিজ নিজ সংসারে ভুমিকা রাখতে পারেন। নিজে যেন পরের বোঝা না হন। তাহলে জীবনের যে সৌন্দর্য্য আছে তা উপলব্ধি করতে পারবেন। দেশের অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখতে পারবেন।
জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক ফারজানা পারভীন বলেন, আফরোজা আক্তার লিজা স্বামীর সাথে বিচ্ছেদের পর যুব উন্নয়ন তেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে সুই-সুতার পন্য তৈরী করে ব্যবসার মাধ্যমে উদ্যোক্তা হিসেবে পথ চলতে শুরু করেন। অদম্য ইচ্ছা শক্তিতে আজ তিনি সফল। গড়ে তোলেছেন লিজা বুটিকস হাউজ। সেখানে অনেক নারী কাজ করে তারাও অর্থনৈতিক সচ্ছলতায় ফিরছেন। নিজেও স্বাবলম্বী হয়েছেন। এছাড়াও তিনি নিজেকে সামাজিক উন্নয়নমুলক কর্মকান্ডেও জড়িত রেখেছেন। এতে করে সমাজে বিশেষ করে নারীরা সচেতন হচ্ছেন।
বিভি/এজেড




মন্তব্য করুন: