• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

বাংলাদেশে সম্ভাবনার ‘ব্লু  ট্যুরিজম’ কেন সম্ভব হচ্ছে না?

প্রকাশিত: ২১:৫১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

আপডেট: ১৯:১০, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

ফন্ট সাইজ
বাংলাদেশে সম্ভাবনার ‘ব্লু  ট্যুরিজম’ কেন সম্ভব হচ্ছে না?

বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন দ্বীপেও রয়েছে এই স্কুবা ট্যুরিজমের সম্ভাবনা

সেন্টমার্টিনকে বলা হয় দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা। মাত্র ১৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত এই দ্বীপে মৌসুমে প্রতিদিন ভ্রমণ করেন সাড়ে ৩ হাজারের বেশি পর্যটক। যা এখানকার ধারণক্ষমতার তুলনায় অনেক বেশি। সমুদ্রের নীলাভ স্বচ্ছ পানি আর প্রবাল পাথরই এই দ্বীপের পর্যটন আকর্ষণের মূল উৎস। কিন্তু অতিরিক্ত পর্যটকের চাপ দ্বীপটির জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট করার পাশাপাশি পুরো সেন্টমার্টিনকেই হুমকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে জানিয়ে আসছেন গবেষকরা। 

২০২০ সালে আন্তর্জাতিক ওশান সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ১৯৮০ সালে সেন্টমার্টিনকে ঘিরে ছিল ১৪১টি প্রবাল পাথর কিন্তু ২০১৮ সালে সেটি মাত্র ৪০টিতে পৌঁছেছে। যা ২০৪৫ সাল নাগাদ পুরোপুরি বিলীন হয়ে যেতে পারে। 

তবে গবেষকরা মনে করেন, সেন্টমার্টিনের উপরিভাগের সৌন্দর্য দেখতে গিয়ে পর্যটকরা এর জীববৈচিত্র্যগত ক্ষতি করলেও মূলত প্রবাল পাথরে গঠিত দ্বীপটির মূল সৌন্দর্য এর পানির নিচের অংশে। এখানকার সমুদ্রতলে কোরাল রিফ-কে ঘিরে রয়েছে সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি। এখানকার কোরাল রিফ-এর মাঝেই খেলা করে নানান রঙের মাছসহ সামুদ্রিক বিভিন্ন প্রাণিরা। এখানে বসবাস ও প্রজনন হয় বহু সামুদ্রিক প্রাণির। যার সৌন্দর্য উপর থেকে দেখতে পারেন না অধিকাংশ পর্যটক। 

অথচ ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, তুরস্কসহ বিশ্বের যেসব দেশে কোরাল রিফ রয়েছে তারা স্কুবা ট্যুরিজমের মাধ্যমে এই সৌন্দর্য দেখিয়ে সবচেয়ে বেশি পর্যটক আকর্ষণ করে এবং ব্যাপক বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে থাকে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের গোয়া, বালি এবং আন্দামান দ্বীপেও এখন পর্যটকদের আকর্ষণ করছে এই স্কুবা দিয়ে। যা এসব দেশের ব্লু ট্যুরিজমের অন্যতম অনুসঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হয়।

বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন দ্বীপেও রয়েছে এই স্কুবা ট্যুরিজমের সম্ভাবনা। ইতোমধ্যে ওশানিক স্কুবা ডাইভিং সেন্টার নামে এখানে রয়েছে একটি প্রতিষ্ঠানও। এই প্রতিষ্ঠানের ডুবুরিদের সহযোগিতায় প্রায়ই দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এসে দেখেন সেন্টমার্টিনের সমুদ্রতল। বিদেশি পর্যটকদের কাছে সুনীল পর্যটনের এই ক্ষেত্রটি ছড়ানো গেলে শুধু সেন্টমার্টিনের সমুদ্রতল দেখিয়েই আয় করা সম্ভব বিপুল বৈদেশিক মূদ্রা। যদিও এখনো তেমন আলোর মূখ দেখেনি এই সম্ভাবনাটি।

বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন দ্বীপেও রয়েছে এই স্কুবা ট্যুরিজমের সম্ভাবনা

দুবাই শহরে ঘুরতে গিয়েছেন কিন্তু দুবাই একুরিয়াম ও আন্ডারওয়াটার জু দেখেননি এমন পর্যটক পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু কক্সবাজারে ঘুরতে আসা বহু পর্যটক জানেনই না এখানেও রেডিঅ্যান্ড ফিস ওয়ার্ল্ড নামে রয়েছে সমুদ্রতলের প্রাণীদের একটি চিড়িয়াখানা। যেখানে রয়েছে বাংলাদেশ নিকটবর্তী সমুদ্রে বিচরণকারী অন্তত ৩ শতাধিক প্রাণী। কারণ নেই তেমন কোনো প্রচার-প্রচারণা।

উপরে উল্লেখিত পর্যটনের দুটি অনুসঙ্গই ব্লু ট্যুরিজমের অংশ। বাংলাদেশে শুধু যে এই দুটি অনুসঙ্গ আছে তা নয়। থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের সমুদ্র পর্যটনে সমৃদ্ধ দেশগুলোতে সাধারণ ব্লু ট্যুরিজম বলতে সমুদ্রের পানিতে বিনোদনমূলক গোসল, সাঁতার কাটা, সৈকতে হাঁটা, ঘুড়ি ওড়ানো, প্যারাগ্লাইডিং, সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত উপভোগ, সার্ফিং, স্কুবা ডাইভিং, সি-বার্ড ওয়াচিং, জলযানে গভীর সমুদ্রভ্রমণ, সমুদ্রে মাছ ধরা, জেলেদের মাছ ধরা উপভোগ, ওয়াটার স্কিয়িং, জেট স্কিয়িং, সি কায়াকিং, ডলফিন-তিমি ও প্রকৃতি উপভোগ, সমুদ্রে ভাসমান হোটেল-রেস্তোরাঁ, ফিশ অ্যাকোয়ারিয়াম ও বিচ কার্নিভাল, জেলেপাড়া, শুঁটকিপল্লী ও মৎস্য আড়তে মাছের বৈচিত্র্য উপভোগ ইত্যাদিকে বুঝানো হয়। থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর এমনকি পাশ্ববর্তী দেশ ভারতও সমুদ্র কেন্দ্রীক এসব অনুসঙ্গ দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে আন্তর্জাতিক পর্যটকদের মাধ্যমে। 

তথ্য বলছে, থাইল্যান্ড ২০১৮ সালে পর্যটন থেকে আয় করেছে ৫ হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার। পাশ্ববর্তী দেশ ভারত একই বছর পর্যটন থেকে ২০০ কোটি মার্কিন ডলার আয় করলেও ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে বাংলাদেশ আয় করেছে মাত্র ৩৪ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার। 

থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর বা ভারতের মতোই সমুদ্র উপকূলীয় দেশ বাংলাদেশ। সেসব দেশে প্রচলিত ব্লু ট্যুরিজমের প্রায় সবগুলো অনুসঙ্গই আছে বাংলাদেশে। তবু  আয়ের দিক থেকে বাংলাদেশের এত পিছিয়ে থাকার জন্য পর্যটন বিশ্লেষকরা দায়ী করছেন, ব্লু ট্যুরিজমের ক্ষেত্রগুলো সম্পর্কে জানার ঘাটতি, প্রচারণা না থাকা এবং এসব অনুসঙ্গকে পর্যটকদের কাছে তুলে ধরার উদ্যোগের সংকটকেই। 

২০২৩ সালে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের করা এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে সমুদ্র থেকে দেশের অর্থনীতিতে আয় এসেছে ৬.২ বিলিয়ন ডলার। যা দেশের জিডিপির প্রায় ৩ শতাংশ। প্রতিবেদনে বাংলাদেশে সমুদ্র ভিত্তিক পর্যটন বা ব্লু ট্যুরিজমের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে সেটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে জিডিপি আরও বাড়ানো সম্ভব হবে বলেও তুলে ধরা হয়। 

সম্ভাবনার চিত্র তুলে ধরে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের রয়েছে ২০৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারের সামুদ্রিক এলাকা, ৫৮০ কিলোমিটার উপকূলরেখা, ২০০ নটিক্যাল মাইল এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন এবং ১২ নটিক্যাল মাইল টেরিটোরিয়াল জোন। বাংলাদেশের জন্য নীল অর্থনীতির বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করার জন্য অভূতপূর্ব সুযোগ তৈরি করে রেখেছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় এবং সামুদ্রিক অঞ্চলের ৭৫টি বড় এবং ছোট দ্বীপ রয়েছে। যার সবগুলোই সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যের জন্য পর্যটন স্থান হিসাবে বিবেচিত। 

এছাড়া প্রবাল প্রাচীর, সামুদ্রিক শৈবাল, বালুকাময় সমুদ্র সৈকত, বালুচর, জলাভূমি, বন্যা অববাহিকা, মোহনা, উপদ্বীপ, ম্যানগ্রোভ ইত্যাদি জলজ জীবনের কয়েকটি উদাহরণ। বর্তমানে এই অঞ্চলগুলিতে ১৭টি মৎস্য অভয়ারণ্য, ৫টি জাতীয় উদ্যান এবং ১০টি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রয়েছে, যার সবকটিই পর্যটন খাতের প্রসারে বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। 

এসব সম্ভাবনাকে আমলে নিয়ে সরকারের অন্য মন্ত্রণালয়গুলোর পাশাপাশি অতিসম্প্রতি ব্লু  ট্যুরিজম নিয়ে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ সরকারের পর্যটন বিষয়ক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড। আগামী ২৫ বছরের জন্য (২০২৩-২০৪৭) সংস্থাটির তৈরি করা ট্যুরিজম মাস্টারপ্ল্যানে প্রাথমিকভাবে ১১টি ক্লাস্টারের ২৫৫টি পর্যটক স্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। এ মাস্টারপ্ল্যানে ব্লু ট্যুরিজমের অংশ হিসেবে উপকূলবর্তী ১৩টি দ্বীপের শিগগিরই উন্নয়নের কথাও বলা হয়েছে। 

তবে সমুদ্র অর্থনীতি ও পর্যটন বিশ্লেষকরা মনে করেন, দেশে ব্লু ট্যুরিজমে সফলতা পেতে নতুন কোনো অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়, বরং প্রয়োজন যেসব সম্পদ আছে সেটি ব্যবহারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ এবং সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মী তৈরি। একইসঙ্গে বাংলাদেশের এসব পর্যটন সম্পদকে বিশ্বের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ব্যাপক প্রচার প্রচারণার ব্যবস্থাকরণ।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেরিটাইম ইউনির্ভাসিটির মেরিটাইম ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. সাইফুল ইসলাম বাংলাভিশনকে বলেন, বিশ্বজুড়ে ব্লু ইকোনমির প্রধান উপাদান ধরা হয় ব্লু ট্যুরিজমকে। গ্লোবালি ব্লু ইকোনমিতে ট্যুরিজমের অবদান ২৬% এবং ইইউতে ৩৩%। আর ব্লু ট্যুরিজমের দুটি অংশ। একটি হলো কোস্টাল ট্যুরিজম অপরটি হলো মেরিটাইম ট্যুরিজম। কোস্টাল ট্যুরিজম মূলত সমুদ্র উপকূল অর্থাৎ বিচ কেন্দ্রীক আর মেরিন ট্যুরিজম হলো সমুদ্রের ভেতরে। বিশ্বব্যাপী সমুদ্রে স্কাইরো মডেলে পর্যটন হয়ে থাকে। এই মডেলে ৫টি স্তরে সমুদ্রকে ভাগ করা হয়, তার প্রথম স্তর হলো বিচ কেন্দ্রীক। তারপর ১০০ মিটার থেকে ১ কিলোমিটার পর্যন্ত হলো ক্লাস-২, ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত ক্লাস-৩, ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত ক্লাস-৪ এবং তার উপরে হলে তাকে ক্লাস-৫ ধরা হয়। অথচ আমাদের উপকূল থেকে এক কিলোমিটারের পরে কোনো এক্টিভিটিই নেই। অর্থাৎ আমরা এখনো ক্লাস-১ এ পড়ে আছি। সমুদ্রে না নেমেও দেশের ট্যুরিজমে শুধু বিচের অবদান ২৫ শতাংশের বেশি। যখন আমরা ক্লাস-৫ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবো তখনি আমরা থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার মতো হতে পারবো। 

‘৫ম স্তরে পৌঁছাতে হলে ক্রুজ শিপ লাগবে, শিপের জন্য জেটি নির্মাণ করতে হবে। মানুষ সমুদ্রের গভীরে গিয়ে কি করবে? সেটার জন্য মেরিন থিম পার্ক লাগবে, স্কুবা ডাইভিং থাকতে হবে। এগুলো করার জন্য প্রচুর বিনিয়োগ দরকার। কিন্তু আমাদের দেশে বিনিয়োগে আগ্রহ কম। আমাদের শিল্পপতিরা মনে করেন ২-৩শ’ কোটি টাকা নিয়ে আমি সমুদ্রে কেন নামবো, আমিতো একটা গার্মেন্টস করলেই পারি। এই ভাবনার কারণেই আমাদের ব্লু ট্যুরিজম এগুচ্ছে না’। বলেন এই ব্লু ট্যুরিজম বিশেষজ্ঞ।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ওশানোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোসলেম উদ্দিন মুন্না বলেন, বাংলাদেশে ব্লু ট্যুরিজমের প্রধান প্রতিবন্ধকতা হলো ব্লু ট্যুরিজমের ফান্ডামেন্টাল যে কনসেপ্ট সেটি পর্যটক, পর্যটন ব্যবসায়ী বা সরকারি বাস্তবায়নকারী সংস্থা কারো কাছেই এখনো ক্লিয়ার না। ব্লু  ট্যুরিজমের প্রধান শর্ত হলো প্রকৃতির ক্ষতি না করে পর্যটন। অথচ আমাদের পর্যটকরা এ বিষয়ে যথেষ্ট নিরুৎসাহী। তাদেরকে একটি নিয়মের মাধ্যমে আনার কোনো ব্যবস্থাও আমাদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাখা হয়নি। ফলে সব পর্যটক শুধু সমুদ্র সৈকতে আসে আর সেটি নষ্ট করে দিয়ে চলে যায়। অথচ এটি যদি একটি পরিকল্পিত পদ্ধতিতে হতো, যদি শুধু সমুদ্র সৈকতে সীমাবদ্ধ না থেকে পর্যটকদের আরও ডেসটিনেশন দেওয়া যেত তাহলে এই ধ্বংস অনেক কমে যেত। ধরেন যদি মেরিটাইম ট্যুরিজম থাকতো, আমরা সমুদ্রের ২০,৩০ বা ৫০ কিলোমিটার গভীরে পর্যন্ত যেতে পারতাম, যদি সেখানেও নানান এক্টিভিটি থাকতো, আন্ডারওয়াটার স্কুবা ডাইভিং থাকতো তাহলে পর্যটকরা ভাগ হয়ে যেত। সমুদ্র সৈকতের পর্যটক কমে যেত এবং আন্ডারওয়াটারে গিয়ে তারা এটির সৌন্দর্য রক্ষার ব্যপারেও সতর্ক হতো। কিন্তু আমরাতো সেটি করতে পারছি না বলেই সব পর্যটক সমুদ্র সৈকতে নেমে প্রকৃতি ধ্বংস করছে। এতে কাঙ্ক্ষিত আয় যেমন আসছে না, দেশের ট্যুরিজম ভ্যালুও কমছে।

বিনিয়োগ আগ্রহের ঘাটতি নয় বরং মেরিটাইম ট্যুরিজমে বাংলাদেশ পিঁছিয়ে থাকার জন্য বিনিয়োগের নিরাপত্তার সংকটকে দায়ী করে তিনি বলেন, আমাদের দেশে ব্লু ট্যুরিজমে বিনিয়োগকারীর সংকট হওয়ার কথা নয়। সংকট থাকলে কক্সবাজারে এত হোটেল মোটেল হতো না। কিন্তু সমস্যা হলো, নতুন কোনো ক্ষেত্রে বিনিয়োগের জন্য সাহস বা শক্তি পায় না বিনিয়োগকারীরা। কারণ তারা সরকারের পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পান না।

উদাহারণ টেনে তিনি বলেন, মেরিন ট্যুরিজমের অন্যতম অনুসঙ্গ মেরিন একুরিয়াম। কক্সবাজারে রেডিঅ্যান্ট ফিস ওয়ার্ল্ড নামে একটি একুরিয়াম গড়া হয়েছে। এটি একটি ব্যাপক ব্যয়বহুল প্রকল্প। আমি যতদূর জানি করোনার লকডাউনের আগে এটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান ছিল। কিন্তু লকডাউনের সময় ব্যবসা না হওয়া এবং এ সময় ব্যাংক ঋণের চাপসহ নানান হয়রানিতে এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তার এখন বেহাল দশা। এমন অবস্থা থাকলে নতুন করে কে বিনিয়োগ করতে সাহস পাবে?

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এ জি আর নাসির মজুমদার বলেন, আমাদের দেশের পর্যটনে ব্লু ইকোনমির অনেক সম্ভাবনা থাকলেও এখনো এই ব্লু ইকোনমি নিয়ে সরকারের কোন দফতর আগাবে সেটির সিদ্ধান্ত ফাইনাল হয়নি। এ বিষয়ে সরকারের কোনো মাস্টার প্ল্যান আজ পর্যন্ত হয়নি। দ্বিতীয়ত আমি ট্যুরিজম বোর্ড পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে বলবো, আমাদের ট্যুরিজম বোর্ড সবখানে আছে আবার কোথাও নেই। এদের কাজটা খুব সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন বাংলাদেশের পর্যটনকে দাঁড় করানোর মতো কোনো বডি নেই। ট্যুরিজম বোর্ডকে বলা হয়েছে মার্কেটিং করার জন্য তাহলে তারা কিভাবে মাস্টার প্ল্যান করবে? আর পর্যটন করপোরেশনতো বিজনেস করছে। দুই দফতারের নিয়ন্ত্রণ করে মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় আবার বিমান নিয়ে ব্যস্ত। তাছাড়া সবগুলোর চেয়ারম্যান একজন। একারণে অনেক কিছু হয়েও হচ্ছে না।

তিনি বলেন, ট্যুরিজম বোর্ডে আমরা দু’একজন বেসরকারি সদস্য আছি। আমরা মনে করি দেশের পর্যটনকে সমৃদ্ধ করতে হলে এই বোর্ডকে আরও কার্যকর করতে হবে। এখন আমাদের কন্ট্রিবিউশনটা আমরা যথাযথভাবে দিতে পারছি না। এই বোর্ডের ৮০ ভাগ সদস্যই সরকারি কর্মকর্তা, আমরা ২-৩ জন মাত্র বেসরকারি সদস্য। আমি মনে করি নানান কারণে আমরা আমাদের সাপোর্টটা দিতে পারছি না।   আমরা মনে করি ট্যুরিজম বোর্ডকে আরও ক্ষমতা দিয়ে শক্তিশালী করা দরকার। দেশেই সত্যিই পর্যটনকে সমৃদ্ধ করতে হলে বাংলাদেশের পর্যটনের নিয়ন্ত্রণের ভার এই সংস্থার ওপরই দিতে হবে।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: